বাংলাদেশভারত

শেখ হাসিনার ভিসার মেয়াদ বাড়াল ভারত: হিন্দুস্তান টাইমসের প্রতিবেদন

ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে দেশত্যাগ করা বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে গতকাল মঙ্গলবার। এর পরপরই হিন্দুস্তান টাইমসসহ ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো খবর প্রকাশ করে যে, হাসিনার ভারতে অবস্থানের মেয়াদ তথা ভিসার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। আবার কিছু গণমাধ্যম বলছে, ভারত শেখ হাসিনার রেসিডেন্ট পারমিটের মেয়াদ বাড়িয়েছে।

হিন্দুস্তান টাইমস নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, বাংলাদেশের ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থানের ভিসার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। হাসিনা গত আগস্ট থেকে ভারতে অবস্থান করছেন।

গত বছরের ৫ আগস্ট দেশব্যাপী ছাত্র-জনতার ব্যাপক বিক্ষোভের মুখে ৭৭ বছর বয়সী শেখ হাসিনা দেশত্যাগ করে ভারতে চলে যান। ৫ আগস্ট ভারতের হিন্দোন বিমানঘাঁটিতে পৌঁছানোর পর থেকে তিনি যোগাযোগবিচ্ছিন্ন রয়েছেন। জানা গেছে, তাঁকে দিল্লির একটি নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করা হয়েছে। নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার ২৩ ডিসেম্বর একটি নোট ভারবাল বা অস্বাক্ষরিত কূটনৈতিক পত্রের মাধ্যমে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে হাসিনাকে প্রত্যর্পণের আবেদন জানায়।

বিষয়টির সঙ্গে পরিচিত ব্যক্তিরা জানান, সম্প্রতি শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থানের জন্য ভিসার বাড়ানো হয়েছে। তবে তাঁরা হাসিনাকে আশ্রয় দেওয়ার সম্ভাবনা নাকচ করেছেন। তাঁরা বলেছেন, ভারতে শরণার্থীদের জন্য কোনো নির্দিষ্ট আইন নেই এবং আশ্রয় দেওয়ার মতো বিষয়গুলোও এর অন্তর্ভুক্ত।

ভিসা বাড়ানোর প্রক্রিয়াটি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিল। তবে বিষয়টি স্থানীয় পর্যায়ে পরিচালনা করে ফরেনার্স রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিস (এফআরআরও)। এই দফায় হাসিনার ভিসার মেয়াদ কত দিন বাড়ানো হয়েছে বা বাংলাদেশ তাঁর পাসপোর্ট বাতিলের পরও ভিসার মেয়াদ কীভাবে বাড়ানো হয়েছে, সে বিষয়ে বিস্তারিত কোনো মন্তব্য করেননি ওই সূত্রগুলো।

এর আগে, গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় প্রধান উপদেষ্টার উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার জানান, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৯৭ জনের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, গুম ও হত্যার সঙ্গে জড়িত ২২ জন এবং জুলাই হত্যাকাণ্ডে অভিযুক্ত শেখ হাসিনাসহ ৭৫ জনের পাসপোর্ট বাতিল করা হয়েছে।

শেখ হাসিনার পাসপোর্ট বাতিলের বিষয়ে ভারত সরকারকে জানানো হয়েছে কি না—এমন প্রশ্নে আজাদ মজুমদার বলেন, তাঁর পাসপোর্ট বাতিলের বিষয়টি ভারত সরকার জানে। ভারত সরকার থেকে বলা হয়েছে, তাঁকে ট্রাভেল ডকুমেন্ট ইস্যু করা হয়েছে।

এখন প্রশ্ন ওঠে যে, বাংলাদেশ যদি হাসিনার ভিসা বাতিল করে থাকে, তাহলে ভারত কীভাবে তাঁর ভিসার মেয়াদ বৃদ্ধি করেছে? তবে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বাংলা সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকার খবরে বলা হয়েছে, শেখ হাসিনার ভিসার মেয়াদ নয়, বরং ভারতে তাঁর অবস্থানের মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে রেসিডেন্ট পারমিটের মাধ্যমে। আর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার জানিয়েছে, শেখ হাসিনার জন্য ট্রাভেল ডকুমেন্ট ইস্যু করা হয়েছে।

উল্লেখ্য, ট্রাভেল ডকুমেন্ট হলো এমন একটি আনুষ্ঠানিক পরিচয়পত্র, যা কোনো দেশ বা আন্তর্জাতিক সংস্থা জারি করে থাকে। এই ডকুমেন্ট বহনকারী ব্যক্তিদের সীমানা পারাপারের সময় তাঁদের পরিচয় নিশ্চিত করতে সাহায্য করে। আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুযায়ী, বিভিন্ন দেশে ভ্রমণ করার জন্য এই ডকুমেন্ট অপরিহার্য।

আর ভারতের রেসিডেন্ট পারমিট হলো একটি আনুষ্ঠানিক অনুমতিপত্র, যা ভারত সরকার বিদেশি নাগরিকদের দীর্ঘকালীন ভিত্তিতে দেশে বসবাস করার অনুমতি দেয়। এই পারমিট সাধারণত বিশেষ কারণে, যেমন চাকরি, ব্যবসা, শিক্ষা, বা পরিবারের কারণে ভারতে থাকতে চাওয়া ব্যক্তিদের জন্য জারি করা হয়। অনেক সময় রাজনৈতিক বিবেচনায়ও এই পারমিট দেওয়া হয়।

এই ঘটনাগুলো এমন সময়ে ঘটছে, যখন বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের জন্য শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে দ্বিতীয় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে। ৬ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনাল পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন ১২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে শেখ হাসিনা এবং আরও ১১ জনকে আদালতে হাজির করতে।

একই দিনে বাংলাদেশের জাতীয় স্বাধীন তদন্ত কমিশনের প্রধান মেজর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) আলম ফজলুর রহমান বলেছেন, ২০০৯ সালে বাংলাদেশ রাইফেলসের (বিডিআর) হাতে ৭৪ জনের হত্যাকাণ্ডের তদন্তের অংশ হিসেবে কমিশনের সদস্যরা শেখ হাসিনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে ভারতে যেতে চান। তিনি বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে কমিশন ভারতে গিয়ে শেখ হাসিনাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে, যদি (বাংলাদেশ) সরকার আমাদের অনুমতি দেয়।’

নয়াদিল্লিতে এসব পদক্ষেপকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারে থাকা কিছু অংশের পক্ষ থেকে ভারতকে চাপ দেওয়ার প্রচেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে শেখ হাসিনার প্রত্যর্পণের বিষয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আগেও বলেছে, শেখ হাসিনার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা নির্ধারণ তাঁর নিজের ওপরই নির্ভর করছে।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension