প্রধান খবরবইমেলা

৩০০-৩৫০ টাকার বই এখন ৫০০-৫৫০ টাকা

 

‘পড়ো বই গড়ো দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’ প্রতিপাদ্য নিয়ে বুধবার (১ ফেব্রুয়ারি) উদ্বোধন হয়েছে অমর একুশে বইমেলার। এবারে ৮৯২ স্টল ও ৩৮ প্যাভিলিয়নে অংশ নিচ্ছে ৬০৯ প্রকাশনা সংস্থা।

প্রতি বছর মেলা শুরুর সপ্তাহে বইপাড়ায় ব্যস্ততা বেশি দেখা গেলেও এবার কিছুটা ব্যতিক্রম। ডলারের মূল্য বৃদ্ধির কারণে গেল দুই মাসে পাইকারি বাজারে কাগজের দাম বেড়েছে। তার প্রভাব পড়েছে প্রকাশনা শিল্পে। বাংলাবাজার, ফকিরাপুল ও কাঁটাবনের ছাপাখানা ঘুরে দেখা গেল, মেলা শুরু হলেও বই প্রকাশের চাপ অন্য বছরের তুলনায় কম।

কাগজের অস্বাভাবিক মূল্যবৃদ্ধিকে এবারের বইমেলার সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ মনে করছেন প্রকাশকরা। তারা বলছেন, কাগজের দাম বাড়ার বিরূপ প্রভাব পড়বে মেলায়। ইতোমধ্যে প্রকাশিত বইয়ের দাম বেড়েছে অনেকটা। কমেছে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা।

শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) বইমেলা ঘুরে দেখা গেল, প্রায় সব বইয়ের দাম দ্বিগুণ বেড়েছে। শিশুদের ছোট ছোট বইয়ে দাম বেড়েছে আগের চেয়ে ৫০-৭০ টাকা করে। গত বছর যে বই বিক্রি হয়েছিল ৩০০-৩৫০ টাকায় এবার সেই বই বিক্রি হচ্ছে ৫০০-৫৫০ টাকায়। দাম বাড়ার ফলে সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়েছেন নতুন লেখকরা। প্রকাশনী সংস্থাগুলো নতুন লেখকদের বই প্রকাশের ঝুঁকি নিতে চাচ্ছে না। বিক্রি বেশি হওয়া ও পাঠকপ্রিয়তার কারণে তারা পুরাতন ও পরিচিত লেখকদের বই প্রকাশ করছেন।

প্রকাশনা সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, ১০ বছরের মধ্যে এবারের মেলায় সবচেয়ে কম নবীন লেখকদের বই প্রকাশ হবে।

এ ব্যপারে জনপ্রিয় লেখক অধ্যাপক জাফর ইকবাল বলেন, “কাগজের দাম বাড়ার কারণে এবার বইয়ের দাম একটু বেশি। তবে এরপরও মানুষ বইমেলায় আসবে, বই কিনবে। বাবা-মায়েরা সন্তানদের মেলায় নিয়ে আসবে, ঘুরবে, বই কিনে দেবে। পাশাপাশি প্রকাশকদের অনুরোধ করব শিশুদের বইয়ে লাভ কম নিয়ে যেন সহনীয় দামে বিক্রি হয়।”

তিনি বলেন, “ছোট বাচ্চাদের মোবাইলে আসক্তি ভয়াবহ। বাবা মায়ের উচিত সন্তানদের মোবাইল থেকে দূরে রেখে বই হাতে তুলে দেওয়া। একবার যদি সন্তানদের বই পড়তে আগ্রহী করা যায় আজীবন তারা বই পড়বে। আর কোমলমতি বাচ্চাদের বলব, তোমরা বই পড়ো জীবন বদলে যাবে।”

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ২০২০ সালে মেলায় ৮২ কোটি টাকার বই বিক্রি হলেও মহামারি করোনাভাইরাসের সংক্রমণের ফলে ২০২১ সালে মাত্র ৩ কোটি ১১ লাখ এবং ২০২২ সালে তা বেড়ে গিয়ে বিক্রি হয় ৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকার বই। তবে এবারের বইমেলায় বিক্রি কেমন হয় তা নিয়ে দুশ্চিন্তা রয়েছে লেখক-প্রকাশক মহলে।

কাগজের দাম বৃদ্ধি নিয়ে ২০২২ সালে কয়েক দফা সংবাদ সম্মেলন করেছেন প্রকাশকরা। এর আগে, ২৬ নভেম্বর ‘বাংলাদেশ লেখক পাঠক প্রকাশক পরিষদ’ এক সংবাদ সম্মেলনে ১৫ দফা প্রস্তাব পেশ করে।

অন্যদিকে ২১ নভেম্বর সময় প্রকাশনের প্রধান নির্বাহী ফরিদ আহমেদ, অনন্যা প্রকাশনীর স্বত্বাধিকারী মনিরুল হক, কাকলি প্রকাশনীর প্রকাশক এ কে নাছির আহমেদ, আবিষ্কার প্রকাশনীর দেলোয়ার হাসান, জাতীয় সাহিত্য প্রকাশের অধিকারী কমল কান্তি দাস, সমগ্র প্রকাশনের প্রকাশক শওকত আলী ও মুক্তচিন্তার কর্ণধার শিহাব বাহাদুর ‘সৃজনশীল প্রকাশক ঐক্য’র ব্যানারে আরেকটি সংবাদ সম্মেলনে জানান, কাগজের মূল্যবৃদ্ধিতে দেশের প্রকাশনা খাত বড় ধরনের বিপর্যয়ে পড়েছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণে কাগজের দাম কমানোর দাবি জানানো হয়।

সিসিমপুর এর বিজনেস ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার সজীব আহমেদ জানান, ২০২০ সালের মেলায় শিশুদের জন্য তারা ৬০টি বই প্রকাশ করলেও, এবার মাত্র ১৯টি বই প্রকাশ করেছেন।

ফুলকি প্রকাশনীর তৌহিদুজ্জামান বলেন, ২৭ বছর ধরে প্রকাশনা ব্যবসার সাথে জড়িত। ২০০০ সাল থেকে নিয়মিত বইমেলায় তার প্রকাশনী অংশ নিচ্ছে। করোনা মহামারীর জন্য ২১ ও ২২ সালের বইমেলায় বিক্রি কম হওয়ায় লস হয়েছিল প্রকাশনী সংস্থাগুলোর। তারা মনে করেছিলেন এবার সেই ক্ষতি কাটিয়ে উঠবেন। কিন্ত কাগজের দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি রং, প্রিন্টিং, ছবি, ডিজাইন ও লেবার খরচ বেড়ে যাওয়ায় বইয়ের দাম বাড়াতে হয়েছে। দাম বাড়ার সাথে সাথে মানুষের সক্ষমতা যদি বাড়ত তাহলে এই সংকট তৈরি হতো না বলে তিনি মনে করেন।

লাবনী প্রকাশনীর নীলয় হুসেন জানান, আগে যে কাগজের রিম ৩ হাজার টাকায় পাওয়া যেত এখন তা কিনতে হচ্ছে ৫ হাজার টাকায়। কাগজের দাম বাড়ায় বইয়ের দাম বেড়েছে।

দেশ রূপান্তর

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension