যুক্তরাষ্ট্র

চীনা পণ্যে অতিরিক্ত ১০০ ভাগ শুল্ক আরোপের হুমকি ট্রাম্পের

আগামী মাসে চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ১০০ ভাগ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। এর অর্থ আগে যে পণ্য ১০০ ডলারে আমদানি করতে পারতেন আমদানিকারকরা, এই শুল্ক কার্যকর হলে তা আমদানি করতে খরচ করতে হবে কমপক্ষে ২০০ ডলার। এর ফলে বাজার অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে ট্রাম্প আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বপূর্ণ সফটওয়্যারের রপ্তানির ওপরও নিয়ন্ত্রণ আরোপ করবে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।

এর আগে শুক্রবারের এক পোস্টে চীনের বিরল খনিজ রপ্তানির নিয়ম কঠোর করার সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে ট্রাম্প বলেন, চীন অত্যন্ত শত্রুভাবাপন্ন আচরণ করছে এবং বিশ্বের অর্থনীতিকে বন্দি করতে চাইছে। তিনি হুমকি দেন, তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংয়ের সঙ্গে নির্ধারিত বৈঠক বাতিলও করতে পারেন। পরে সাংবাদিকদের জানান, বৈঠকটি এখনো বাতিল করেননি। তবে বৈঠকটি আদৌ হবে কি না সে ব্যাপারে নিশ্চিত নন।

ট্রাম্পের এই মন্তব্যের পর যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ারবাজারে পতন ঘটে। এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ২.৭ ভাগ নিচে নেমে আসে। এটা এপ্রিলের পর সবচেয়ে বড় পতন। চীন বিশ্বের বিরল খনিজ এবং আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামালের প্রধান উৎপাদক। এসব পদার্থ গাড়ি, স্মার্টফোন এবং বহু ইলেকট্রনিক পণ্যে ব্যবহৃত হয়। এর আগে ট্রাম্প যখন এ বছরের শুরুতে চীনা পণ্যের ওপর শুল্ক বাড়িয়েছিলেন, তখন বেইজিং রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ কঠোর করে। এর ফলে অনেক মার্কিন প্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এমনকি গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফোর্ড’কেও সাময়িকভাবে উৎপাদন বন্ধ রাখতে হয়।

এবার চীন শুধু রপ্তানি নিয়ন্ত্রণই কঠোর করেনি, বরং মার্কিন প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান কোয়ালকমের বিরুদ্ধে একচেটিয়া ব্যবসার তদন্তও শুরু করেছে, যা অন্য একটি চিপ নির্মাতা সংস্থাকে অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া বিলম্বিত করতে পারে। যদিও কোয়ালকম যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক প্রতিষ্ঠান, এর ব্যবসার একটি বড় অংশই চীনের ওপর নির্ভরশীল।

বেইজিং আরও ঘোষণা করেছে, যুক্তরাষ্ট্রের মালিকানাধীন বা পরিচালিত জাহাজগুলোর ওপর নতুন বন্দর ফি আরোপ করা হবে।
শুক্রবার এক পোস্টে ট্রাম্প লিখেছেন, চীনে খুব অদ্ভুত কিছু ঘটছে! তারা ক্রমেই শত্রুভাবাপন্ন হয়ে উঠছে।

ওদিকে মে মাসে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন পারস্পরিক পণ্যের ওপর তিন অঙ্কের শুল্ক প্রত্যাহারে সম্মত হওয়ার পর থেকে দু’দেশের মধ্যে এক ধরনের ভঙ্গুর বাণিজ্যিক ‘সমঝোতা’ চলছে। তবে তাতে যুক্তরাষ্ট্রে চীনা পণ্যের ওপর আগের তুলনায় ৩০ ভাগ বেশি শুল্ক এবং চীনে মার্কিন পণ্যের ওপর নতুন ১০ ভাগ শুল্ক বহাল রয়েছে।

এরপর থেকে দুই দেশের কর্মকর্তারা একাধিকবার বৈঠক করেছেন। এসব আলোচ্য বিষয়গুলোর মধ্যে ছিল টিকটক, কৃষিপণ্য আমদানি, বিরল খনিজ বাণিজ্য এবং উন্নত প্রযুক্তি যেমন সেমিকন্ডাক্টর। এ মাসে দক্ষিণ কোরিয়ায় একটি শীর্ষ সম্মেলনে আবারও দুই দেশের বৈঠক হওয়ার কথা ছিল।

ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশন-এর চীনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ জনাথন জিন বলেছেন, শি জিনপিংয়ের সাম্প্রতিক পদক্ষেপ আসন্ন বৈঠককে প্রভাবিত করার কৌশল মাত্র। কারণ চীনের নতুন রপ্তানি বিধিনিষেধ সঙ্গে সঙ্গে কার্যকর হচ্ছে না।

জনাথন জিন বলেন, তিনি পরিস্থিতির নিয়ন্ত্রণ নিতে চাইছেন। ট্রাম্প প্রশাসন একের পর এক সমস্যার জবাব দিতে বাধ্য হচ্ছে, যেন ‘হুই্যাক-এ-মোল’ খেলার মতো। তিনি আরও বলেন, চীন সম্ভবত মার্কিন প্রতিক্রিয়া নিয়ে খুব একটা চিন্তিত নয়। চীনের ধারণা, আগের শুল্কবৃদ্ধি ও তার পরের টানাপোড়েনের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে- চীনের সহ্যশক্তি অনেক বেশি। তাদের মতে, শেষ পর্যন্ত ট্রাম্প প্রশাসনই পিছু হটেছিল।

পূর্ববর্তী বাণিজ্য আলোচনাগুলোয় চীন দাবি করে, যুক্তরাষ্ট্র যেন সেমিকন্ডাক্টরের ওপর নিষেধাজ্ঞা শিথিল করে। পাশাপাশি তারা স্থিতিশীল শুল্কনীতি চায়, যাতে মার্কিন বাজারে তাদের ব্যবসা সহজ হয়। শি জিনপিং পূর্বেও বিরল খনিজ উৎপাদনে চীনের প্রভাবকে কূটনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেছেন। তবে এ সপ্তাহে প্রকাশিত নতুন রপ্তানি বিধিনিষেধ মূলত বিদেশি প্রতিরক্ষা শিল্পের কোম্পানিগুলিকে লক্ষ্য করে তৈরি, যা পরিস্থিতিকে আরও গুরুতর করে তুলেছে বলে মনে করেন গ্রেসেলিন বাস্কারান। তিনি ওয়াশিংটনভিত্তিক সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের ক্রিটিক্যাল মিনারেলস সিকিউরিটি প্রোগ্রামের পরিচালক। তিনি বলেন, আমেরিকার প্রতিরক্ষা শিল্পকে লক্ষ্য করা হলে তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। যুক্তরাষ্ট্রকে এখন আলোচনা টেবিলে ফিরতেই হবে। কারণ আমাদের বিকল্প সীমিত।ভূরাজনৈতিক উত্তেজনা ও সম্ভাব্য সংঘাতের এই যুগে আমাদের প্রতিরক্ষা শিল্পভিত্তি শক্তিশালী করতে হবে। যদিও এখন ট্রাম্প-শি বৈঠক অনিশ্চিত বলে মনে হচ্ছে, তবুও বাস্কারান বলেন, বৈঠকের সম্ভাবনা পুরোপুরি শেষ হয়নি।

তিনি বলেন, চীনের নতুন নিয়মগুলো ডিসেম্বরের আগে কার্যকর হবে না। তাই এখনো আলোচনার সময় আছে। আলোচনা শিগগিরই শুরু হতে পারে- কোথায় এবং কার নেতৃত্বে হবে, তা সময়ই বলে দেবে।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension