
বায়ুদূষণ বাংলাদেশে শারীরিক, মানসিক স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করছে: বিশ্বব্যাংক
বিশ্ব ব্যাংক বলেছে, বায়ুদূষণ বাংলাদেশে শারীরিক, মানসিক স্বাস্থ্যের মারাত্মক ক্ষতি করছে। রোববার প্রকাশিত ‘ব্রিদিং হেভি: নিউ এভিডেন্স অন এয়ার পল্যুশন অ্যান্ড হেলথ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক রিপোর্টে বিশ্বব্যাংক বলেছে, উচ্চমাত্রায় বায়ুদূষণ শ্বাস-প্রশ্বাসে জটিলতা সৃষ্টির ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে। একই সঙ্গে বাড়ছে কাশি, শ্বাসনালীর নিম্নাংশে সংক্রমণ। সৃষ্টি হয় হতাশা এবং শারীরিক নানা জটিলতা। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা সিনহুয়া।
ঢাকা এবং সিলেট সহ বিভিন্ন শহরে ঘরের বাইরে যে বায়ুুদূষণ তার ক্ষতিকর প্রভাব মূল্যায়ন করা হয়েছে এই রিপোর্টে। এতে বলা হয়েছে, ৫ বছরের কম বয়সী শিশু, প্রবীণ এবং যেসব মানুষের ডায়াবেটিস, হার্টের এবং শ্বাসযন্ত্রের জটিলতা আছে, তারাই সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে। স্বাস্থ্যের ওপর বায়ুদূষণের ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে আনতে বিশ্বব্যাংক তার রিপোর্টে অবিলম্বে অ্যাকশনে যেতে হবে- এমন কিছু সুপারিশ করেছে। এর মধ্যে আছে জনস্বাস্থ্য সেবা, রেসপন্স মেকানিজম, বায়ুদূষণ বিষয়ক ডাটা মনিটরিং সিস্টেম উন্নতি করা। পাশাপাশি আগেভাগে সতর্কতা ব্যবস্থা এবং আরও গবেষণায় বিনিয়োগ করা।
রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, বড় বড় সব নির্মাণ প্রক্রিয়া এবং ঢাকা শহরে বিদ্যমান যানজটের ফলে উচ্চ মাত্রায় বায়ুদূষণ হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এয়ার কোয়ালিটি গাইডলাইন্সে (একিউজি) বেঁধে দেয়া মাত্রার চেয়ে গড়ে শতকরা ১৫০ ভাগেরও বেশি মাত্রায় ফাইন পার্টিক্যুলেট ম্যাটার (পিএম ২.৫) আছে।
এই পদার্থকে স্বাস্থ্যের জন্য সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর বলে মনে করা হয়। পিএম২.৫ এর এই মাত্রা দিনে প্রায় ১.৭ টি সিগারেট পান করার সমতুল্য।
বাংলাদেশ ও ভুটান বিষয়ক বিশ্বব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর ড্যানড্যান চেন বলেন, চারদিকে দূষিত বাতাস ঘিরে থাকায় শিশু থেকে প্রবীণ পর্যন্ত সবাই ঝুঁকিতে আছে। ২০১৯ সালে বিশ্বের মধ্যে বাংলাদেশে বায়ুদূষণ এবং বিকলাঙ্গতার ফলে মৃত্যু ছিল দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। এর ফলে বাংলাদেশের জিডিপির শতকরা প্রায় ৩.৯ ভাগ থেকে ৪.৪ ভাগ মূল্য দিতে হয়েছে। এখানকার টেকসই, পরিবেশবান্ধব প্রবৃদ্ধি এবং উন্নয়নের জন্য বায়ুদূষণের বিষয়ে মনোযোগ দেয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বিশ্লেষণমুলক কাজ এবং নতুন বিনিয়োগের মাধ্যমে বাংলাদেশের বায়ু দূষণকে কমিয়ে আনতে সহায়তা করে যাচ্ছে বিশ্বব্যাংক।
ওই রিপোর্ট অনুযায়ী, ২০১৯ সালে বায়ু দূষণের কারণে ৭৮,১৪৫ থেকে ৮৮,২২৯ জন মানুষের মৃত্যু হয়েছে বাংলাদেশে। এই রিপোর্টের লেখক ও বিশ্বব্যাংকের স্বাস্থ্য বিষয়ক বিশেষজ্ঞ ওয়ামেক আজফার রাজা বলেছেন, বায়ুদূষণের ফলে জলবায়ু পরিবর্তন হচ্ছে। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বাতাসের গুণগত মান নষ্ট হচ্ছে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে জলবায়ু পরিবর্তন এবং নগরায়নের ফলে বায়ুদূষণ আরও তীব্র হবে। এসব সমস্যা থেকে তাৎক্ষণিকভাবে স্বাস্থ্যখাতে যে সংকট দেখা দেবে তার জন্য ভালভাবে প্রস্তুত থাকা উচিত স্বাস্থ্যখাতকে।