মুক্তমত

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি ও প্রাসঙ্গিক কথা

এম হুমায়ুন কবির


বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক নির্বাচনকে উৎসাহিত করতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গত বুধবার নতুন ভিসানীতি ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশের জন্য ঘোষিত এ ভিসানীতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, কেউ নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় বাধা দিলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাবেন না।

যুক্তরাষ্ট্রের ভিসানীতি আমরা বিবেচনায় নিতে পারি, আবার নাও নিতে পারি। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে আমাদের কিছু বিষয় বিবেচনায় রাখতে হবে। আমি মনে করি, প্রাসঙ্গিক বিভিন্ন বিষয় বিবেচনায় নিয়ে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ বস্তুনিষ্ঠ হবে।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক বিস্তৃত ও বহুমুখী। আমি মনে করি, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সুসম্পর্কের ধারা অব্যাহত রাখা উচিত। কূটনৈতিকভাবে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয়ভাবে কাজ করে থাকি; আবার বহুপক্ষীয়ভাবেও কাজ করে থাকি। রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের জোরালোভাবে সমর্থন দিয়েছে এবং তা অব্যাহত রয়েছে।

রোহিঙ্গাদের জন্য যে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আসে, সেখানেও যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বড় অনুদান দিয়ে থাকে। জাতিসংঘে রোহিঙ্গাদের বিষয়ে বাংলাদেশ যখন কোনো উদ্যোগ নেয়, সে ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্র আমাদের বলিষ্ঠভাবে সমর্থন দিয়ে থাকে। মহামারির সময় আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সবচেয়ে বেশি বিনামূল্যের ভ্যাকসিন পেয়েছি।

এবার দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যবিষয়ক আলোচনায় আসি। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বাংলাদেশে আমদানির তুলনায় রপ্তানি বেশি। তৈরি পোশাকের ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র আমাদের সবচেয়ে বড় একক বাজার। আমরা গত অর্থবছরে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ রেমিটেন্স পেয়েছি যুক্তরাষ্ট্র থেকে। সেখানে আমাদের যেসব ভাইবোন রয়েছেন, তারা আমাদের দেশে যে রেমিটেন্স প্রেরণ করেছেন, তা নতুন রেকর্ড সৃষ্টি করেছে। আমাদের দেশে বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।

জাতিসংঘের আওতায় বাংলাদেশের নাগরিকরা বিভিন্ন দেশে শান্তি কার্যক্রম বা ‘পিস মিশনে’ অংশগ্রহণ করে থাকে। সেক্ষেত্রেও আমরা যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে নানা রকম সহযোগিতা পেয়ে থাকি। উল্লেখ্য, জাতিসংঘের পিস মিশনের বাজেটের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ প্রদান করে থাকে যুক্তরাষ্ট্র।

যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এ অঞ্চলের দেশগুলোর অর্থনৈতিকভাবে নতুন মাত্রায় যুক্ত হওয়ার যেসব প্রক্রিয়া চলমান, সেখানে অংশগ্রহণ করে বাংলাদেশের লাভবান হওয়ার সুযোগ রয়েছে। মোট কথা হলো, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের নানামাত্রিক সম্পর্ক রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতিতে উল্লেখ করা হয়েছে, কেউ নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় বাধা দিলে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভিসা পাবেন না। দেশটির এ বার্তার মধ্য দিয়ে স্পষ্ট হলো, আমাদের দেশে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটা শান্তিপূর্ণ নির্বাচন হোক, এটা যুক্তরাষ্ট্র দেখতে চায়। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক শক্তি, নাগরিক সমাজের মধ্যে আলাপ-আলোচনার একটা ক্ষেত্র তৈরি হোক, এটাও যুক্তরাষ্ট্র দেখতে চায়।

বস্তুত, বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সমৃদ্ধ করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র আলোচ্য ভিসানীতি গ্রহণ করেছে। আমাদের কোনো প্রক্রিয়াকে সচল বা সাবলীল করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের যদি কোনো প্রস্তাব থাকে, তা বিবেচনায় নেওয়া উচিত কি না- বাস্তবতার নিরিখে মূল্যায়ন করলেই জবাবটি স্পষ্ট হয়ে যায়।

এম হুমায়ুন কবির : যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক রাষ্ট্রদূত

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension