মুক্তমতযুক্তরাষ্ট্র

মি. শুমার, আপনি প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না কেন?

ইংরেজিতে পড়তে এখানে ক্লিক করুন

শাহ্‌ জে. চৌধুরী


আমি আনিসুজ্জামান মুহাম্মদকে জিজ্ঞেস করলাম, আচ্ছা বলেন তো, সিনেটর চাক শুমার এখনও পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট পদে ইলেকশন করেন নি কেন?

আনিসুজ্জামান মুহাম্মদ হলেন কলাম লেখক। আরও সুস্পষ্ট বললে তিনি হলেন রাজনীতি নিয়েই লেখালেখি করেন। এমনিতে কথাবার্তা খুব বেশি বলেন না। কিন্তু যা বলেন, হুটহাট বলেন না। ভেবেচিন্তে যৌক্তিক একটা অবস্থানে দাঁড়িয়ে বলেন। আড্ডাতে বসলেও চুপ করে থাকেন। শুধু শোনেন। নিজের কোনো মতামত সহজে বলতে চান না। তাঁর মতামতটা তিনি লিখতেই পছন্দ করেন। আমাদের পত্রিকাতেও লেখেন মাঝেমধ্যে। আনিসুজ্জামান কোনো উত্তর দিলেন না। আমার দিকে তাকিয়ে থাকলেন শুধু। এমনই তিনি। নিজের অস্তিত্ব জানাতে কখনও উচ্চকিত হন না।

দুদিন পর আমি আবার তাঁকে বলি, আপনার মতামত জানতে চেয়ে সেদিন একটা প্রশ্ন করলাম, আপনি কিছু না বলেই চলে গেলেন।

আনিসুজ্জামান বললেন, কোন্‌ বিষয়ে? চাক শুমার?

হ্যাঁ।

দেখেন, আমি তো চাক শুমারকে জানি না। তিনি কেন প্রেসিডেন্ট হতে চান নি সেটা তো আমার জানার কথা নয়।

কি আশ্চর্য! আপনি জানবেন কেন! আমি তো আপনার মতামত জানতে চেয়েছি শুধু! অবাক হয়ে বলি আমি।

আনিসুজ্জামান বলেন, পত্রিকাগুলোতে প্রতিটা বিষয়ে লেখালেখির জন্যে আলাদা বিশেষজ্ঞ থাকেন। মধ্যপ্রাচ্য নিয়ে যিনি লেখেন তিনি ভারত নিয়ে লিখবেন না, ইউরোপ নিয়ে যিনি লেখেন তিনি আমেরিকার রাজনীতি নিয়ে লিখবেন না। আপনার উচিত আমেরিকার রাজনীতি নিয়ে যিনি লেখেন তাঁকে প্রশ্ন করা।

এটা খুবই সঠিক বলেছেন তিনি। তবুও আমি হাল ছাড়ি না, আবার বলি, আপনাকে তো লিখতে বলি নি, মতামত জানতে চেয়েছি। একটা মতামত তো থাকবে। মতামত বলতে সমস্যা কি!

সমস্যা নাই। আচ্ছা শোনেন, যেহেতু আমেরিকার রাজনৈতিক অঙ্গন, ফলে চাক শুমারের প্রতি আমার কোনো পক্ষপাত নেই। কিন্তু সমস্ত গুরুত্ব দিয়েও আমি আসলে বুঝতে পারি না কেউ কেন তার জীবনে এই অবস্থানটি চাইবে। মানে প্রেসিডেন্ট হতে চাওয়া আর কি। তবে এটুকু বুঝতে পারি যে বিভিন্ন দিক থেকে প্রত্যেকেরই ক্ষমতা দরকার। আর ক্ষমতা সমাজকে পরিবর্তন কিংবা প্রভাবিত করতে পারার একটি সনদ। তবে আমেরিকার প্রেসিডেন্টের কার্যালয়ে যেতে চাওয়াটা অনেকটা খোলাখুলিভাবেই পাগলামির আমন্ত্রণে সাড়া দেওয়া। ২০২০ সালের নির্বাচনের পর ডেমোক্রেটিক চাক শুমার সিনেটের সংখ্যাগরিষ্ঠ নেতা হওয়ার আশা করেন নি। ডেমোক্র্যাটরা ৪৮টি আসন দখল করেছিল। জর্জিয়ায় দুটি নির্বাচনে পার্টি যে জিতে যাবে এটি তিনি ভাবেন নি। কিন্তু তিনি সিনেটর হয়ে গেলেন।

আমি বলি, আপনার মনে আছে ওবামার সময়ে যখন আমেরিকার অভিবাসন প্রক্রিয়া সংস্কারের বিষয়ে যে পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিল চাক শুমার এই পরিকল্পনাটিকে একটি বড় সাফল্য হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন?

হ্যাঁ, একারণেই চাক শুমার নিউ ইয়র্কের সবচেয়ে বেশি সময় ধরে থাকা সিনেটর। এই যে এবারে ড্যানিয়েল প্যাট্রিক আর জ্যাকব কে. জাভিটসকে ছাড়িয়ে গেলেন, এর কারণও একই, বলেন আনিসুজ্জামান।

আপনি কি বলতে চাইছেন চাক শুমারের রাজনীতি অভিবাসীদের ওপর নির্ভরশীল? একটু বিস্ময়ে আমি প্রশ্ন করি।

আপনিও কি তাই বলতে চাইছেন না? পাল্টা প্রশ্ন করেন আনিসুজ্জামান মুহাম্মদ।

আমার মনে পড়ে, এ বছরের শুরুতেই চাক শুমার বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশিরা যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে আমার ধারণা, ভবিষ্যতে কংগ্রেসে, ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশীদের বিশেষ প্রয়োজন আমাদের। সেদিন তিনি ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভিবাসীবিরোধী পদক্ষেপকে খুব লজ্জাজনক অভিহিত করে সমালোচনা করেছিলেন। সাবেক প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তার দলের রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বী। ভোটের রাজনীতিতে তার সমালোচনা করাটা বলা যায় চাক শুমারের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে। তিনি তো সেই দায়িত্বই পালন করেছেন। তার সঙ্গে আরেকটি কাজ করেছেন, আমেরিকার সিনিয়র সিনেটর দূরদর্শী মি. শুমার নিউ ইয়র্কের বাংলাদেশী অভিবাসীদের মধ্যে যে সম্ভাবনা দেখেছেন, তার প্রশংসা করে তাকে উসকে দিয়েছেন। অনেকেই মনে করেন বাংলাদেশী অভিবাসীদের দিকে চাক শুমারের এক ধরনের পক্ষপাতিত্ব রয়েছে।

আসলেই কি তাই? সত্যিই কি চাক শুমার বাংলাদেশী অভিবাসীদের পক্ষ নিয়ে তাঁদের সমর্থন করেন?

আসুন একটু পেছন ফিরে দেখি। চাক শুমার ১৯৯৯ সালে প্রথম সিনেটর নিরবাচিত হন। সেবার তিনি ৫১ ভাগ ভোট নিয়ে ভোট নিয়ে ডেমোক্র্যাটিক প্রাইমারি জিতেছিলেন। এখনও পর্যন্ত তিনি সিনেটর পদে অধিষ্ঠিত রয়েছেন। সবশেষ ২০২২ সালে ৫৬ ভাগ ভোটে জিতেছিলেন। মূল কথাটা হলো আমেরিকায় অসংখ্য দেশের মানুষ বাস করেন। ফলে চাক শুমার কিংবা সে কোনো সিনেটরের পক্ষেই কোনো একটি নির্দিষ্ট দেশের পক্ষ নেওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু যে কোনো দেশের অভিবাসীর ক্ষেত্রেই এদেশের মূলধারার রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের নির্দিষ্ট কাউকে বেছে নেওয়ার সুযোগ থাকে, প্রবণতাও থাকে। এই প্রবণতা তৈরি হয় সে ব্যক্তির কাজ ও আন্তরিকতার ওপর ভিত্তি করে।

এই যে আমি আনিসুজ্জামান মুহাম্মদের কাছে মতামত জানতে চাইলাম চাক শুমার কেন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট পদে লড়ছেন না- তিনি কিন্তু ঠিকই বুঝে ফেললেন যে আমি চাইছি চাক শুমার প্রেসিডেন্ট পদে লড়ুন, আর যদি সত্যিই লড়েন তাহলে আমার ভোটটি চাক শুমারের বাক্সেই যাবে। অথচ আমি রাজনৈতিক করিডোরে হেঁটে বেড়াই না। এই অঙ্গনে আমার কোনো মোহ নেই।

আমেরিকার মতো দেশে কেউ একজন প্রেসিডেন্ট হতে গেলে তার টুপিতে অনেকগুলো পালক গুঁজতে হয়, যেমন নাগরিকদের জন্যে ভালো চাকরি, অন্য দেশগুলোর সঙ্গে ভালো কূটনীতিক সম্পর্ক স্থাপন, নাগরিকদের নিরাপত্তা প্রদান, সন্ত্রাসবাদ নির্মূল এবং সর্বোপরি অভিবাসন। সত্যমিথ্যা জানি না তবে শুনতে পাই অভিবাসনের বিরোধিতা করেছিলেন বলেই ডোনাল্ড ট্রাম্প পরাজিত হয়েছিলেন। যদিও আমার সেটি মনে হয় না। জয় কিংবা পরাজয় কোনো একটি নির্দিষ্ট বিষয়ের ওপর কখনই নির্ভর করে না। তবে এটা ঠিক যে, আমেরিকার রাজনীতিতে অভিবাসন নীতি খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি ইস্যু। আর ব্যক্তিগত ভাবে আমি মনে করি বর্ণবাদের রাশ টেনে ধরাটাও দরকার খুব।

আর চাক শুমার, যিনি দীর্ঘ চব্বিশটি বছর ধরে শুধু আমেরিকানদেরই নয়, অভিবাসীদেরও পছন্দের মানুষ ও আস্থার প্রতীক হয়ে সিনেটরের দায়িত্বটি পালন করে চলেছেন, তাঁকে তো আমরা প্রেসিডেন্ট হিসেবে চাইতেই পারি। আনিসুজ্জামান মুহাম্মদ কি এই বাস্তবতাটি অনুধাবন করতে পেরেছেন? ক্ষমতা হলো সমাজকে পরিবর্তন কিংবা প্রভাবিত করতে পারার একটি সনদ। আমি চাই এই ক্ষমতাটি এবারে চাক শুমারকে দেওয়া হোক। সমাজে তো ভদ্রলোকের যথেষ্ট প্রভাব রয়েছেই, এখন তবে পরিবর্তনটি আসুক। পরেরবার সিনেটর চাক শুমারের সঙ্গে দেখা হলে তাঁকে বলতে হবে, মি. শুমার, আপনি প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন না কেন?

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension