
শিক্ষা ব্যয় বৃদ্ধি
সম্প্রতি প্রকাশিত ইউনেস্কোর গ্লোবাল এডুকেশন মনিটরিং রিপোর্ট-২০২২ শীর্ষক প্রতিবেদনে বাংলাদেশে পরিবারপিছু শিক্ষা ব্যয় বৃদ্ধির কথা উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশে প্রাক-প্রাথমিক স্তরে অধ্যয়নরত ২০ শতাংশ শিশুর গৃহশিক্ষক রয়েছে। গ্রামাঞ্চলে গৃহশিক্ষক বাবদ ব্যয় ২০০০ সালের ২৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ২০১০ সালে ৫৪ শতাংশ হয়েছে আর শহরাঞ্চলে এই ব্যয় ৪৮ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬৭ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, বাংলাদেশে শিক্ষা ব্যয়ের ৭১ শতাংশ পরিবার বহন করে। অন্যদিকে পাকিস্তানে শিক্ষা ব্যয়ের ৫৭ শতাংশ বহন করে পরিবার।
দেখা যাচ্ছে, দেশে শিক্ষা খাতে বেসরকারি উদ্যোগ যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি এর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে পরিবারপিছু শিক্ষা ব্যয়ও।
বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা (এনজিও) পরিচালিত স্কুলের ফি সরকারি প্রতিষ্ঠানের তুলনায় তিনগুণ বেশি এবং বেসরকারি কিন্ডারগার্টেনের ক্ষেত্রে এই ব্যয় নয়গুণ বেশি।
বস্তুত প্রাক-প্রাথমিক স্তরে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর আধিক্য পরিবারগুলোর শিক্ষা ব্যয়ের বোঝা বাড়িয়েছে। ইউনেস্কোর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে-দেশের ৫৫ শতাংশ শিশু প্রাক-প্রাথমিক স্তরে বিভিন্ন ধরনের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়ে থাকে।
প্রাথমিক স্তরে মোট বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হার ২২ শতাংশ; মাধ্যমিক পর্যায়ে এই হার ৯৪ শতাংশ, যা বিশ্বে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তবে কারিগরি ও ভোকেশনাল পর্যায়ে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আধিক্য সর্বোচ্চ; যেমন-দেশে ছয় হাজার বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিপরীতে সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে মাত্র ৯০০টি।
আশঙ্কাজনক হলো, গত দশকে সরকার মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) আড়াই শতাংশের কম খরচ করেছে শিক্ষা খাতে, যা জাতিসংঘের সুপারিশ করা ৪ শতাংশ সীমার অনেক নিচে।
এ অবস্থায় শিক্ষা খাতে পর্যাপ্ত রাষ্ট্রীয় বরাদ্দ নিশ্চিত করা জরুরি বলে মনে করি আমরা। উল্লেখ্য, প্রতিবেশী দেশ ভারতে শিক্ষার বিকেন্দ্রীকরণ হওয়ায় দিল্লিতে ৯০ শতাংশ সরকারি এবং মাত্র ১০ শতাংশ বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। ফলে বর্তমানে সেখানে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থী সংকট তৈরি হয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে মূলত সরকারি প্রতিষ্ঠান শক্তিশালী করায়।
দেশের শিক্ষাব্যবস্থা প্রতিনিয়ত নানা সমস্যা ও প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। এ বাস্তবতায় ভারতের উদাহরণ সামনে রেখে আমাদেরও একই পথে হাঁটা উচিত।