যুক্তরাষ্ট্রে ব্যাংক বিপর্যয়ে সরব ওয়ারেন বাফেট
মার্কিন ব্যবসায়ী ও বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে কোম্পানির প্রধান নির্বাহী ওয়ারেন বাফেট ব্যাংকিং খাতে বিপর্যয় নিয়ে সরব হয়েছেন। তিনি এ বিষয়ে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ব্যাংক ও সিগনেচার ব্যাংক বন্ধের পর ব্যাংক দুটির মালিকানায় থাকা দুই কোম্পানি এক সপ্তাহে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ১৪ হাজার ৩০০ কোটি ডলার ধার নিয়েছে। এদিকে সুইজারল্যান্ডেও এবার বন্ধ হওয়ার পথে দেশটির অন্যতম বড় আর্থিক প্রতিষ্ঠান ক্রেডিট সুইস ব্যাংক। এটি এখন কিনতে চায় দেশটির সবচেয়ে বড় বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক ইউবিএস। বিবিসি, সিএনএন ও ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।
বাইডেনের একটি টিম ও বাফেটের মধ্যে গত সপ্তাহে একাধিকবার আলাপ হয়েছে। বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত ব্যক্তিরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ তথ্য জানিয়েছেন।
বাফেট সম্ভবত মার্কিন আঞ্চলিক ব্যাংকিং খাতে বিনিয়োগ করছেন। সেই সঙ্গে এই বিলিয়নিয়ার ব্যাংকের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে ভালো পরামর্শ ও নির্দেশনা দিয়েছেন। সংকটে পড়া যে কোনো ব্যাংককে সহায়তা করার ব্যাপারে এই ধনকুবেরের দীর্ঘ ইতিহাস রয়েছে। ধুঁকতে থাকা আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর আস্থা ফেরাতে তার তৎপরতা এখনো অব্যাহত রয়েছে। এর আগে লেহম্যান ব্রাদার্স হোল্ডিংস ইনকরপোরেশনের পতনের পর ২০০৮ সালে গোল্ডম্যান স্যাক্স ইনকরপোরেটেডকে ৫ বিলিয়ন ডলার আমানত দিয়েছিলেন বাফেট। বার্কশায়ার হ্যাথাওয়ে ও হোয়াইট হাউজের প্রতিনিধিরা মন্তব্যের অনুরোধে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া দেননি। মার্কিন ট্রেজারি বিভাগের কর্মকর্তারাও মন্তব্য করতে রাজি হননি।
এক সপ্তাহে ১৫ হাজার কোটি ডলার : ফেডারেল রিজার্ভের তথ্যের ভিত্তিতে যুক্তরাজ্যের সংবাদমাধ্যম গার্ডিয়ান বলেছে, সব মিলে নগদ অর্থের সংকটে থাকা ব্যাংকগুলো মোট ৩০ হাজার কোটি ডলার ধার করেছে। তবে বাকি ১৫ হাজার কোটি ডলারের বেশি অর্থ কোন কোন ব্যাংক ধার করেছে, সেই ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি। ‘ডিসকাউন্ট উইন্ডো’ নামে ফেডারেল রিজার্ভের বিশেষ তহবিল থেকে এই ঋণ সুবিধা নেওয়া হয়। এ সুবিধা থেকে গত সপ্তাহে অতিরিক্ত ১৫ হাজার ৩০০ কোটি ডলার ব্যাংকগুলো ধার করেছে। এই পরিমাণ ঋণ এত অল্প সময়ে আর কখনো ব্যাংক খাতে যায়নি। এ তহবিল থেকে সাধারণত ৪০০ থেকে ৫০০ কোটি ডলার ধার করা হয়। এ ডিসকাউন্ট উইন্ডো থেকে ব্যাংকগুলো ৯০ দিনের জন্য অর্থ ধার করতে পারে।
ধসের মুখে পড়া দুই ব্যাংকের দায়িত্ব নিয়েছে ফেডারেল ডিপোজিট ইন্সুরেন্স করপোরেশন (এফডিআইসি)। দুই হোল্ডিং কোম্পানি যে অর্থ ধার করেছে, তা বিমার আওতায় থাকা আমানত ফেরতে ব্যবহৃত হয়েছে। ব্যাংকগুলোর হাতে থাকা বন্ড এক্ষেত্রে জামানত হিসাবে রাখা হয়েছে।
সুইজারল্যান্ডে ব্যাংক খাতে অস্থিরতা : যুক্তরাষ্ট্রের সিলিকন ভ্যালি ও সিগনেচার ব্যাংকের পর এবার বন্ধ হওয়ার পথে ১৬৭ বছরের পুরোনো সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বিনিয়োগ ব্যাংক ক্রেডিট সুইস। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ আর্থিক লেনদেনকারী এ প্রতিষ্ঠানটিকে কিনে নেওয়ার আগ্রহ দেখিয়েছে ইউনিয়ন ব্যাংক অব সুইজারল্যান্ড (ইউবিএস)।
ক্রেডিট সুইস অধিগ্রহণে সরকারের কাছে ৬ বিলিয়ন ডলার সহায়তা চেয়েছে ইউবিএস এজি। ব্যাংক নিয়ন্ত্রকরা ২০ মার্চের আগেই এ সমস্যার সমাধান করতে চাচ্ছেন। তবে এ প্রক্রিয়া যে সহজ হবে না, তা ভালো করেই জানেন ব্যাংক নিয়ন্ত্রকরা। যদি এ দুটি ব্যাংককে এক করা হয়, তাহলে ১০ হাজারেরও বেশি মানুষ চাকরি হারাতে পারেন।
এদিকে ক্রেডিট সুইস বন্ধ করার এবং আইনি খরচ এই ব্যাংককে বহন করতে হবে-এমন নিশ্চয়তা চাইছে ইউবিএস এজি। তবে এসব ব্যাপারে ক্রেডিট সুইস, ইউবিএস জি ও সুইজারল্যান্ডের সরকার কোনো মন্তব্য করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাংক দুটির পর যখন ক্রেডিট সুইসে আঘাত আসে, তখন সেটি বাঁচাতে এগিয়ে আসে সুইজারল্যান্ডের কেন্দ্রীয় ব্যাংক। ব্যাংকটির বিপর্যয় ঠেকাতে কয়েক বিলিয়ন ডলার ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা করে দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এছাড়া ক্রেডিট সুইস ব্যাংক অধিগ্রহণের জন্য ইউবিএস এজিকে চাপ দেয় দেশটির কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর মাধ্যমে সুইজারল্যান্ডে ক্রেডিট সুইসের কার্যক্রম স্থগিত হয়ে যাবে। ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানায়, দ্রুত সময়ের মধ্যে ওই দুই ব্যাংকের মধ্যে চুক্তি সম্পাদন করতে কাজ চলছে।