
ভারতের পুঁজিবাজারে ব্যাপক দরপতন হয়েছে বিশ্বের অন্যতম ও এশিয়ার শীর্ষ ধনী গৌতম শান্তিলাল আদানির মালিকানাধীন কোম্পানিগুলোর শেয়ারের। দি ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসের প্রতিবেদনে জানানো হয়, সকালে লেনদেন শুরু হওয়ার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আদানি গ্রুপের ৯ কোম্পানির সবগুলোর শেয়ারের দরপতন হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্ক সিটিভিত্তিক বিনিয়োগ গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের এক প্রতিবেদনের পর শেয়ারদর ৮ শতাংশ হারিয়েছিল আদানির কোম্পানিগুলো। এর দুই দিন পর শুক্রবার লেনদেন শুরুর কয়েক ঘণ্টায় প্রায় ২ লাখ কোটি রুপি কমে যায় কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর। সবশেষ দরপতনের মধ্য দিয়ে মঙ্গলবারের পর পুঁজিবাজারে ২ লাখ ৭৫ হাজার কোটি রুপি হারিয়েছে বহুজাতিক কোম্পানি আদানি গ্রুপ।
কোম্পানিটির মালিকানাধীন আদানি টোটাল গ্যাসের শেয়ারদর কমেছে ১৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ। এ ছাড়া আদানি ট্রান্সমিশনের ১৯ শতাংশের বেশি এবং আদানি গ্রিন এনার্জির শেয়ারদর কমেছে সাড়ে ১৫ শতাংশ। এগুলোর বাইরে আদানি পোর্টসের শেয়ারগুলোর দর কমে ৫ দশমিক ৩১ শতাংশ, যেখানে আদানি পাওয়ার ও আদানি উইলমারের শেয়ারদর কমে ৫ শতাংশ করে। গ্রুপের হোল্ডিং কোম্পানি আদানি এন্টারপ্রাইজেসের শেয়ারদর কমেছে ৬ দশমিক ১৯ শতাংশ।
আদানি গ্রুপের বিরুদ্ধে সম্প্রতি শেয়ার নিয়ে কারসাজির অভিযোগ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে হিন্ডেনবার্গ রিসার্চ। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত বৃহস্পতিবার গ্রুপের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে মামলা করা হবে, কিন্তু ওই বার্তার পরও পতন ঠেকানো যায়নি পুঁজিবাজারে।
ভারতের শীর্ষ ধনী গৌতম আদানির মালিকানাধীন আদানি গ্রুপের মালিকানাধীন তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর শেয়ারদর গত ২৫ জানুয়ারি ৫ শতাংশের বেশি কমেছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠান হিনডেনবার্গ রিসার্চের এক প্রতিবেদনের পর আদানি গ্রুপের শেয়ারের দর এক দিনেই এতটা পড়ে যায়। তাতে এক দিনেই গ্রুপটির বাজার মূলধন ১০ দশমিক ৮ বিলিয়ন ডলার বা ১ হাজার ৮০ কোটি ডলার কমেছে।
সেই প্রতিবেদনের জেরে প্রতিদিনই কমছে গ্রুপটির তালিকাভুক্ত শেয়ারের দর, যা ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন গণমাধ্যম ফলাও করে খবর প্রকাশ করছে। হিনডেনবার্গের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আদানি গ্রুপ স্টক ও হিসাবের বিষয়ে জালিয়াতি করেছে। তাদের ভাষ্য, আদানি গ্রুপ ভুল তথ্য দিয়ে বাজারকে প্রভাবিত করেছে। এর মাধ্যমে তারা বাজারে নিজেদের শেয়ারের দাম বাড়িয়েছে।
ফাইন্যান্সিয়াল টাইমস বলেছে, গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির প্রতিবেদনে অভিযোগ করা হয়েছে যে, এক দশক ধরে আদানি গ্রুপ এই জালিয়াতি করে আসছে। হিনডেনবার্গ এই অভিযোগসংক্রান্ত মোট ৮৮টি প্রশ্ন উত্থাপন করেছে। তারা আশা করছে, আদানি গ্রুপ এসব প্রশ্নের উত্তর দেবে।
তবে গৌতম আদানি মনে করেন, তার কোম্পানির স্টকের মূল্যায়ন ঠিক আছে। আদানি গ্রুপ হিনডেনবার্গের এই প্রতিবেদনে বড় ধাক্কা খেয়েছে বলে জানিয়েছেন গ্রুপের প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা জোগেসিন্দর সিং। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমরা বিস্মিত হয়েছি, গত মঙ্গলবার তারা এই প্রতিবেদন প্রকাশ করল, কিন্তু আমাদের সঙ্গে কথা বলল না। এমনকি যে তথ্য তারা প্রকাশ করেছে, তা যাচাই-বাছাইও করল না। এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন।’ জোগেসিন্দর সিং আরও বলেন, এমন সময়ে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে, যা দেখে বোঝা যায়, এর উদ্দেশ্য কী। কিছুদিনের মধ্যেই আদানি গ্রুপের আরেকটি কোম্পানির নতুন শেয়ার বাজারে আসার কথা। এ সময় প্রতিবেদন প্রকাশ করে কোম্পানির সেই প্রক্রিয়া ব্যাহত করার অপচেষ্টা করছে হিনডেনবার্গ।’
আদানি এন্টারপ্রাইজ এফপিওর মাধ্যমে আগামী কয়েক দিনের মধ্যে বাজার থেকে ২৫০ কোটি ডলার তোলার পরিকল্পনা করছিল। এফপিও হলো এমন একটি প্রক্রিয়া, যার মাধ্যমে তালিকাভুক্ত একটি কোম্পানি বাজারে অতিরিক্ত শেয়ার ছেড়ে অর্থ তোলে। হিনডেনবার্গ অবশ্য প্রতিবেদনে বলেছে, ‘আমাদের প্রাপ্ত তথ্যের কথা বাদই দিই, আদানি গ্রুপের তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর বাজারদর কমার পেছনে ৮৫ শতাংশ দায় তাদের আকাশচুম্বী মূল্যায়নের।’ তারা আরও বলেছে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বন্ড ও অন্যান্য দেশের ডেরিভেটিভ ব্যবহার করে অর্থ পাচার করা হচ্ছে।
আদানি এন্টারপ্রাইজ ও গ্রুপটির অন্যান্য তালিকাভুক্ত কোম্পানিতে মরিশাসের একাধিক বিনিয়োগ তহবিলের বিনিয়োগ নিয়ে ভারতের বিভিন্ন নিয়ন্ত্রক সংস্থা আগেও প্রশ্ন তুলেছে। গত বছর জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির কারণে আদানি গ্রুপের সম্পদ ফুলে-ফেঁপে উঠেছে। কিন্তু একই সঙ্গে গ্রুপটির ঋণও বেড়েছে। তাদের মোট ঋণের পরিমাণ ২৪ বিলিয়ন বা ২ হাজার ৪০০ কোটি ডলার। এটা গ্রুপটির প্রাক্-সমন্বিত আয়ের সাত গুণ। বিশ্লেষকরা এ নিয়ে উদ্বেগও প্রকাশ করেছেন।
এ প্রসঙ্গে গৌতম আদানি গত ডিসেম্বরে ফাইন্যান্সিয়াল টাইমসকে বলেন, ‘অনেক বিশ্লেষক প্রকৃতপক্ষে আমার ব্যবসার ধারা বুঝতে পারেননি। তবে আমার ঋণদাতারা, ব্যাংক ও বৈশ্বিক বিনিয়োগকারীরা তা বোঝেন। আদানি যখনই শেয়ারবাজারে আসে, তখনই তারা আগ্রহ নিয়ে বিনিয়োগ করেন। সে কারণেই আমাদের এত প্রবৃদ্ধি হচ্ছে।’