প্রধান খবরযুক্তরাষ্ট্ররাজনীতি

হোয়াইট হাউসে কাকে চায় চীন?

আগামী ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিশ্বের অন্যতম শক্তিশালী গণতন্ত্রের দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। হোয়াইট হাউসে যাওয়ার দৌড়ে কমলা হ্যারিস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প দু’জনেই সমানে সমান লড়াই করছেন। জনমত জরিপে দুই প্রার্থীর মধ্যে এখনো হাড্ডাহাড্ডি লড়াই চলছে। তবে আগামীতে হোয়াইট হাউসে কাকে চায় মার্কিনিদের অন্যতম প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী ও কমিউনিস্ট রাষ্ট্র চীন?

বিশ্লেষকরা সংবাদমাধ্যম আনাদোলুকে বলছেন, এই শতাব্দীর সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয় চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্ক। কিন্তু আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বেইজিংয়ের পছন্দের কোনো প্রার্থী নেই।

তাইহে ইনস্টিটিউটের সিনিয়র ফেলো ও চীনা উপস্থাপক আইনার টাঙ্গেন বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান দুই দলের কেউই প্রকাশ্যে চীন সরকারের সঙ্গে দেখা বা মেলামেশা করতে চায় না।’ যিনিই নির্বাচিত হোক না কেন, চীনের প্রতি নীতির কোনো পরিবর্তন হবে না বলেও মনে করেন তিনি।

বেইজিংভিত্তিক তাইহে ইনস্টিটিউটের জ্যেষ্ঠ ফেলো ওয়াং জাইবাং আনাদোলুকে বলেন, ‘রিপাবলিকানরা ‘অনেক বেশি সোজাসাপ্টা ও কঠোর’। অপরদিকে ডেমোক্র্যাটরা অনেক বেশি ভণ্ড এবং তারা এক কথা বলে কাজ করে আরেক।’

মার্কিন-চীন সম্পর্কের সমস্যাগুলোর মধ্যে তাইওয়ান ইস্যু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ। ওবামা প্রশাসনের এশিয়ার দিকে অগ্রসর হওয়ার পর ট্রাম্প যুগ থেকে ওয়াশিংটন ও তাইপের মধ্যে সম্পর্ক বেড়েছে। যুক্তরাষ্ট্র তাইওয়ানকে শত শত কোটি ডলারের অস্ত্র ও সরঞ্জাম সরবরাহ করেছে, যা প্রায় আড়াই কোটি মানুষের দ্বীপ রাষ্ট্র তাইওয়ানকে চীন থেকে বিচ্ছিন্ন প্রদেশ হিসেবে বিশ্বে উপস্থাপন করে।

তাইওয়ান প্রণালীর ওপারে অবস্থিত দ্বীপটিকে মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে একীভূত করতে শক্তি প্রয়োগের সম্ভাবনা উড়িয়ে দেয়নি বেইজিং। আইনার বলেন, বেশিরভাগ মার্কিন আইনপ্রণেতা তাইওয়ান এবং বিচ্ছিন্নতাবাদকে সমর্থন করে।

চীন সম্পর্কে মার্কিন জনগণের ধারণা ‘খুবই নেতিবাচক’

সাংহাই ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক হোংডা ফ্যান অদূর ভবিষ্যতে দুই পরাশক্তির মধ্যকার সম্পর্কের বরফ গলার বিষয়ে হতাশা প্রকাশ করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনকে চীন ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’ মনে করে উল্লেখ করে তিনি আনাদোলুকে বলেন, ‘চীন সম্পর্কে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান ধারণা খুবই নেতিবাচক, তা আনুষ্ঠানিক হোক বা জনসাধারণ।’

যুক্তরাষ্ট্রে পড়াশোনা করা এবং একাডেমিক কাজের জন্য নিয়মিত আমেরিকান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যাওয়া হোংডা বলেন, ‘চীনের প্রতি রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাটদের মনোভাবের মধ্যে মূলত কোনো পার্থক্য নেই।’

তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রে আমি দেখেছি— চীন সম্পর্কে আমেরিকানদের অনেক ভুল ধারণা রয়েছে, যা দুই দেশের সম্পর্কের জন্য সহায়ক নয়। অনেক বিষয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টিভঙ্গির মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য রয়েছে। ভবিষ্যতে দুই দেশের মধ্যে সম্পর্ক রক্ষা সহজ হবে না।’

ওয়াশিংটনের চীন নীতি ‘ভবিষ্যতে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন হবে না’ আইনারের এমন মতের সঙ্গে হোংডা একমত। তবে তিনি উল্লেখ করেছেন, রিপাবলিকান প্রশাসন চীনের প্রতি ‘কঠোর হবে’।

উভয় পক্ষ অর্থনৈতিক চুক্তিতে পৌঁছানো সত্ত্বেও ‘দুই দেশের জনগণকে বিচ্ছিন্ন করার’ জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের নীতিগুলোকে দোষারোপ করে হোংদার মূল্যায়নকে সমর্থন করেছেন আইনার। তিনি বলেন, ‘সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়েছেন, যা বাণিজ্য যুদ্ধের সূত্রপাত করেছে। যা প্রায় ৫৭৫ বিলিয়ন ডলারের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যকে জটিল করে তুলেছে।’

চীনের প্রতি মার্কিন নীতি ইস্যুতে ওয়াং ই বলেন, ‘ট্রাম্প ও হ্যারিস দু’জনেই ‘অনেকটা একই রকম’। তারা একটি পালকের দুটি পাখি।’ কারণ চীনকে সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ হিসেবে দেখা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ঐকমত্যে পরিণত হয়েছে বলে মনে করেন ওয়াং।

তিনি বলেন, ‘পার্থক্য হলো চীনের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য ও প্রযুক্তি যুদ্ধ দেশটিকে সতর্ক করে দিয়েছে, বাইডেন এই শত্রুতা আরও বাড়িয়ে তুলেছেন।’

অপরদিকে আইনারের মতে, নির্বাচিত হলে ট্রাম্প বন্ধু ও শত্রু উভয়ের ওপর শুল্ক আরোপ করবেন, যা মার্কিন মুদ্রাস্ফীতি বাড়িয়ে তুলতে পারে এবং বিশ্বব্যাপী চাহিদা হ্রাস করতে পারে। এতে বিশ্বব্যাপী অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।

কমলা হ্যারিস সম্পর্কে তিনি বলেন, এমন কোনো নীতি নেই যা তিনি উল্টাপাল্টা করেননি। আশা করা হচ্ছে তিনি বাইডেনের মতো একই আমেরিকান ব্যতিক্রমবাদী নীতি অনুসরণ করবেন, যা ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতকে সমর্থন করে।

ওয়াং যুক্তরাষ্ট্রকে ‘অর্থনৈতিক জাতীয়তাবাদ ও বাণিজ্য সংরক্ষণবাদ’ অনুসরণ করার বিরুদ্ধে সতর্ক করে দিয়ে ‘অচলাবস্থা’ বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন, ‘চীন সরকার আশা করে না (পরবর্তী) মার্কিন সরকার সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা বন্ধ করবে।’

হোংদা এই দৃষ্টিভঙ্গির ওপর ভিত্তি করে বলেন, বেইজিং বারবার জোর দিয়ে বলেছে— চীন ও যুক্তরাষ্ট্র প্রতিযোগী নয় বরং অংশীদার।

একই গন্তব্যের দুই পথ

ওয়াং মনে করেন, চীনকে ঠেকানোর লক্ষ্যে ইন্দো-প্যাসিফিক কৌশল বাস্তবায়নে ট্রাম্প প্রশাসনের চেয়ে বাইডেন প্রশাসন বেশি সক্রিয়। তবে তিনি বলেন, এ ধরনের নীতির ‘কার্যকারিতা সীমিত’। কারণ এ অঞ্চলের বেশিরভাগ সরকারই চীনকে নিয়ন্ত্রণে রাখার মার্কিন কৌশলগত দাবির সঙ্গে পুরোপুরি একমত নয়। ‘কিছু দেশের ক্ষমতাসীনরা মনে করে, যখন মার্কিন চাপে চীনকে উসকে দেয় তখন ‘লাভের চেয়ে ক্ষতি বেশি,’ তিনি যোগ করেন।

আইনার বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের উভয় পক্ষই আমেরিকান আধিপত্যবাদে বিশ্বাস করে এবং কেবল এটিকে ভিন্নভাবে গ্রহণ করে। তিনি বলেন, ‘ট্রাম্প… বিশ্বাস করেন ‘আর্ট অফ ডিল’ সম্পর্কে। বাইডেন বিশ্বাস করেন, আমেরিকা কোনো ভুল করতে পারবে না; যতক্ষণ পর্যন্ত তারা আধিপত্যবাদী এজেন্ডা বাস্তবায়ন করছে।’

আইনার জোর দিয়ে বলেন, চীনের জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফলাফল হচ্ছে ‘একই গন্তব্যে যাওয়ার দু’টি পথ’ মাত্র।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension