সম্পাদকীয়

শিক্ষার মান বাড়াতে দরকার কার্যকরী পদক্ষেপ

বাংলাদেশে এবারের প্রকাশিত এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফলাফলে দেখা যায়, সবচেয়ে বেশি পাশের হার মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে-৯২ দশমিক ৫৬ শতাংশ।

পাশের হারে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে কারিগরি শিক্ষা বোর্ড; এ বোর্ডে পাশের হার ৯১ দশমিক ২ শতাংশ। পাশের হারে এর পরের অবস্থানে রয়েছে কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ড; ৯০ দশমিক ৭২ শতাংশ।

যেসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও শিক্ষার্থী পরীক্ষায় সাফল্যের পরিচয় দিতে সক্ষম হয়েছেন, তাদের আমরা অভিনন্দন জানাই। একইসঙ্গে মনে করিয়ে দিতে চাই, এ সাফল্য নিয়ে আত্মতুষ্টিতে ভুগলে হবে না; আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য এখনই ভালোভাবে প্রস্তুতি নিতে হবে।

প্রতিবছর এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর দেশে মানসম্মত উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংকটের বিষয়টি আলোচনায় আসে। এ সংকট নিরসনে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। আমাদের দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যদি আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে পিছিয়ে থাকে, তাহলে এসব প্রতিষ্ঠানে যে মানের জনশক্তি তৈরি হবে তা দিয়ে আগামী দিনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা কঠিন হবে। দেশের উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো যাতে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডেও এগিয়ে থাকতে পারে সে জন্য পর্যাপ্ত বিনিয়োগ করতে হবে এবং বিনিয়োগকৃত অর্থের সর্বোচ্চ সদ্ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে।

উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গুচ্ছ পদ্ধতিতে ভর্তি কার্যক্রম শুরু হওয়ায় দেশের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থী বিশেষভাবে উপকৃত হচ্ছেন। এক্ষেত্রে পদ্ধতিগত জটিলতার কারণে শিক্ষার্থীদের যাতে হতাশায় ভুগতে না হয়, সেদিকেও কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। কাঙ্ক্ষিত উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য এবারও শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন শহরে ছুটতে হবে।

এ ক্ষেত্রে তারা যাতে নিজ জেলা বা উপজেলায় অবস্থান করে ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারেন তা নিশ্চিত করা দরকার। তা না হলে অর্থাভাবে বহু মেধাবী শিক্ষার্থী এ প্রতিযোগিতায় অবতীর্ণ হওয়ার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হবেন।

অর্থাভাবে যাতে মেধাবী শিক্ষার্থীরা উচ্চশিক্ষা থেকে বঞ্চিত না হন, এদিকেও কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে। প্রচলিত উচ্চশিক্ষা যে কাঙ্ক্ষিত সময়ে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করে না, এ বিষয়ে জনগণকে সচেতন করে তুলতে হবে। একইসঙ্গে কর্মমুখী শিক্ষার বিস্তারেও সরকারকে নিতে হবে জোরালো পদক্ষেপ।

শিক্ষার্থীদের জীবনে উচ্চমাধ্যমিক স্তরের পরীক্ষার ফলাফল বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। এ স্তর অতিক্রম করেই তারা উচ্চশিক্ষার বৃহত্তর জগতে প্রবেশের সুযোগ পান, যা ভবিষ্যৎ জীবন গঠন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করে। সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভর্তি পরীক্ষার ফলাফলে অনেক শিক্ষার্থীর অর্জিত জ্ঞানের যে চিত্র ফুটে উঠেছে তাতে বোঝা যায় বিদ্যমান শিক্ষাব্যবস্থায় নানা ত্রুটি রয়েছে।

এই ত্রুটিগুলো চিহ্নিত করে এ পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তি নিয়ে শিক্ষার্থীর অভিভাবক, স্বজন ও সংশ্লিষ্টরা যতটা আগ্রহ প্রকাশ করেন, শিক্ষার মান নিয়ে তারা ততটা আগ্রহ প্রকাশ করেন না।

সংশ্লিষ্টদের মনোভাবে পরিবর্তন না এলে দেশে শিক্ষার মান কাঙ্ক্ষিত মাত্রায় বাড়বে কিনা সে বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়। উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে যুগোপযোগী শিক্ষার বিস্তারে যথাযথ ভূমিকা রাখতে হবে।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension