
তাহমিদ হাসান
তোমার তনু, যুগল আঁখি
মহাকালের মন্ত্র পড়ে আবির্ভূত—কোথায় রাখি
হৃদয়খানি? তোমার পাণি
ধরতে গিয়ে তুমুল হলো হানাহানি।
রাত পোহালো অনিদ্রাতে
তোমার তীক্ষ্ণ প্রেমাঘাতে
পুড়লো যেন বসুন্ধরা;
হাসলে তুমি সুদূর হতে হায় অধরা
তিলোত্তমা।
এই কি ছিল তোমার মনে? রাখলে জমা
বীণার তারে প্রেমের গানে
বিষের বাটি; লাগলো যেন আমার কানে
মধুর মায়া—ভুলে গেলাম কোথায় আমি!
অস্তগামী
দিনের আলো তোমার মতো করলো খেলা;
হঠাৎ দেখি রাত্রিবেলা
আমার পাশে ঘুমিয়ে আছে এ কোন নারী!
বক্ষে যুগল জাদুর বাটি, রঙিন শাড়ি
উস্কানি দেয় ভাসতে বলে
প্রেম অতলে।
কাটলো কালের অমানিশা
জিতেই গেলো তোমার তীব্র বিজিগীষা
হলাম আমি চরিত্রহীন।
খেলবে তুমি আর কতদিন
আমায় নিয়ে হে নর্তকী?
চলে যাবার সূক্ষ্ম সময় হয়েছে কি
তিলোত্তমা?
কোন উপমা
তোমায় দেবে আজ পৃথিবী?
ইচ্ছে করে স্লথ করেছো যখন নীবি
ব্যাপ্ত বুকের বস্ত্রখানি
বাজলো শেষে অমরাবতীর বজ্রবাণী;
বাড়লো ব্যথা আমার বুকে
ভেবেছিলাম যাবেই চুকে
তোমার প্রেমের ঘাত-প্রতিঘাত
মাশুল গুনে বুঝলো বোকা নষ্ট নারীর নেই কোনো জাত।
চলেই গেলে হায় নিঠুরা
গুটিয়ে ডানা ফাগুন রাতে—ধরলো সুরা
আমায় বেঁধে।
লাভ হলো না অষ্টপ্রহর তোমায় সেঁধে
হে অপরূপ তিলোত্তমা।
নাচলে কেন রাতের রমা
দরিদ্র এই আমার বুকে কাল নিশীথে?
নগ্ন নাভির নিচের সিঁথে
গূঢ় নদীর জোয়ার আনে,
ছলাত করে বাজলো আহা আমার কানে
বাৎসায়নের নীতিমালা।
দুষ্টু বালা,
এখন তুমি অনেক দূরে
মনের বনে রতির রানী যাচ্ছে পুড়ে
কী আর করা!
জগত যেনো দ্রৌপদীর ঐ স্বয়ম্বরা।
ভেঙেই যাবো হয়তো আমি—বলো কী দোষ
করেছিলাম তোমায় বেসে অনেক ভালো? কেন আপোষ
করতে এলে হায় অসতী!
সাক্ষী ছিল অমরাবতী,
দিয়েছিলাম যৌবনের ঐ আগুন জ্বেলে
তোমার পায়ে প্রেমের পূজা; কিন্তু সে ফুল ধূলায় ফেলে
চলেই গেলে অহঙ্কারে।
বহু যুগের শাস্তি ভোগের তপস্যাতে কোন আঁধারে
বন্দি ছিলাম কেউ কি জানে?
কেন আবার ডাকলে তুমি মধুর গানে?
রক্তে আমার আদিমতার অভিজ্ঞতা,
নির্জনতার নিমগ্নতা,
ক্লান্তি কালের রাত্রি এখন—কে আর যাবে কুঞ্জবনে
তোমার সাথে! সংগোপনে
পায়ের তলে সরলো মাটি,
আজকে আমি সঙ্গী বিহীন একলা হাঁটি
সকাল-সাঁঝে; পড়তে বাকি জীবন খাতায় দাঁড়ি ও কমা—
সঙ্গিনী হায়, আজও তুমি তিলোত্তমা।