মস্কোয় ড্রোন হামলা
গত সপ্তাহেই রাশিয়ায় পালটা হামলার হুমকি দিয়েছিল ইউক্রেন। তারপর থেকেই বিচ্ছিন্নভাবে হামলার শিকার হচ্ছে রুশ ভূখণ্ড। প্রথমে রাশিয়ার সীমান্ত অঞ্চল। এবার ইউক্রেন থেকে এক হাজার মাইল দূরের রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর আবাসিক এলাকায়।
মঙ্গলবার ভোরে পরপর ৮টি ড্রোন হামলায় কেঁপে ওঠে রাশিয়ার প্রাণকেন্দ্র মস্কো। তবে স্থানীয় গণমাধ্যম বলছে, হামলায় ৩২টি ড্রোনের একটি বিশাল বহর যুক্ত থাকতে পারে।
রাশিয়ার স্বাধীন টিভি চ্যানেল দ্য রেইন’র সাক্ষাৎকারে এক প্রত্যক্ষদর্শী বলেন, স্থানীয় সময় ভোর ৪.২০ মিনিটে পরপর কয়েকটি বিস্ফোরণের শব্দ পান তিনি। তার ১০ মিনিটের মধ্যেই জরুরি সেবা ব্যবস্থা চলে আসে মস্কোভিস্কির অ্যাপার্টমেন্ট ব্লকে। দ্য মস্কো টাইমস, এএফপি, রয়টার্স, সিএনএন।
রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা রিয়া’র (আরআইএ) খবরে বলা হয়েছে, প্রথম ড্রোনটি আঘাত হানে মস্কোর দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় আবাসিক এলাকার প্রফসয়ুজনায়া সড়কের ৯৮ নম্বর ভবনের উপরের তলায়। এতে ভবনটির সম্মুখভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দ্বিতীয়টি লেনিনস্কি প্রসপেক্টে (লেনিন এভিনিউ) একটি অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের ১৪ তলার একটি ফ্ল্যাটে। তৃতীয়টি নিউ মস্কোর আটলাসোভা স্ট্রিটের একটি ২৪তলা আবাসিক ভবনে। এতে ভবনটির সম্মুখভাগ ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
২০১২ সালে রাশিয়ার রাজধানী সম্প্রসারণের সময় দক্ষিণ-পশ্চিমের এ শহরটি মস্কোভুক্ত হয়। রাশিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ঘটনার জন্য ইউক্রেনকে দায়ী করলেও বরাবরের মতো এবারও অস্বীকার করেছে ইউক্রেন। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এটাকে ‘সন্ত্রাসী আক্রমণ’ বলে উল্লেখ করেছে।
গত মাসের গোড়ার দিকে (২ মে) ক্রেমলিনের উদ্দেশে দুটি ড্রোন হামলা নস্যাৎ করা হলেও আবাসিক এলাকা টার্গেট করে হামলা এবারই প্রথম। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই হামলার খবর জানানো হয় দেশটির প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে।
ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, প্রেসিডেন্ট পুতিনের কর্মদিবস শুরু হয় ভোর থেকেই। ঘটনার সঙ্গে সঙ্গেই প্রতিরক্ষামন্ত্রী, মস্কোর মেয়র ও মস্কোর গভর্নরের কাছ থেকে বিস্তারিত জেনেছেন তিনি। পরে এক বিবৃতিতে প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, নাগরিকদের লক্ষ্য করে মস্কোতে ড্রোন হামলা হয়েছিল। মস্কোর বিমান প্রতিরক্ষার প্রশংসা করলেও পুতিন বলেন, ‘কাজ করার আরও কিছু আছে। সাধারণত এটা স্পষ্ট যে রাজধানীর বিমান প্রতিরক্ষা সিল করার জন্য কি দরকার এবং আমরা তা করব।’
রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, মস্কোর উদ্দেশে আটটি ড্রোন উৎক্ষেপণ করা হয়। এগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তিনটি ড্রোন ইলেকট্রনিক ওরফ্যায়ার (ইলেকট্রনিক যুদ্ধাস্ত্র) দিয়ে ধ্বংস করা হয়েছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ হারায় এবং লক্ষ্যচ্যুত হয়। আর অন্য পাঁচটি ড্রোন (ইউএভি) পান্তসির-এস সার্ফেস-টু-এয়ার মিসাইল সিস্টেম ব্যবহার করে ভূপাতিত করা হয়। কিন্তু ড্রোনগুলো কোথা থেকে এসেছে বা কারা উড়িয়েছে তা এখনো নিশ্চিত হতে পারেনি রুশ প্রশাসন। রাশিয়ার একাধিক টেলিগ্রাম চ্যানেলে বলা হয়েছে, ৪ থেকে ১০টি ড্রোন গুলি করে ধ্বংস করা হয়।
হামলায় বেশ কয়েকটি ভবনে ক্ষতিগ্রস্তের ছবি সামনে এসেছে। এ ঘটনাকে ‘বিরল’ উল্লেখ করে সামান্য ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করেছেন মস্কোর মেয়র সের্গেই সোবিয়ানিন। তবে দুজন আহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে এএফপি। হামলার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ অস্বীকার করে ইউক্রেনের রাষ্ট্রপতির উপদেষ্টা মাইখাইল পোডোলিয়াক বলেন, ‘অবশ্যই, আমরা এটাকে উপভোগ করছি। এরকম আরও হামলা হবে বলে ভবিষ্যদ্বাণীও করছি। তবে অবশ্যই, এ ঘটনায় আমাদের সরাসরি কিছু করার নেই।’ মঙ্গলবার ব্রেকফাস্ট শো ইউটিউব চ্যানেলকে এ কথা বলেন পোডোলিয়াক। এদিকে মঙ্গলবার রাতেও কিয়েভে হামলা চালিয়েছে রুশ বাহিনী। টানা তৃতীয় রাতের এ হামলায় অগ্নিকাণ্ড এবং কয়েকটি আবাসিক ভবন ধসে পড়েছে বলে জানিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন। ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ দাবি করেছে, তাদের আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ২০টিরও বেশি ড্রোন ভূপাতিত করেছে। এখন পর্যন্ত একজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। আগের দুটি হামলার সব ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করা হয়। প্রাথমিকভাবে পাওয়া তথ্যে কিয়েভ সামরিক প্রশাসন এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, সবশেষ রুশ হামলায় ২০টিরও বেশি কামিকাজে ড্রোন ধ্বংস করা হয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলীয় হলোসিভস্কি জেলার একটি বহুতল ভবনে আগুন লেগে একজন নিহত ও তিনজন আহত হন। কিয়েভের মেয়র ভিটালি ক্লিটসকো এটিকে বড় ধরনের হামলা হিসাবে বর্ণনা করে বাসিন্দাদের নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। হামলা শুরুর ৩ ঘণ্টা পর বিমান হামলার সতর্কসংকেত প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে। চলতি মাসে কিয়েভে এটি রাশিয়ার ১৭তম আক্রমণ।