আন্তর্জাতিক

মোদিকে নিয়ে বিবিসির তথ্যচিত্রকে ‘অপপ্রচার’ বলল দিল্লি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওপর তৈরি ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসির তথ্যচিত্রের কড়া সমালোচনা করেছে নয়াদিল্লি। গত বৃহস্পতিবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচী এ নিয়ে এক বিবৃতিতে বলেন, ‘ঔপনিবেশিক মানসিকতা থেকে ওই তথ্যচিত্রে অপপ্রচার চালানো হয়েছে। বস্তুনিষ্ঠ কোনো বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে ওই তথ্যচিত্র তৈরি করা হয়নি।’

শুধু তাই নয়, ওই তথ্যচিত্র তৈরির উদ্দেশ্য নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সরকার। বিবিসির তথ্যচিত্রে ব্যক্তিবিশেষ ও ভারতের বিভিন্ন সংস্থা সম্পর্কে একটি মিথ্যে ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন বাগচী। বিবিসির এ তথ্যচিত্রকে ‘এক টুকরা অপপ্রচার’ যা ‘বিতর্কিত ভাষ্যকে’ উসকে দিতে করা হয়েছে বলে দাবি করেন তিনি। অরিন্দম বাগচী তথ্যচিত্রটিকে ‘পক্ষপাতদুষ্ট’ অভিহিত করে বলেন ‘এটা সত্যিই আমাদের বিস্মিত করেছে। এর পেছনে কী কারণ রয়েছে, সেটাও স্পষ্ট নয়। আমরা এই ধরনের প্রচেষ্টাকে কখনোই সমর্থন করি না।’

গত মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী মোদিকে নিয়ে বিবিসির একটি প্রামাণ্য তথ্যচিত্র মুক্তি পায়। ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোশ্চেন’ নামে ওই তথ্যচিত্রটি দুটি পর্বে প্রচারিত হয়। এতে প্রধানমন্ত্রী মোদির ক্ষমতায় আসার যাত্রাপথের বিভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়েছে।
তবে এই তথ্যচিত্র উল্লেখযোগ্যভাবে ২০০২ সালের গুজরাটে সংঘটিত দাঙ্গার বিষয়টি তুলে আনা হয়। যে সময় গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন নরেন্দ্র মোদি। ওই সহিংসতায় মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মোদির ভূমিকার কড়া সমালোচনা করা হয়েছে তথ্যচিত্রটিতে।

বিবিসির ওই তথ্য়চিত্রে ভারতের সংখ্যালঘু জনসংখ্যার প্রতি নরেন্দ্র মোদি সরকারের মনোভাব নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। ২০১৯ সালে দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা লোপ করে মোদির প্রশাসন। সংবিধানের ৩৭০ ও ৩৫ (ক) ধারা তুলে দেয়া হয়। নরেন্দ্র মোদি সরকারের এই ভূমিকারও সমালোচনা করা হয়েছে বিবিসির ওই তথ্যচিত্র।

গত মঙ্গলবার তথ্যচিত্রের প্রথম পর্ব ইউটিউবে মুক্তি পায়। কিন্তু এই নিয়ে বিতর্ক তৈরি হওয়ায় তড়িঘড়ি ওই তথ্যচিত্র সরিয়ে দেয় ইউটিউব।

হাজারের বেশি মানুষের প্রাণ কেড়ে নেয়া ওই সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় হিন্দু তীর্থযাত্রীবাহী একটি ট্রেনে আগুন লেগে ৫৯ জন মারা যান। এ ছাড়া দাঙ্গায় নিহতদের বেশিরভাগই ছিলেন মুসলিম। তা নিয়ে হওয়া যুক্তরাজ্যের তদন্ত প্রতিবেদনভিত্তিক বিবিসির এই তথ্যচিত্রে গুজরাটের দাঙ্গার দায়ভার সরাসরি মোদির ওপর চাপানো হয়েছে বলে জানিয়েছে আল-জাজিরা। তাদের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তথ্যচিত্রে দেখানোর আগ পর্যন্ত যুক্তরাজ্য সরকারের ওই তদন্ত প্রতিবেদন কখনোই জনসমক্ষে আসেনি।

প্রকাশিত ওই তথ্যচিত্রে বলা হয়েছে, মুসলিমদের টার্গেট করে হওয়া ওই সহিংসতা বন্ধে ব্যবস্থা নিতে পুলিশকে মোদি মানা করেছিলেন বলে দাবি করেছে তদন্তকারী দল। একাধিক সূত্রকে উদ্ধৃত করে তারা বলছে, দাঙ্গায় হস্তক্ষেপ না করতে মোদি কর্তৃপক্ষকে সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছিলেন।

মোদি তার বিরুদ্ধে ওঠা এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। ২০১২ সালে ভারতের শীর্ষ আদালতের এ সংক্রান্ত এক তদন্তেও মোদিকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছিল। এ অব্যাহতি নিয়ে করা আরেকটি আবেদনও গত বছর আদালত খারিজ করে দিয়েছেন।

এ বিষয়ে বিবিসি বলেছে, তাদের ‘ইন্ডিয়া: দ্য মোদি কোশ্চেন’ তথ্যচিত্রটি ব্যাপক গবেষণা করেই নির্মিত হয়েছে এবং এতে মোদির বিজেপির লোকজনসহ বিস্তৃত পরিসরে মানুষজনের কথা ও মতামত নেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বিবিসির এক মুখপাত্র জানান, ভারতের সরকারকে এই তথ্যচিত্রে উত্থাপিত প্রশ্নগুলোর উত্তর দেয়ার সুযোগ দিয়েছিল বিবিসি, কিন্তু তারা সেই সুযোগ নিতে অস্বীকৃতি জানায়।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension