
ব্লিঙ্কেনের সংবাদ সম্মেলন থেকে ফিলিস্তিনি সাংবাদিককে টেনে হিঁচড়ে বের করে দিল
বিদায়ী সংবাদ সম্মেলন গাজায় ইসরায়েল যুদ্ধ নিয়ে তোপের মুখে পড়েন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন। দুই সাংবাদিকের বাক্যবানের পর সৃষ্ট উত্তেজনায় সংবাদ সম্মেলনটি বিশৃঙ্খলায় রূপ নেয়। এক পর্যায়ে ফিলিস্তিনি সাংবাদিক স্যাম হুসেইনিকে টেনে হিঁচড়ে বের করে দেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক সংবাদ সম্মেলনে এঘটনা ঘটে।
স্যাম হুসেইনি প্রথমে ব্লিঙ্কেনের বক্তব্যকে চ্যালেঞ্জ করেন। তিনি বলেন, ‘অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক আদালত (আইসিজে) পর্যন্ত সবাই বলছে, ইসরায়েল গাজায় গণহত্যা চালাচ্ছে। আর আপনি আমাকে বলছেন, প্রক্রিয়াকে সম্মান জানাতে?
হুসেইনির মন্তব্যের পরপরই পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়। কিছুক্ষণ পর নিরাপত্তা কর্মীরা তাঁকে সিট থেকে জোর করে উঠিয়ে দিতে যায়। হুসেইনি তখন বলতে থাকেন, ‘আমার গায়ে হাত দেবেন না, আমি শুধু প্রশ্ন করছি। এই কি আপনাদের মুক্ত গণমাধ্যম?’ তবুও নিরাপত্তা কর্মীরা তাঁকে টেনে হিঁচড়ে বের করে দেয়। তখন তিনি চিৎকার করে ব্লিঙ্কেনের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘অপরাধী! আপনি হেগে যান না কেন?’
পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার পর ব্লিঙ্কেন তার বক্তব্য চালিয়ে যান। তবে কিছুক্ষণ পরে সাংবাদিক ম্যাক্স ব্লুমেনথাল তাকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন। ব্লুমেনথাল চিৎকার করে বলেন, ‘আপনি বোমা সরবরাহে মেতে ছিলেন কেন? নীতি বিসর্জন দিলেন কেন? কেন আমার বন্ধুদের হত্যা করতে দিলেন?’
নিরাপত্তা কর্মীরা তখন ব্লুমেনথালকেও আটকানোর চেষ্টা করে। তখন তিনি নিজেই কক্ষ ছাড়তে থাকেন, আর বলতে থাকেন, “আপনার শ্বশুর ছিলেন ইসরায়েলি লবিস্ট, আপনার দাদাও ছিলেন ইসরায়েলি লবিস্ট। আপনি ইসরায়েলের দ্বারা প্রভাবিত। এমন গণহত্যার সঙ্গে কীভাবে যুক্ত হলেন।’
আগের দিন ব্লিঙ্কেনের বিদায়ী ভাষণে এক ফিলিস্তিনপন্থী এক নারী বিক্ষোভকারী তাকে ‘গণহত্যার মন্ত্রী’ বলে ডাকেন। তিনি চিৎকার করে বলেন, ‘গাজায় যে রক্ত ঝরছে, তা আপনার হাতে লেগে আছে। আমরা ভুলব না, ক্ষমা করব না। আপনি এর জন্য দায়ী।’
গাজা-ইসরায়েল যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ব্লিঙ্কেন ও বাইডেন প্রশাসনের নীতি বিশ্বব্যাপী তীব্র সমালোচনার মুখে পড়েছে। ১৫ মাসের এই যুদ্ধের ফলে গাজায় ৪৬ হাজারের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন এবং ২৩ লাখের বেশি মানুষ গৃহহীন হয়েছেন।
এর মধ্যে যুদ্ধবিরতির চুক্তি স্বাক্ষরিত হলেও গাজায় মানবিক বিপর্যয় এবং যুদ্ধকালীন সিদ্ধান্তের জন্য ব্লিঙ্কেনের ওপর চাপ বেড়েছে। তাঁর বিরুদ্ধে সমালোচনার শেষটা হলো এই সংবাদ সম্মেলন। পরিস্থিতি কতটা উত্তপ্ত হয়ে উঠেছিল, তা আজকের সাংবাদিকদের বাধা দেওয়ার ঘটনা প্রমাণ করে।