
বিদ্যুতের উপর্যুপরি মূল্যবৃদ্ধি
আবারও খুচরা পর্যায়ে ৫ শতাংশ বাড়ানো হয়েছে বিদ্যুতের দাম। উল্লেখ্য, ইতঃপূর্বে মাত্র দুমাসের ব্যবধানে নির্বাহী আদেশে আরও দুই দফা বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছিল।
এভাবে উপর্যুপরি বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধির ঘটনাকে ‘নজিরবিহীন’ মন্তব্য করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সরকারের এমন সিদ্ধান্তে সামগ্রিক অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। তাদের মতে, সঠিকভাবে ঋণ ব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি কমানো গেলে এভাবে দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হতো না। বস্তুত নতুন করে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি কতটা যৌক্তিক-এ প্রশ্ন এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। এমন একসময়ে তৃতীয় দফায় বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হলো, যখন করোনাভাইরাস ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে দেশের অর্থনীতি সংকটে পড়েছে এবং নিত্যপণ্য ও সেবার মূল্যবৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা।
দুশ্চিন্তার বিষয় হলো, বিদ্যুতের মূল্যবৃদ্ধিতে কেবল আবাসিক খাতেই নয়, দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য ও কৃষি খাতেও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। বলার অপেক্ষা রাখে না, ব্যবসা-বাণিজ্য ও কৃষিতে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে গেলে বাড়বে দ্রব্যমূল্যও, প্রকারান্তরে যার মাশুল সাধারণ ভোক্তাদেরই দিতে হবে। মূলত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) শর্ত বাস্তবায়নে সরকার একের পর এক পণ্য ও সেবার মূল্য বাড়িয়ে চলেছে। আগে দাম বাড়ানোর প্রক্রিয়া থেকে হতদরিদ্র ও কৃষি-সেচকে বাদ রাখা হলেও এখন সেখানেও হানা দেওয়া হচ্ছে। গত সাত মাসে আটবার বাড়ানো হয়েছে গ্যাস, বিদ্যুৎ, তেল ও সারের দাম, যার প্রভাবে সব ধরনের পণ্য ও সেবার দাম ঊর্ধ্বমুখী। একদিকে টাকার মান কমে গিয়ে মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে, অন্যদিকে খরচ বেড়ে যাওয়ায় ব্যয়ভারে সংকুচিত হয়ে পড়ছে মানুষের জীবন, যা মোটেই কাম্য নয়।
অভিযোগ রয়েছে, কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সুযোগ থাকা সত্ত্বেও উৎপাদন করা হচ্ছে বেশি দামে। স্বল্পতম ব্যয়ে উৎপাদন কৌশল গ্রহণ না করায় ভোক্তারা বছরে অন্তত সাড়ে ৭ হাজার কোটি টাকার ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছেন। সরকার কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদনের কৌশল গ্রহণ না করে বেশি দামে উৎপাদন করে কিছুদিন পরপর বিদ্যুতের দাম বাড়িয়ে চলেছে, যা অন্যায্য। বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি সাধারণ মানুষের জীবনে ‘মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা’ তো বটেই; উপরন্তু এতে ব্যবসায়ী ও কৃষি উদ্যোক্তারা ক্ষতির সম্মুখীন হবেন। সবদিক পর্যালোচনা করে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা উচিত।