আন্তর্জাতিকবাংলাদেশভারত

ভারতকে এক দিন আগেই জানানো হয়েছিল, শেখ হাসিনার সময় শেষ

ছাত্র জনতার গণ আন্দোলনের মুখে শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে পালিয়ে যায় শেখ হাসিনা। তবে তিনি শেষ সময় পর্যন্ত ক্ষমতা ছাড়তে অনড় ছিল। পরবর্তীতে পরিবারের সদস্যরা তাকে বুঝিয়ে পদত্যাগে বাধ্য করেন। খবর বিবিসির।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমাতে রোববার শেখ হাসিনা নিরাপত্তা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বৈঠক ডেকেছিলেন। ওই বৈঠকে কর্মকর্তারা আন্দোলন ঠেকানো সম্ভব নয় বলে হাসিনাকে জানিয়েছিলেন। কিন্তু হাসিনা তাদের এ কথা মানতে রাজি হয়নি। তিনি তাদের সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগের নির্দেশ দেন।

রোববার সকালে জাতীয় নিরাপত্তা কমিটির বৈঠক ডাকা হয়েছিল। বৈঠকে তিন বাহিনীর প্রধান, ঊর্ধ্বতন নিরাপত্তা ও পুলিশ কর্মকর্তারা অংশ নিয়েছিলেন। বৈঠকের পরিবেশ ছিল গম্ভীর।

কর্মকর্তাদের কাছ থেকে বিবিসি বাংলা জানতে পেরেছে, শেখ হাসিনা ‘দুটি বিকল্প’ খোলা রাখতে চেয়েছিলেন। যখন তার দেশ ছাড়ার প্রস্তুতি চলছিল, তখনো তিনি শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত বল প্রয়োগ করে ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলেন। কিন্তু শীর্ষ সামরিক কর্মকর্তারা শেখ হাসিনার কথায় রাজি হননি।

রোববার দেশের বিভিন্ন স্থানে মাঠপর্যায়ের সেনা ও সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিশে গিয়েছিলেন সাধারণ মানুষ ও আন্দোলনকারীরা। পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার পর জ্যেষ্ঠ সামরিক কর্মকর্তারা বুঝতে পেরেছিলেন, পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে গেছে। তবে শেখ হাসিনা তা শোনেননি। আর তখন কেউই সামনে বসে তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করতে রাজি ছিলেন না।

গোয়েন্দা তথ্যে বলা হয়, ছাত্রদের দাবি মানুষকে আকৃষ্ট করছে। পরের দিন হাজারো মানুষ রাজধানীর রাজপথে নামার পরিকল্পনা করছে।

সোমবার সকাল থেকেই ঢাকা অভিমুখে বিপুল জনতার যাত্রা শুরু হয়। সেনাপ্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান আবার শেখ হাসিনার বাসভবনে গিয়ে তাকে পরিস্থিতির গভীরতা ব্যাখ্যা করছিলেন। লোকজন কারফিউ ভঙ্গ করছিল। ইতিমধ্যে সহিংসতা শুরু হয়ে গিয়েছিল।

সূত্র জানায়, সোমবার সকালে শেখ হাসিনা নিরাপদ আশ্রয়ের অনুরোধ জানাতে দিল্লিতে ভারতের সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তার দীর্ঘ কর্মজীবনের একনিষ্ঠ মিত্র ভারত। ভারতের দিক থেকে তাকে দেশ ছাড়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।

জানা যায়, এক দিন আগে ওয়াশিংটন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের বলেছিল, শেখ হাসিনার সময় শেষ। তার সামনে আর কোনো বিকল্প নেই।

অবসরপ্রাপ্ত ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, তিনি যখন বুঝতে পেরেছিলেন, সেনাবাহিনী তাকে সমর্থন করছে না, তখনই তিনি পদত্যাগ করেছিলেন। লোকজন কারফিউ ভাঙতে যাচ্ছিল। তার বাসভবনের দিকে মিছিল নিয়ে যেতে ঢাকায় জড়ো হচ্ছিল।

শেখ হাসিনা অনিচ্ছা সত্ত্বেও তার পদত্যাগের নথিতে স্বাক্ষর করতে রাজি হয়েছিল। কিন্তু তাকে কীভাবে নিরাপদে দেশ থেকে বের করা যায়, তা নিয়ে প্রশ্ন ছিল।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension