
মুরগির পর মাছের বাজারেও আগুন, ছোঁয়া যাচ্ছে না পাঙ্গাস-তেলাপিঁয়াও
রাজধানীর মালিবাগে বাজার করতে এসেছেন গার্মেন্টস কর্মী সাজেদুর রহমান। ব্রয়লার মুরগির দাম বৃদ্ধির কথা জানলেও তিনি জানতেন না যে মাছের দামও এতটা বেড়ে গেছে।
আলাপকালে সাজেদুর রহমান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, বাজারে গরিবের মাছ হিসেবে যে পাঙাস, তেলাপিঁয়া পরিচিত সেই মাছেরও অতিরিক্ত দামে ছোঁয়াও যাচ্ছে না। শুধু দাম শুনে চলে আসতে হচ্ছে। বয়লার মুরগির যে দাম বেড়েছে সেটা জানি কিন্তু মাছের দামও যে এতটা বেড়ে গেছে তা জানা ছিল না।
শুক্রবার (১৭ মার্চ) রাজধানীর বাজার ঘুরে দেখা গেছে, অন্যান্য পণ্যের মতো সব ধরনের মাছেরই বাড়তি দাম যাচ্ছে। ক্রেতারা দাম শুনে রীতিমতো অস্বস্তিতে পড়ে যাচ্ছেন। বাজারে পাঙাস মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকায়, তেলাপিঁয়া আকৃতিভেদে প্রতি কেজি ২০০ থেকে ২৫০ টাকা, রুই মাছ প্রতি কেজি ৩৫০ টাকা, চাষের কই প্রতি কেজি ২৮০ থেকে ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
আগে এই মাছগুলো তুলনামূলক কম থাকায় এসব মাছগুলোর প্রতি সাধারণ নিম্ন আয়ের ক্রেতাদের চাহিদা বেশি থাকতো। ফলে বাজারে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হতো এসব মাছগুলোই, কিন্তু কিছুদিন ধরে এসব মাছগুলোরও দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
এছাড়া বাজারে বড় মাঝারি সাইজের শিং মাছ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০০ টাকা, ছোট শিং প্রতি কেজি ৪০০ টাকা, টেংড়া প্রতি কেজি ৫০০ টাকা, পাবদা প্রতি কেজি ৪৫০ টাকা, চিংড়ি প্রতি কেজি ৭০০ টাকা, গলদা প্রতি কেজি ৮০০ টাকা, মলা মাছ প্রতি কেজি ৪০০ টাকা, কাতল মাছ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩২০ থেকে ৩৫০ টাকা, শোল মাছ প্রতি কেজি ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
অন্যদিকে ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি বাড়তি দামেই ২৫০ থেকে ২৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সোঁনালি মুরগি প্রতি কেজি ৩৫০ টাকায় এবং লেয়ার প্রতি কেজি ৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি গরুর মাংসও প্রতি কেজি বাড়তি দামে ৭৫০ টাকায় এবং খাসির মাংস প্রতি কেজি ৯৫০ থেকে ১০০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর মিরপুর শেওড়াপাড়ায় বাজার করতে এসেছেন বেসরকারি চাকরিজীবি আনোয়ার হোসেন। মাছের বাজার নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, যেমন ইচ্ছে তেমনিভাবে চলছে বাজার, ইচ্ছেমতো সবাই দাম বাড়িয়ে দিচ্ছে, কিন্তু মনিটরিংয়ের যেন কেউ নেই। মাছের দাম এতটা বাড়লে আমরা খাবো কি? দাম বৃদ্ধির কারণে আগে থেকেই খাওয়া যায় না গরু, খাসির মাংস। পরে বাড়লো ব্রয়লারসহ অন্যান্য মুরগির দাম। এখন বাজারে দেখছি সব ধরণের মাছের দামই বাড়তি। আগে পাঙাস মাছ কিনতাম ১৫০/১৬০ টাকায় এখন সেই মাছের দাম বেড়ে ২২০ টাকা, চাষের কই মাছ কিনেছি ২৪০ টাকায় এখন সেটা ৩০০ টাকা। তেলাপিঁয়া মাছও ২৫০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে। কম দামের মাছগুলোরও দাম বৃদ্ধির কারণে ছুঁয়েও দেখা যায় না। তাহলে আমাদের মতো সাধারণ ক্রেতারা কি কিনবে? কি খাবে?
মাছের দাম বৃদ্ধির বিষয়ে গুলশান সংলগ্ন লেকপাড় মাছ বাজারের মাছ বিক্রেতা রফিকুল ইসলাম বলেন, কিছু দিন ধরে সব ধরণের মাছের দাম বাড়তি যাচ্ছে। পাঙাস, তেলাপিঁয়া, চাষের কই আগে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হতো সব বাজারেই কিন্তু এখন বাড়তি দামের কারণে এগুলোর বিক্রিও কমেছে। মূলত মাছের ফিডের দাম বৃদ্ধির পর থেকে মাছের দাম বাড়তি যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, পাইকারি বাজারে হঠাৎ করেই বাড়তি দামে মাল কিনতে হচ্ছে যার প্রভাব সব খুচরা বাজারে পড়েছে। যখন যেমন দামে আমরা পাইকারি মাছ কিনে আনি, কিছুটা লাভ রেখে তেমন রেটেই বিক্রি করি। যখন কেনা ক্ষেত্রে কম দামে বাজার যাবে তখন আমরাও খুচরা বাজারে কম দামেই বিক্রি করতে পারবো।
ঢাকা পোস্ট