আন্তর্জাতিক

রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান

চীনের নতুন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিং ক্যাং আফ্রিকায় তার প্রথম সফরকালে সোমবার রাতে ঢাকায় এক যাত্রাবিরতি করেন। এ সময় তার সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে দ্রুত রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে চীনের উদ্যোগ কামনা করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সঙ্গে বিভিন্ন ইস্যুতে চীনের সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অঙ্গীকার করেছেন।

বৈঠকে দ্বিপক্ষীয় ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ নিয়ে আলোচনা হলেও গুরুত্ব পেয়েছে রোহিঙ্গা ইস্যু। বৈঠকে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন দীর্ঘায়িত হলেও সংকটের সমাধানে তিনিও আশাবাদী। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছেন, সমস্যাটির তাড়াতাড়ি সমাধান না হলে উগ্রবাদের আশঙ্কা রয়েছে।

যেহেতু এরা বাস্তুচ্যুত মানুষ, এদের উগ্রবাদে জড়িয়ে পড়ার আশঙ্কাও রয়েছে। এতে পুরো অঞ্চলের শান্তি বিঘ্নিত হবে। আমরা বিশ্বাস করি, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে চীন আরও আন্তরিক হবে এবং তাদের সহযোগিতা অব্যাহত থাকবে। চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তাতে একমত হয়েছেন। রোহিঙ্গাদের দ্রুত প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে কাজ করার ব্যাপারে চীন আগেও একাধিকবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এখন পর্যন্ত এর জোরালো কোনো প্রতিফলন আমরা লক্ষ করিনি। এক্ষেত্রে চীনের ভূমিকা আরও সুস্পষ্ট ও সম্প্রসারিত হওয়া উচিত বলে মনে করি আমরা।

বাংলাদেশে আশ্রিত রোহিঙ্গারা ইতোমধ্যে নানারকম সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়েছে। তাদের কারণে আমাদের দেশের পরিবেশ দূষিত হচ্ছে। আমাদের পক্ষে রোহিঙ্গাদের ভার বেশিদিন বহন করা সম্ভব নয়। মিয়ানমারের উচিত হবে রোহিঙ্গাদের দ্রুত ফিরিয়ে নেওয়া। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারের ওপর যথাযথ চাপ প্রয়োগ করা। এ ব্যাপারে তাদের এই নীরবতা; এমনকি চীন, ভারত বা রাশিয়ার মতো দেশগুলোর মিয়ানমারের সামরিক জান্তার প্রতি সমর্থন বা এ ব্যাপারে তাদের নীতি পুনর্বিবেচনা করা উচিত। দ্রুত রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান না হলে নানা ঘাত-প্রতিঘাত সৃষ্টি হতে পারে এবং বিভিন্ন গোষ্ঠী এ সুযোগ নিয়ে শুধু বাংলাদেশ নয়, পুরো অঞ্চলটিতেই একটা অস্থিতিশীল অবস্থার সৃষ্টি করতে পারে। কারণ এ ধরনের অরক্ষিত জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন স্বার্থান্বেষী মহল ব্যবহার করে থাকে। কাজেই আমাদের এ ব্যাপারে বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। লক্ষ করা যায়, বিশ্বে নতুন করে অন্য কোনো বড় সংকট সৃষ্টি হলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আগ্রহ এক ইস্যু থেকে অন্য ইস্যুতে চলে যায়। রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন দেরি হলে এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আগ্রহ কমে যেতে পারে।

ইতঃপূর্বে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে মিয়ানমার সরকার বারবার আশ্বাস দিলেও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে ন্যূনতম পদক্ষেপও নেয়নি। বৃহৎ শক্তিগুলোও মিয়ানমারের ওপর মৌখিক চাপ প্রয়োগের বেশি কিছু করেনি। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মিয়ানমারের নির্লিপ্ততার এটাই প্রধান কারণ। তারপরও রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সমর্থন লাভের ওপরই আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। এজন্য অব্যাহত রাখতে হবে কূটনৈতিক তৎপরতা। বিশেষ করে এ ইস্যুতে চীন, রাশিয়া ও ভারতের সমর্থন আমাদের জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। দেশগুলো যাতে বাণিজ্যিক ও কৌশলগত স্বার্থের চেয়ে এক্ষেত্রে নৈতিক, মানবিক ও আন্তর্জাতিক আইনগত বিষয়গুলোকে প্রাধান্য দেয়, সে লক্ষ্যে জোর প্রয়াস চালাতে হবে আমাদের। আন্তর্জাতিক পদক্ষেপের মাধ্যমেই রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে এবং তাদের নিরাপত্তা দিতে মিয়ানমারকে বাধ্য করাতে হবে।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension