যুক্তরাজ্য ভেঙে যাচ্ছে!
ইউরোপিয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিদের সঙ্গে গেল ২ জুন যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধিদের বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে বৈঠক হয়। কিন্তু বৈঠকে কোনও পক্ষই সিদ্ধান্তে পৌঁছতে পারে নি। সিদ্ধান্তে পৌঁছতে না পারার অন্যতম কারণ যুক্তরাজ্যের প্রতিনিধি পর্যায়ের সুপ্ত সমস্যা। করোনাভাইরাস নিয়ে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন ও তার সরকারের পদক্ষেপ গোটা বিশ্বে সমালোচিত হয়েছে।
এমন পদক্ষেপের পর স্কটল্যান্ডের স্বাধীনতা ও আইরিশ একত্রীকরণ আন্দোলনের বিষয়টি সামনে নিয়ে আসে যুক্তরাজ্যের দুর্বল নেতৃত্বের প্রশ্নে। নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের অনেক জাতীয়তাবাদীর কাছে এই করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য খাত ও রাজনৈতিক প্রশাসনের অচলাবস্থার বিষয়টি সামনে এনেছে।
ফলে নতুন করে আয়ারল্যান্ডের একত্রীকরণ আন্দোলন জরুরি হয়ে পড়েছে বলে তারা মনে করছেন। এমন আন্দোলনের মুখপাত্র নিয়াল ও দংঘেআইল বলেন, ‘ব্রিটিশ সরকারের ব্যবহার ও কর্মকাণ্ড বিপুলসংখ্যক মানুষকে নতুন করে সবকিছু নিয়ে ভাবতে বাধ্য করেছে। যা ঘটছে তার সবকিছুই আয়ারল্যান্ডের একত্রীকরণ যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা নির্দেশ করছে।’
স্কটল্যান্ডে গত জানুয়ারিতে করা এক জরিপে দেখা যায়, ওই অঞ্চলের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষই স্বাধীনতার পক্ষে। ২০১৫ সালের তুলনায় স্বাধীনতার পক্ষের মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। স্কটল্যান্ডের প্রত্যেক জেলাই ২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে থেকে যাওয়ার পক্ষে ভোট দিয়েছিল।
কিন্তু ইউনিয়নের অন্য অংশের মানুষের ভোটের কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তই জয়যুক্ত হয়, যা বাধ্য হয়েই মানতে হচ্ছে স্কটল্যান্ডকে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ২০১৬ সালের গণভোটের পরেও যুক্তরাজ্য টিকে থাকার পক্ষে স্কটিশরা যতটা ইতিবাচক ছিলেন, কিন্তু করোনাভাইরাস নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা তাদের সেই দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরিয়ে দিয়েছে। এখন তারা চলতি বছরই স্বাধীনতার প্রশ্নে দ্বিতীয় ভোটের আশা করছেন।
এডিনবার্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক নিকোলা ম্যাকওয়েনের মতে, স্কটিশ ফার্স্ট মিনিস্টার নিকোলা স্টারজেন সাংবিধানিক ইস্যু ও স্বাস্থ্য ইস্যুকে আলাদা করার যন্ত্রণা টের পাচ্ছেন।
যুক্তরাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে জনস্বাস্থ্যকে অতটা গুরুত্ব দিয়ে না দেখার অভিযোগ আছে আগে থেকেই। যুক্তরাজ্যে করোনায় আক্রান্ত প্রথম রোগী শনাক্ত হয় জানুয়ারির ৩১ তারিখে। কিন্তু ওই ঘটনার পর সরকারের পক্ষ থেকে তেমন কোনও উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ নেওয়া হয় নি।
প্রতিবেশী দেশগুলো যখন জনসমাগম কমিয়ে দিয়ে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা চাপাচ্ছিল জনগণের ওপর, তখনো যুক্তরাজ্যে কোনও পদক্ষেপই নেওয়া হয় নি, যার খেসারত বিপুলসংখ্যক মানুষকে মৃত্যুর মধ্য দিয়ে দিতে হচ্ছে। ⛘