সম্পাদকীয়

মশা নিধন কার্যক্রমে অব্যবস্থাপনা দূর করা জরুরি

একদিনে ২ হাজার ৪১৮ জন মানুষ ডেঙ্গুজ্বর নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন-বুধবারের গণমাধ্যমে জাতীয় সংবাদপত্রগুলোতে প্রকাশিত এ তথ্য থেকেই স্পষ্ট দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি কতটা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে। চলতি বছর ডেঙ্গুতে মৃতের সংখ্যা ইতোমধ্যে ২০০ ছাড়িয়েছে। এ অবস্থায় ডেঙ্গু নিয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন দেশের মানুষ। কেবল আমাদের দেশেই নয়, অন্যান্য দেশেও বাড়ছে ডেঙ্গুর ভয়াবহতা। বস্তুত বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি এবং পৃথিবীর বিভিন্ন স্থানে অতি বর্ষণজনিত কারণে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গুর বিস্তার। গত কয়েক বছর ধরে দেশে বর্ষা মৌসুম এলেই মানুষ ডেঙ্গু আতঙ্কে ভুগতে শুরু করে।

ডেঙ্গুসংক্রান্ত আমাদের বিগত বছরগুলোর অভিজ্ঞতা মোটেও ভালো নয়। বছরব্যাপী মশক নিধন কার্যক্রম অব্যাহত না থাকার কারণেই পরিস্থিতি এতটা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এডিস মশা নিধনে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের ব্যর্থতা বারবার আলোচনায় আসছে। ঢাকার বাইরের বিভিন্ন সিটি করপোরেশনেও ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে কী অব্যবস্থাপনা চলছে, গতকাল গণমাধ্যমে সে চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। দেশে বর্তমানে ডেঙ্গু পরিস্থিতি যে পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে, তাতে কেবল স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের কার্যক্রমে কতটা সুফল মিলবে, এটা এক প্রশ্ন।

এখন ঢাকার বাইরে থেকেও প্রচুর ডেঙ্গু রোগী আসছে; রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপে শয্যার জন্য হাহাকার চলছে। নির্ধারিত ওয়ার্ড ছাড়াও বিছানা না পেয়ে রোগীরা হাসপাতালের মেঝে ও বারান্দায় চিকিৎসা নিচ্ছেন। বর্তমানে দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছেছে যে কেবল সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা অত্যন্ত কঠিন হতে পারে। রাজধানীসহ সারা দেশে মশার বংশবিস্তারের অনুকূল পরিবেশ জিইয়ে রেখে মশক নিধন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করে যে কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আসবে না তাতে সন্দেহ নেই। জানা যায়, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ডেঙ্গুর জীবাণু ও এর বাহক এডিস মশার শরীরবৃত্তীয় কার্যক্রমে দ্রুত পরিবর্তন ঘটে। এর সঙ্গে পরিপূরকভাবে যুক্ত হয়েছে মশা নিধনের নামে অনিয়ন্ত্রিত কীটনাশক প্রয়োগ। উপর্যুপরি রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহারের কারণে ভাইরাস বহনকারী মশা কীটনাশক প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। এক কথায় বলা যায়, রাসায়নিক কীটনাশকের যথেচ্ছ ব্যবহার মশা ও ভাইরাস দুটিকেই বেপরোয়া করে তুলেছে। অপরিকল্পিত নগরায়ণসহ বিভিন্ন কারণে এডিস মশা রূপ বদল করে প্রতিকূল পরিবেশে বেঁচে থাকার সক্ষমতা অর্জন করছে।

যেহেতু দেশে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা জ্যামিতিক হারে বাড়ছে, সেহেতু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ডেঙ্গুর প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলেই রোগী যাতে বিনামূল্যে পরীক্ষা করাতে পারেন সে ব্যবস্থা নিতে হবে। রোগীদের মধ্যে যাদের অবস্থা বেশি খারাপ, তাদের পরবর্তী পর্যায়ের চিকিৎসা সহজলভ্য করতে হবে। প্লাটিলেটের সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্ত না হয়ে রোগীর স্বজনদের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শকে গুরুত্ব দিতে হবে। কোনোভাবেই ডেঙ্গু রোগীকে অপ্রয়োজনীয় ওষুধ খাওয়ানো যাবে না। আমাদের দেশের আবহাওয়া, জীবনযাত্রা এসব পর্যালোচনা করলে স্পষ্ট হয়, মশা সম্পূর্ণরূপে নির্মূল করা যাবে না। কাজেই মশাবাহিত ব্যাধি থেকে নিজেদের সুরক্ষার জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে হবে। কেবল কীটনাশক প্রয়োগে মশা নির্মূল করা যাবে না। কাজেই মশাবাহিত ব্যাধি থেকে নিজেদের সুরক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় গবেষণার ওপরও জোর দিতে হবে।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension