
সনদ ছিঁড়ে ফেললেন কাবুলের শিক্ষক
আফগানিস্তানের রাজধানী কাবুলের একজন শিক্ষক টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত এক অনুষ্ঠানে এসে নিজের একাধিক সনদপত্র (সার্টিফিকেট) ছিঁড়ে ফেলেছেন। দেশটিতে নারীর উচ্চশিক্ষার সুযোগ বন্ধ করে দেয়ার সরকারি সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তিনি গত সোমবার এমন কাজ করেন।
সিএনএন জানায়, কাবুলের ওই শিক্ষকের নাম ইসমাইল মাশাল। তিনি কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক এবং স্থানীয় একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা। তোলো নিউজ নামের একটি টেলিভিশন চ্যানেলের অনুষ্ঠানে হাজির হয়ে তিনি নিজের একাধিক সার্টিফিকেট ছিঁড়ে ফেলেন। এ সময় তার চোখে পানি দেখা যায়। ধরা গলায় তিনি বলেন, ‘আজ থেকে আমার এসব সনদের আর প্রয়োজন নেই। কারণ এ দেশ পড়াশোনার স্থান নয়। যদি আমার বোন এবং আমার মা পড়াশোনা করতে না পারেন, আমি এই শিক্ষা মানি না।’
ইসমাইল মাশাল আরও বলেন, তার ছিঁড়ে ফেলা সার্টিফিকেটগুলো ছিল মাস্টার্স ও ডক্টরেট ডিগ্রির এবং সেগুলো ছিল আসল।
ইসমাইলের ওই প্রতিবাদী কাজের ভিডিওচিত্র সামাজিক যোগাযোগের অনলাইন মাধ্যমে ব্যাপকভাবে (ভাইরাল) ছড়িয়ে পড়েছে। শবনম নাসিমি সেটি নিজের টুইটার থেকে শেয়ার করেছেন। তিনি যুক্তরাজ্যভিত্তিক আফগান পুনর্গঠন ও শরণার্থীবিষয়ক মন্ত্রীর একজন উপদেষ্টা। শবনম টুইটারে লিখেছেন, কাবুল বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক আফগানিস্তানের একটি টেলিভিশনে সরাসরি সম্প্রচারিত অনুষ্ঠানে নিজের সার্টিফিকেটগুলো নষ্ট করে ফেলেছেন। দৃশ্যটি বিস্ময়কর।
তালেবান সরকার গত ২০ ডিসেম্বর এক ঘোষণার মাধ্যমে আফগানিস্তানের সব বিশ্ববিদ্যালয়ে মেয়েদের পড়াশোনার সুযোগ বন্ধ করে দিয়েছে। এর আগে গত মার্চে দেশটির কর্তৃপক্ষ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মেয়েদের পড়াশোনার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করে। এ ছাড়া আফগান নারীদের স্বাধীনতায় নানা রকমের বাধা রয়েছে। যেমন- গত নভেম্বরে কাবুলের সবগুলো পার্কে নারীর প্রবেশ নিষিদ্ধ করে দেয়া হয়। একই মাসে তালেবানের একজন কর্মকর্তা ঘোষণা করেন, আফগানিস্তানের সব ব্যয়ামাগারের (জিমনেসিয়াম) দরজা নারীদের জন্য বন্ধ থাকবে।
আফগানিস্তানে বিভিন্ন বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা বা এনজিওতেও নারীদের চাকরির সুযোগ সম্প্রতি বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। দেশটির নারীদের সব জায়গায় তালেবান অনুমোদিত পোশাকবিধি মেনে চলতে হয়। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় তালেবান কর্তৃপক্ষের এই কঠোর বিধিনিষেধের নিন্দা জানিয়েছে।
উগ্রবাদী সংগঠন তালেবান বর্তমানে দ্বিতীয় দফায় কাবুলের শাসনক্ষমতায় রয়েছে। এবার ক্ষমতা দখলের সময় তারা অতীতের মতো কঠোর বিধিনিষেধ আরোপের নীতি থেকে সরে আসার প্রতিশ্রুতি দিলেও বাস্তবে তার প্রতিফলন দেখা যাচ্ছে না।