মধ্যপ্রাচ্যযুক্তরাষ্ট্র

হুতিদের হাতে ৭টি ড্রোন হারিয়ে ২০ কোটি ডলার খোয়াল যুক্তরাষ্ট্র

ছয় সপ্তাহেরও কম সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাতটি রিপার ড্রোন ভূপাতিত করেছে ইয়েমেনের ইরান–সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠী হুতি। ড্রোনগুলোর মোট মূল্য ২০ কোটি ডলারেরও বেশি। হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযানে এটিকেই পেন্টাগনের সবচেয়ে বড় আর্থিক ক্ষতি বলে দেখা হচ্ছে।

আজ শুক্রবার বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে এ তথ্য।

প্রতিরক্ষা কর্মকর্তাদের বরাতে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, গত সপ্তাহেই তিনটি রিপার ড্রোন গুলি করে ভূপাতিত করেছে হুতিরা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক সরকারি কর্মকর্তা এপিকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, ড্রোনগুলো হুতিদের ওপর নজরদারি ও হামলার জন্য আকাশে উড়ছিল, এমন সময় গুলি লেগে ভূপাতিত হয় সেগুলো। কোনোটি পানিতে আবার কোনোটি মাটিতে আছড়ে পড়ে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা জানান, প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, গুলি করে ড্রোনগুলোকে ভূপাতিত করা হয়েছে। তবে ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতেও ভূপাতিত হয়ে থাকতে পারে। প্রকৃত কারণ এখনো অজানা। ঠিক কীভাবে এই সামরিক ড্রোনগুলো ভূপাতিত হয়েছে, তা জানতে তদন্ত চলছে। ওই কর্মকর্তা বলেন, মার্কিন হামলার পরিমাণ বাড়লে ড্রোনের জন্য ঝুঁকি বাড়ে ঠিকই, তবে মার্কিন বাহিনী যেকোনো মূল্যে সৈন্য, সরঞ্জাম ও জাতীয় স্বার্থরক্ষায় প্রস্তুত।

জেনারেল অটোমেটিকস নামের একটি মার্কিন বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এই রিপার ড্রোন তৈরি করে। প্রতিটি ড্রোনের দাম প্রায় ৩ কোটি মার্কিন ডলার। ড্রোনগুলো সাধারণত ভূপৃষ্ঠ থেকে ৪০ হাজার ফুটের বেশি উচ্চতায় উড়তে পারে। হুতিরা নিয়মিত তাদের প্রকাশ্য বিবৃতিতে এসব ড্রোন ভূপাতিত করার কথা প্রচার করে আসছে। মার্কিন কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী গত ৩১ মার্চ, ৩ এপ্রিল, ৯ এপ্রিল, ১৩ এপ্রিল, ১৮ এপ্রিল, ১৯ এপ্রিল ও ২২ এপ্রিল ড্রোনগুলো ভূপাতিত করেছে হুতিরা।

ড্রোন ভূপাতিত করার পাশাপাশি হুতিরা মার্কিন যুদ্ধজাহাজ লক্ষ্য করে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছে, বিশেষ করে লোহিত সাগর ও এডেন উপসাগরে বাড়ছে হামলার মাত্রা। তবে এখনো কোনো হামলাতে তারা মার্কিন জাহাজে সরাসরি আঘাত করতে পারেনি।

গত ১৫ মার্চ থেকে ইয়েমেনি ভূখণ্ডে হুতিদের লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালিয়ে আসছে যুক্তরাষ্ট্র। ওই দিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে একটি নতুন ও বিস্তৃত সামরিক অভিযান শুরুর নির্দেশ দেন। হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন—লোহিত সাগরে গুরুত্বপূর্ণ সামুদ্রিক রুটে বাণিজ্যিক জাহাজে হামলা চালানো যত দিন না বন্ধ হবে, তত দিন হুতিদের বিরুদ্ধে প্রাণঘাতী অভিযান চালিয়ে যাবে মার্কিন সেনারা।

গতকাল বৃহস্পতিবার সেন্ট্রাল কমান্ডের মুখপাত্র ডেভ ইস্টবার্ন জানান, এখন পর্যন্ত হুতিদের ৮০০ টিরও বেশি লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালানো হয়েছে। তাঁর তথ্যমতে, এক মাস ধরে চলমান এই হামলায় ধ্বংস হয়েছে হুতিদের বহু কমান্ড সেন্টার, আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা, উন্নত অস্ত্র তৈরির কারখানা, অস্ত্রের গুদাম। পাশাপাশি উল্লেখযোগ্যসংখ্যক হুতি নেতা ও সদস্য নিহত হয়েছেন বলেও দাবি করেন তিনি।

এদিকে হুতিদের বিরুদ্ধে চলমান মার্কিন অভিযানে বেসামরিক নাগরিকদের প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মার্কিন সিনেটরেরা। মেরিল্যান্ডের সিনেটর ক্রিস ভ্যান হোলেন, ম্যাসাচুসেটসের এলিজাবেথ ওয়ারেন ও ভার্জিনিয়ার টিম কেইন গতকাল প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথকে একটি চিঠি লিখেছেন। ওই চিঠিতে সিনেটরেরা প্রশ্ন তুলেছেন, বেসামরিক ক্ষয়ক্ষতি কমানোর যে আন্তর্জাতিক বাধ্যবাধকতা রয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসন তার ঊর্ধ্বে কি না!

ইয়েমেনের রাস ইসা জ্বালানি স্থাপনায় মার্কিন হামলায় হতাহতের প্রসঙ্গ টেনে তাঁরা বলেন, ‘মার্কিন সামরিক নেতৃত্ব একমত যে বেসামরিক প্রাণহানি ন্যূনতম রাখার নীতিমালা কার্যকর থাকলে সামরিক অভিযানের ফলাফল ভালো হয়। বেসামরিক মৃত্যুতে অভিযানের প্রতি জনগণের সমর্থন কমে।’

হুতিদের বিরুদ্ধে যুদ্ধজাহাজ, যুদ্ধবিমান, বোমারু বিমান ও ড্রোন ব্যবহার করে হামলা চালাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। বর্তমানে মার্কিন নৌবাহিনীর দুটি বিমানবাহী রণতরী এই অঞ্চলে মোতায়েন রয়েছে।

গত মার্চে যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস হ্যারি এস ট্রুম্যানকে মধ্যপ্রাচ্যে দীর্ঘ সময় রাখতে নির্দেশ দেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী হেগসেথ। পরে ইউএসএস কার্ল ভিনসনকেও সেখানে পাঠানো হয়। বর্তমানে ট্রুম্যান ও সেটির সঙ্গে থাকা দুটি ডেস্ট্রয়ার ও একটি ক্রুজার লোহিত সাগরে অবস্থান করছে। ভিনসন ও এটির সঙ্গে থাকা দুটি ডেস্ট্রয়ার ও একটি ক্রুজার এডেন উপসাগরে রয়েছে।

মধ্যপ্রাচ্যে একই সঙ্গে দুটি মার্কিন যুদ্ধজাহাজ মোতায়েনের ঘটনা বিরল না হলেও খুব সাধারণও নয়। গত বছর বাইডেন প্রশাসন লোহিত সাগরে যুদ্ধজাহাজ ইউএসএস ডুইট ডি আইজেনহাওয়ারকে দীর্ঘ সময়ের জন্য মোতায়েন রাখার নির্দেশ দিয়েছিল। এর আগের কয়েক বছর এই পরিমাণে নৌ–শক্তি মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন করা হয়নি।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension