আন্তর্জাতিকপ্রধান খবরভারতরাজনীতি

গুলি করে মারা হয়েছে, এই প্রথম স্বীকার করল উত্তরপ্রদেশ পুলিশ

নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনকে কেন্দ্র করে গত ১১ ডিসেম্বর থেকে বিক্ষোভে উত্তাল ভারত। পুরো ভারতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে অন্তত ২২ জন নিহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে কেবল উত্তর প্রদেশেই ১৫ জন নিহত হন। রণক্ষেত্রে পরিণত হয় পুরো রাজ্য।নিহতদের বেশির ভাগেরই দেহ মিলেছে বুলেটবিদ্ধ অবস্থায়। বিক্ষোভকারীদের দাবি নিহতদের অধিকাংশই পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন। তবে শুরু থেকেই এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছিল পুলিশ। রাজ্য পুলিশ দাবি করেছিলো তাদের বন্দুক থেকে একটি গুলিও বের হয়নি।

তারই ধারাবাহিকতায় অবশেষে মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে, নাগরিকত্ব সংশোধনী আইন বিরোধী বিক্ষোভে, বিক্ষোভকারীদের উপর গুলি চালানোর কথা  স্বীকার করল উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। বিজনৌরের পুলিশ সুপারের হিসেবে, শুধু ওই জেলাতেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মৃত্যু হয়েছে সুলেমান এবং আনিস নামের দু’জনের। নিহত দুই জনের একজন পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে রয়েছেন আইএএস পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত হচ্ছিলেন এমন এক ছাত্রও। এর আগে রাজ্য পুলিশের ডিজি ও পি সিংহ সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘‘আমরা বিক্ষোভকারীদের উপর একটা গুলিও চালাইনি।’’

মঙ্গলবার এক সংবাদ সম্মেলনে বিজনৌরে জেলা পুলিশ গুলি চালানোর কথা স্বীকার করে। বিজনৌরের এই পুলিশ সুপার সঞ্জীব ত্যাগী বলেছেন, ‘‘গত শুক্রবার বিজনৌরে বিক্ষোভকারীরা পুলিশের বন্দুক লুঠের চেষ্টা করে। সেই বন্দুক কুড়িয়ে আনতে গেলে এক কনস্টেবলকে লক্ষ্য করে গুলি চালান বিক্ষোভকারীরা। অল্পের জন্য বেঁচে যান পুলিশকর্মী। তার পালানোর উপায় ছিলো না।  এর পর আত্মরক্ষার্থে দাঙ্গাকারীদের উপর পুলিশ পাল্টা গুলি চালায়। তাতে সুলেমান নামে ২০ বছরের এক তরুণের মৃত্যু হয়েছে। আনিস নামে আরও এক জনের মৃত্যু হয়েছে, তবে সেটা বিক্ষোভকারীদের ভিড়ের মধ্য থেকে ছোঁড়া গুলিতে।’’

ভারতে নাগরিকত্ব সংশোধন আইনের বিরোধীতা করে গত বৃহস্পতিবার থেকেই বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে উত্তর প্রদেশ রাজ্য। সেখানে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের তুমুল সংঘর্ষের ঘটনায় অন্তত ১৫ জন নিহত হন। যাদের অধিকাংশেরই গুলিবিদ্ধ লাশ উদ্ধার করা হয়।

ও দিকে, রাজ্য পুলিশের ডিজি ও পি সিংহ এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানিয়েছেন, লখনউয়ে বৃহস্পতিবারের হিংসার ঘটনার পিছনে ছিল ‘পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া (পিএফআই)’ নামে একটি মুসলিম সংগঠন। দিল্লিতে তাদের কেন্দ্রীয় দফতর।

সুলেমানের পরিবার জানিয়েছে, তিনি আইএএস পরীক্ষার জন্য তৈরি হচ্ছিলেন। সুলেমানের ভাই শোয়েব মালিকের কথায়, ‘‘আমার ভাই নমাজ পড়তে গিয়েছিল। নমাজ পড়ে খাওয়ার জন্য ও বাড়িতে ফিরছিল। কয়েক দিন ধরে জ্বরে কাবু হয়ে ছিল আমার ভাই। ও মসজিদ থেকে বেরিয়েই দেখে সামনে পুলিশ লাঠি চালাচ্ছে। কাঁদানে গ্যাস ছুড়ছে। পুলিশ ওকে তুলে নিয়ে গিয়ে গুলি করে।’’

রবিবার বিজনৌরে সুলেমান ও আনিসের বাড়িতে গিয়ে তাঁদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন কংগ্রেস নেত্রী প্রিয়ঙ্কা গাঁধী।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension