প্রধান খবরভারতযুক্তরাষ্ট্র

যে কারণে ভারতের প্রতিষ্ঠানের ওপর নিষেধাজ্ঞা দিল যুক্তরাষ্ট্র

ইউক্রেনের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যবহৃত যেসব পণ্য ভারতীয় সংস্থাগুলো রাশিয়ায় রপ্তানি করে আসছে, সেগুলোর বেশিরভাগই দ্বৈত ব্যবহারের উপযুক্ত। ওই সব পণ্য যেমন সাধারণ নাগরিক পরিষেবায় ব্যবহার করা যায়, তেমনই সামরিক ব্যবহারেরও যোগ্য। সেই সব পণ্য ও প্রযুক্তির মধ্যে বেশিরভাগই ইলেকট্রনিক। বাকি রপ্তানির মধ্যে রয়েছে যুদ্ধবিমানের যন্ত্রাংশ ও অন্য সরঞ্জাম, যা সমরাস্ত্র মেরামতের কাজে লাগে।

বুধবার যুক্তরাষ্ট্র বিভিন্ন দেশের চার শতাধিক সংস্থার ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। তাদের মধ্যে ভারতীয় সংস্থা রয়েছে ১৯টি। যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, এসব সংস্থা রাশিয়াকে সেই সব পণ্য সরবরাহ করছে, যেগুলো যুদ্ধ ও শান্তি উভয় সময়েই কাজে লাগে। অভিযোগ, দ্বৈত ব্যবহারযোগ্য ওই সব পণ্য ইউক্রেনের সঙ্গে যুদ্ধে রাশিয়া ব্যবহার করছে।

এ কারণে এর আগেও যেকোনো কোনো ভারতীয় সংস্থাকে যুক্তরাষ্ট্র সজাগ করে দেয়নি, তা নয়। কারও কারও বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞাও জারি করা হয়েছিল। কিন্তু এবার এক সঙ্গে ১৯টি সংস্থাকে নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা অস্বাভাবিক ধরনের বৃদ্ধি বলে মনে করা হচ্ছে।

এই নিষেধাজ্ঞার ফলে ভারতীয় সংস্থাগুলো যুক্তরাষ্ট্রে যেসব সংস্থার মালিক বা সে দেশের সম্পদ ব্যবহারের অধিকারী, সেগুলো কোনোভাবে ব্যবহার করতে পারবে না। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রে থাকা তাদের সম্পদের অধিকার তারা সাময়িকভাবে হারাবে। তাদের সঙ্গে কোনো রকমে লেনদেনও করতে পারবে না। যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের কেউও ওই সংস্থার সঙ্গে কোনো রকমে ব্যবসায়িক আদান–প্রদান করতে পারবে না।

দিল্লিভিত্তিক সংস্থা অ্যাসেন্ড অ্যাভিয়েশনের দুই পরিচালককেও যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞার আওতায় এনেছে। তারা হলেন বিবেক কুমার মিশ্র ও সুধীর কুমার।

চার দিন পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। তার ঠিক আগে এই নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ভারত এখনো কোনো মন্তব্য করেনি। ‘দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের এই সিদ্ধান্ত সম্পর্কে বেশ কিছু প্রশ্ন তারা ভারতের শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে পাঠিয়েছিল। কিন্তু তারা কোনো উত্তর দেয়নি।

প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সরকারের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের অসামরিক পারমাণবিক চুক্তি সইয়ের সময়েও নানা মহলে দ্বৈত ব্যবহারের প্রশ্নটি উঠেছিল। সেই শঙ্কা ভারত নাকচ করার পরেই চুক্তি সই হয়েছিল।

ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর রাশিয়ার বিরুদ্ধে নানা ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা জারি করে। কিন্তু তা এড়িয়ে ভারত সে দেশ থেকে পেট্রোপণ্য আমদানি করছে। যুক্তরাষ্ট্র মনে করে, ওইভাবে রাশিয়াকে ভারত অর্থনৈতিক দিক থেকে সাহায্য করছে।

তেল আমদানি ছাড়াও দেখা যাচ্ছে, ২০২৩ সালে রাশিয়ায় ভারতের রপ্তানিও ৪০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এক লাফে রপ্তানি বেড়েছে ৪০০ কোটি ডলার। এই রপ্তানির বেশির ভাগই ইঞ্জিনিয়ারিং পণ্য, যা সে দেশের প্রতিরক্ষাশিল্পে বাড়তি লগ্নির কারণ বলে মনে করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, নিষেধাজ্ঞার আওতায় আনা সংস্থাগুলো ‘কমন হাই প্রায়োরিটি’ তালিকাভুক্ত (সিএইচপিএল) পণ্য তৈরি করে। এসব পণ্য অসামরিক ও সামরিক দুই খাতেই ব্যবহারযোগ্য। যুদ্ধ পরিস্থিতিতে নিজেদের সমরাস্ত্র সম্ভার ঠিক রাখতে এসব পণ্য রাশিয়া বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করে চলেছে।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension