নির্বাচিত কলামমুক্তমত

সংস্কারের ভ্রান্তবিলাস যেন না ভুলি

সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী

সবচেয়ে ওপরে যিনি ছিলেন, প্রধানমন্ত্রী তার দম্ভ বাড়তে বাড়তে হয়ে উঠেছিল আকাশচুম্বী। অধ্যাপক ইউনূসকে তিনি পদ্মার পানিতে ‘চুবাতে’ চেয়েছিলেন। খালেদা জিয়াকে চেয়েছেন ‘টুপ করে’ ওই পানিতে ফেলে দিতে। এক সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, ‘আমার বাসার পিয়ন ছিল, সে নাকি ৪০০ কোটির মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না।’ যেন গৌরবের ব্যাপার; তার আশপাশে থাকলে ঐন্দ্রজালিক স্পর্শে পিপীলিকাও কীভাবে হস্তী হয় তার প্রত্যক্ষ প্রমাণের উপস্থাপনা। ফুলে-ওঠা পিয়নটি যে ধরা পড়েনি, নির্বিঘ্নে পালিয়ে যেতে পেরেছে, সেটা অবশ্য উল্লেখ করেননি, হয়তো সেটা নিয়েও প্রধানমন্ত্রীর একটা বড়াই ছিল। হাজার হোক তার পিয়ন তো! বাপের বেটা! দম্ভ ভরে খালেদা জিয়াকে বলেছিলেন, ‘এতিমের টাকা চোর।’ দেশে ব্যবস্থা নেই এমন চিকিৎসার অনুমতির জন্য অসুস্থ মহিলাটির পক্ষে বিদেশে যাওয়ার অনুমতির জন্য দরখাস্ত করা হলে কেবল যে সবেগে নাকচ করে দিয়েছেন তা নয়, মন্তব্যও করেছিলেন, ‘বয়স তো আশির ওপরে, মৃত্যুর সময় হয়ে গেছে।’

এবারের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে মেয়েদের অংশগ্রহণ ছিল উল্লেখযোগ্য। এমন সংখ্যায় ও দৃঢ়তায় মেয়েদের এর আগে কোনো আন্দোলনে দেখা যায়নি। সমাজের মেয়েরা সুপ্রতিষ্ঠিত বৈষম্যের শিকার। তারা যৌন হয়রানি তো বটেই, ধর্ষণ ও গণধর্ষণের কবলেও পড়ে, এমন কি বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাও তাদের জন্য নিরাপদ নয়। সেই মেয়েরা মধ্যরাতে মিছিল করবে, এ ছিল অকল্পনীয়। কিন্তু সেটাই ঘটেছে। কারণ হচ্ছে আন্দোলন নারী-পুরুষে বৈষম্য লুপ্ত করে দিয়েছিল। সবাই ছিল সহযোদ্ধা।

চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্য ছিল সামনে, কিন্তু সমাজে ও রাষ্ট্রে নানান রকমের বৈষম্য বিশেষভাবে আয়-রোজগারের, ধনসম্পত্তির যেসব বৈষম্য, সেগুলো বাড়ছে বৈ কমছে না। বিদ্রোহ ছিল সর্বত্রব্যাপ্ত বৈষম্যের বিরুদ্ধেই। যে জন্য মেহনতি মানুষ আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন এবং অনেকেই প্রাণও দিয়েছেন। ভুয়া উন্নয়ন বৈষম্য বৃদ্ধি করেছে, মানুষকে পরস্পরবিচ্ছিন্ন ও পারস্পরিক শত্রুতে পরিণত করতে ব্যস্ত রয়েছে। অভ্যুত্থান আসলে উন্নয়নের ওই পুঁজিবাদী ধারার বিরুদ্ধেই, যদিও কথাটা প্রকাশ্যে আসেনি। আসত যদি আন্দোলনের নেতৃত্ব বামপন্থি ছাত্রদের হাতে থাকত। সেটা তো ছিল না।

ছেলেদের সঙ্গে আন্দোলনে যুক্ত হয়ে মেয়েরা একটি নয়, দুটি ভীতির শৃঙ্খলকে ভেঙেছে। প্রথমটি রাষ্ট্রীয়, দ্বিতীয়টি সামাজিক। দুই হাজার চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান পতিত প্রধানমন্ত্রী রাষ্ট্র ও সমাজে বিদ্যমান পিতৃতান্ত্রিকতাকে আরও উঁচুতে তোলার ও গভীরে প্রোথিত করার স্ব-আরোপিত দায়িত্ব নিয়েছিলেন। নিজে তিনি দুর্দান্ত রকমের কর্তৃত্বপরায়ণ ছিলেন; আচরণ ছিল আগের দিনের জমিদারদের মতো এবং বাংলাদেশটাকে পারিবারিক জমিদারি হিসেবেই তিনি গণ্য করতেন, যে জমিদারি তিনি ‘পৈতৃক সম্পত্তি’ হিসেবে পেয়েছিলেন। তার প্রধান উপদেষ্টা ছিল তার পুত্র, যার ‘স্বপ্ন’ ছিল বাংলাদেশকে ডিজিটাল করবেন। সেই স্বপ্ন ‘বাস্তবায়ন’ সম্পন্ন করার পর আওয়াজ তুলেছিলেন স্মার্ট বাংলাদেশের। ডিজিটাল ও স্মার্ট বাংলাদেশ বানানোর পাঁয়তারাতে টাকা খরচ হয়েছে অঢেল, ফল পাওয়া গেছে সামান্য। তবে ওই প্রক্রিয়াতে প্রথমে ডিজিটাল সিকিউরিটি অ্যাক্ট, পরে নাম বদলে সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট নাগরিকদের জন্য যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করেছিল সেটা ছিল তুলনাহীন। স্মার্টনেসের মাধ্যমে মানুষের যন্ত্রণা বৃদ্ধির নতুনতর ফন্দি হয়তো আঁটছিলেন। অতিষ্ঠ পাবলিক তার আগেই ধাওয়া দিয়েছে। তাদের কাজটা তাই অসমাপ্তই রয়ে গেল।

বিগত সরকারকে জনগণের মিত্র বলে কখনোই মনে হয়নি। বুর্জোয়া রাজনৈতিক দলের পক্ষে সেটা হওয়া সম্ভবও নয়। তবে পতিত প্রধানমন্ত্রীর শাসন দেখে এমন ধারণা তৈরি হচ্ছিল যে, ব্যক্তিগতভাবে তিনি প্রতিহিংসাপরায়ণ, বুঝি তার পরিবারের সদস্যদের প্রতি ভয়ংকর যে অন্যায় করা হয়েছে তার বদলা নিচ্ছেন। এ জন্যই যেন তিনি পুলিশ তো বটেই, অন্যবাহিনীগুলোকেও ব্যবহার করছিলেন। তার শাসনের বিরুদ্ধে যারা দাঁড়িয়েছে তাদের বসিয়ে দিতে, প্রয়োজনে নির্মূল করে ফেলতে তিনি সংকল্পবদ্ধ ছিলেন। তার আদেশে-নির্দেশে শেষ মুহূর্তে যে নৃশংসতার ঘটনা ঘটেছে তা গণহত্যা ভিন্ন অন্য কিছু নয়। পুলিশ নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে। কেবল আহত করার জন্য নয়, হত্যা করার জন্যও। আশুলিয়াতে যে হত্যাকা-ের ভিডিও চিত্র প্রকাশ পেয়েছে সেটি একাত্তর সালে পাকিস্তানি হানাদারেরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হলের মাঠে যে দৃশ্যের অবতারণা করেছিল তা থেকে পরিমাণে পৃথক হলেও গুণের দিক থেকে একই রকমের বটে। ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে কয়েকটি লাশকে একটি ভ্যানে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। পাশে পুলিশের ইউনিফর্ম-পরা কয়েকজন দৃশ্যমান। লাশগুলো যে আন্দোলনকারীদের তাতে সন্দেহের কোনো কারণ নেই। লাশের স্তূপ ঢাকা দেওয়া আছে একটি চাদর দিয়ে, হতে পারে সেটা আন্দোলনকারীদের হাতেই ছিল, ব্যানার হিসেবে। জগন্নাথ হলের জগৎখ্যাত সেই দৃশ্যটির সঙ্গে আশুলিয়ার দৃশ্যচিত্রটির আরও একটি মিল এখানে যে, দুটিই ধারণ করা হয়েছিল ঘটনাসৃষ্টিকারীদের অজান্তে, ব্যক্তিগত ক্যামেরায় এবং সন্তর্পণে। মস্ত পার্থক্য অবশ্যই এখানে যে পাকিস্তানি ঘাতকরা ছিল বিদেশি, আশুলিয়ার ঘাতকরা বাঙালি বটে। সাদৃশ্য সম্পর্কে অবশ্য বলা যায় যে, উভয় ক্ষেত্রেই ঘাতকরা প্রতিপালিত হয়েছে যাদের তারা খুন করেছে তাদের পরিশ্রমের টাকাতেই।

হিংসা হিংসার জন্ম দেয়। ছাত্র-জনঅভ্যুত্থানের ক্ষেত্রেও সেটা দেখা গেছে। পতিত প্রধানমন্ত্রীর আমলে মামলা দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার মহোৎসব চলেছে; এখন দেখা যাচ্ছে প্রধানমন্ত্রীসহ অন্যদের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করার বেলাতেও একই ব্যগ্রতা ও ব্যস্ততা মূর্ত হয়ে উঠেছে।

প্রতিহিংসাপরায়ণতা শিক্ষাঙ্গনেও দেখা দিয়েছে। শিক্ষকদের লাঞ্ছিত করে পদত্যাগপত্র লিখিয়ে নেওয়ার ঘটনা নেহায়েত কম ঘটছে না। দলবাজ ও দুর্নীতিবাজ বলে অভিযুক্ত হয়ে শিক্ষকরা কেবল যে পদত্যাগে বাধ্য হচ্ছেন তা নয়, লাঞ্ছিতও হচ্ছেন। মহিলা শিক্ষকরাও অপমানের শিকার হচ্ছেন। এসবের পেছনে কেবল যে রাজনীতি আছে তা নয়, কোথাও কোথাও ব্যক্তিগত শত্রুতাও কাজ করছে। কোনো শিক্ষক যদি দলবাজি বা দুর্নীতি করে থাকেন, হতে পারে অভ্যুত্থানের বিরোধিতাও করেছেন কেউ কেউ, তবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ পেশ করার বৈধ পথ-পদ্ধতি রয়েছে; শিক্ষার্থীরা যদি সে পথে না গিয়ে সহিংস পথ ধরে তবে তো তারা আর শিক্ষার্থী থাকে না, ভিন্ন কিছুতে পরিণত হয়। অপরদিকে একজন শিক্ষক যদি তার নিজের শিক্ষার্থীদের দ্বারাই লাঞ্ছিত-অপমানিতই হন, তবে তার জ্ঞান-বুদ্ধি যতই থাকুক না কেন, তিনি তো আর শিক্ষক থাকেন না, একেবারেই সর্বস্বান্ত হয়ে পড়েন। শিক্ষকরা কেবল পদমর্যাদার কারণেই শিক্ষক হন না, এমন কি শুধু নিজেদের জ্ঞানগরিমার জন্যও নয়; শিক্ষককে শিক্ষক হতে হলে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে সম্মান প্রাপ্তিরও প্রয়োজন হয়। ওই সম্মানের ভেতর শ্রদ্ধাবোধও থাকে।

একজন শিক্ষককে আক্রমণ করাটা কিন্তু কেবল ব্যক্তিকে লাঞ্ছিত করা নয়, গোটা শিক্ষাব্যবস্থাকেই আক্রমণ করা। শিক্ষার মান প্রধানত নির্ভর করে শিক্ষকতার মানের ওপর, শিক্ষাঙ্গনে শিক্ষক যদি অনিরাপদ থাকেন তবে মেধাবানরা তো শিক্ষক হতে চাইবেন না। শিক্ষকরা এমনিতেই অন্য পেশাজীবীদের তুলনায় বঞ্চিত, তদুপরি শ্রদ্ধা জিনিসটা যদি ক্ষয়প্রাপ্ত হয় তাহলে শিক্ষকতার এখন যে আকর্ষণটুকু আছে সেটুকুও আর অবশিষ্ট থাকবে না। আরও একটা ব্যাপার লক্ষ্য করার মতো। শিক্ষক-লাঞ্ছনা কিন্তু কওমি মাদ্রাসা এবং ইংরেজি মাধ্যমের স্কুলে ঘটছে না। ঘটছে কেবল মূলধারার শিক্ষাব্যবস্থায়। ওই ধারা নানাভাবে বিপদগ্রস্ত। সেখানে কারিকুলাম, সিলেবাস, পাঠ্যপুস্তক ইত্যাদি নিয়ে বহু রকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলে যেগুলোর অধিকাংশই কোনো সুফল বয়ে আনে না; অনেক ক্ষেত্রে বিপরীত ফলই পাওয়া যায়।

রাষ্ট্র-শাসকরা এ নিয়ে তেমন দুশ্চিন্তাগ্রস্ত নন, কারণ তাদের সন্তানরা মূলধারায় পড়তে আসে না, ইংরেজি মাধ্যমই তাদের স্থির ও নিজস্ব ঠিকানা; আরেকটি ঠিকানাও ভেতরে ভেতরে থাকে, সেটা স্বদেশি নয়, বিদেশি বটে। আমরা অনেককাল ধরে ঔপনিবেশিক শাসনাধীন ছিলাম, বঞ্চিত ছিলাম ক্ষমতা থেকে; তাই ক্ষমতা পেলেই আত্মহারা হয়ে পড়ি। অপব্যবহার শুরু করি ক্ষমতার। তা ছাড়া ক্ষমতার নিজস্ব একটা স্বভাবও আছে। সেটা হলো প্রযুক্ত হওয়া। ক্ষমতা যদি প্রদর্শিত হতেই ব্যর্থ হলো তবে সে আবার ক্ষমতা কীসের? কোন জোরে? একবার রক্তের স্বাদ পেয়েছে যে বাঘ সে কী ওই স্বাদ ভুলতে পারে? শিক্ষাঙ্গনে ক্ষমতা প্রদর্শনের সঙ্গে আমাদের ক্ষমতা-বঞ্চনা এবং ক্ষমতার স্বভাব দুটোই জড়িত রয়েছে।

এবারের অভ্যুত্থানে কেবল যে সরকারের ফ্যাসিবাদী নিষ্ঠুরতারই প্রকাশ ঘটেছে তা নয়, সমাজে বিদ্যমান বৈষম্যের প্রকটতারও উন্মোচন ঘটেছে। যারা নিহত ও আহত হয়েছেন তাদের হারিয়ে তাদের পরিবারগুলোর কণ্ঠে যে আর্তনাদ ধ্বনিত হয়েছে তা শুধু যে স্বজন-হারানোর বেদনায় জর্জরিত তা নয়, আর্তনাদের পেছনে আছে পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটিকে হারানোর দরুন অসহায়ত্ব-বৃদ্ধি ও অবস্থা-পরিবর্তনের স্বপ্নের চুরমার হয়ে যাওয়াটাও। ওই আর্তনাদ নিয়েও আলোচনা দরকার।

এই কথাটা স্মরণ করি যে, বিদ্যমান সমাজ বাস্তবতাটা মোটেই সুখপ্রদ নয়। বিশ্বব্যাপীই এখন মানুষের দারুণ দুর্দশা চলছে। তা থেকে মুক্তির উপায় ব্যক্তিমালিকানাধীন ও মুনাফাভিত্তিক পুঁজিবাদী ব্যবস্থাকে বিদায় করে সামাজিক মালিকানার নতুন বিশ্ব গড়ে তোলা। সে জন্য কেবল রাষ্ট্রীয় সংস্কার নয়, সামাজিক বিপ্লবও প্রয়োজন হবে। রাজা ও প্রজার সম্পর্ক ছিন্ন করে, বৈষম্য ঘুচিয়ে ফেলে প্রতিষ্ঠিত করা চাই প্রকৃত সাম্য ও মৈত্রীর সম্পর্ক। তার জন্য সামাজিক বিপ্লব ভিন্ন অন্য কোনো পথ নেই। সংস্কারে কুলাবে না। লুণ্ঠন এবং ত্রাণ তৎপরতা দুটোই সত্য; প্রথমটি ঘটে ব্যক্তিগত মুনাফার লোভে, দ্বিতীয়টি প্রকাশ পায় সমষ্টিগত মঙ্গলের আকাক্সক্ষায়। প্রথমটির পরিণতি ফ্যাসিবাদে; দ্বিতীয়টি সৃষ্টি চায় সামাজিক বিপ্লবের। ত্রাণকে সামনে আনতে হলে দুর্যোগের জন্য অপেক্ষা অপ্রয়োজনীয়, কারণ দুর্যোগ এখন সার্বক্ষণিক, দুর্যোগ থেকে মানুষের মনুষ্যত্বকে রক্ষা করার জন্য প্রয়োজন পুঁজিবাদী ব্যবস্থার পীড়ন থেকে পরিত্রাণ।

রোগ সমাজের গভীরে এবং রন্ধ্রে রন্ধ্রে। সংস্কারে কুলাবে বলে আশা করাটা যে বর্তমানে নিতান্তই ভ্রান্তিবিলাস, সেটা যেন না ভুলি। সমাজ-পরিবর্তনের আন্দোলনকে গুটিয়ে ফেলার কোনো অবকাশ নেই। সেটা সম্বিতে সার্বক্ষণিকভাবেই থাকা আবশ্যক।

লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension