প্রধান খবরবাংলাদেশ

রায় না হওয়া পর্যন্ত ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে চাইবে না সরকার: প্রধান উপদেষ্টা

গত ৫ আগস্টে আওয়ামী সরকারের পতনের পর থেকে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে হত্যা মামলাসহ মানবতাবিরোধী অভিযোগেও মামলা হয়েছে অনেক। তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় ঘোষণা না হওয়া পর্যন্ত ভারতের কাছে শেখ হাসিনাকে ফেরত চাইবে না অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক গণমাধ্যম ফিনান্সিয়াল টাইমসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এই মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মস ইউনূস। আজ বুধবার সাক্ষাৎকারটি প্রকাশিত হয়েছে।

সাক্ষাৎকারে ফিনান্সিয়াল টাইমসকে তিনি বলেন, তার সরকার অবিলম্বে ভারত থেকে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণ চাইবে না। বর্তমানে সময়ে প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক উত্তেজনা এড়াতে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা।

ড. ইউনূস আরও বলেন, ‘নিশ্চিতভাবেই স্বল্প সময়ের মধ্যে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার কোনো জায়গা হবে না, আওয়ামী লীগের কোনো জায়গা হবে না।’

ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনের মুখে গত ৫ আগস্ট পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

দেশের রাজনৈতিক বিরোধী দল ও মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক নির্বাচনে কারচুপি, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড এবং শেখ হাসিনার ১৫ বছরেরও বেশি সময়ের শাসনামলে ব্যাপক পরিমাণ দুর্নীতির অভিযোগ এনেছে।

শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর থেকে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার জোর দাবি উঠছে। ইতোমধ্যে দলটির ভাতৃপ্রতীম ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনো ফ্যাসিবাদী দলের অস্তিত্ব থাকা উচিত নয়। তারা জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করেছে, তারা (রাজনৈতিক) মেকানিজম তৈরি করেছে, তারা নিজ স্বার্থে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যবহার করেছে।‘

ড. ইউনূস ফিন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেছেন, আওয়ামী লীগ হয়তো ভেঙে যেতে পারে, কিন্তু তার সরকার এমন কিছু করবে না। কারণ, তারা ‘রাজনৈতিক সরকার নয়’।

হাসিনাসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এই ট্রাইব্যুনালের রায় ঘোষণার পর সরকার হাসিনাকে ফেরত চাইবে বলে জানিয়েছেন ড. ইউনূস।

তিনি বলেন, ‘তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। এই মামলার রায় ঘোষণার পর ভারতের সঙ্গে প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় তাকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হবে। আমি মনে করি না যে রায় হওয়ার আগে এটা করার দরকার আছে।’

তবে আওয়ামী লীগ ভবিষ্যত নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কিনা সে বিষয়ে যে কোনো সিদ্ধান্ত রাজনৈতিক দলগুলোর ‘ঐক্যমত্য’ দ্বারা নির্ধারিত হবে বলে জানান ড. ইউনূস। তিনি বলেন। ” তাদেরকেই আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক স্থান নির্ধারণ করতে হবে।”

তবে ভারতে শেখ হাসিনার অবস্থান স্পষ্ট নয়। সাবেক এমপি ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এফটিকে জানিয়েছেন যে, তাদের দল “যে কোনো সময় নির্বাচনে অংশ নিতে প্রস্তুত”।

এদিকে রাজনীতিতে যোগ দেওয়ার বা রাজনৈতিক দল গঠনের কোনো ইচ্ছা নেই বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস। তার সরকার এখন পর্যন্ত নির্বাচনের রূপরেখাও চূড়ান্ত করেনি। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমাদের কাজ সবকিছু স্বাভাবিক করা এবং সংস্কার সম্পন্ন করা। নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এ নিয়ে আলোচনা করব।’

এদিকে শেখ হাসিনার সরকার পতনের পর থেকে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিবেশি দেশ ভারতের সাথে সম্পর্কের অবনতি ঘটেছে। ড. ইউনূসের সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে প্রায় ৮০০ জন নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তবে, হিন্দুদের ওপর ব্যাপক নৃশংসতা নিয়ে যে অভিযোগ তুলেছে ভারত, তার সত্যতা নিশ্চিত করতে পারেনি মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

হিন্দুদের বিরুদ্ধে সহিংসতার “কিছু ঘটনা” এবং “খুব অল্প সংখ্যক” প্রাণহানির কথা জানিয়েছেন ড. ইউনূস। তিনি বলেন, ‘আগস্টে হামলার শিকার অধিকাংশ হিন্দু আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন। তাদেরকে রাজনৈতিক কারণে টার্গেট করা হয়েছিল, ধর্মের কারণে নয়।’

প্রধান উপদেষ্টা ড. ইউনূস আরও বলেন, ‘আমরা প্রতিবেশী। আমাদের একে অপরের প্রয়োজন। আমাদের মধ্যে অবশ্যই সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক থাকতে হবে, যেমনটি দুই প্রতিবেশীর থাকা উচিত।’

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension