অগ্নিঝরা মার্চমুক্তিযুদ্ধ
অগ্নিঝরা মার্চ- ৩০ মার্চ ১৯৭১
৩০ মার্চ ১৯৭১
বর্বর পাকিস্তানি বাহিনী রংপুর ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হয়ে রংপুর শহর ও সংলগ্ন গ্রামগঞ্জের ওপর নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। এতে বহু লোক প্রাণ হারায়। পাশাপাশি পাকিস্তানি বাহিনী আগুন জ্বালিয়ে বাড়িঘর-মহল্লা-গ্রাম ধ্বংস করে এবং পাশবিক অত্যাচার চালায়।
চট্টগ্রামের লালখান বাজারে বর্বর পাকিস্তানী বাহিনী ও বিহারী এবং রাজাকাররা মিলে হত্যা করে প্রায় আড়াই হাজার বাঙালি। এই দিন ‘ওয়াসার মোড়ের কল হতে পানি দেওয়া হচ্ছে’ এমন প্রতারণামূলক গুজব রটিয়ে জড়ো করা হয় বাঙালিদের। এরপর শত শত বাঙালিকে হানাদার সেনারা নির্মমভাবে গুলি করে হত্যা করে। রাতেই চলে বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে মানুষ হত্যা। চট্টগ্রামের লালখান পুরো মৃত্যুপুরী হয়ে ওঠে।
সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পক্ষে চট্টগ্রাম স্বাধীন বাংলা বিপ্লবী বেতার কেন্দ্র বাংলাদেশকে স্বীকৃতি ও সাহায্য দানের জন্য বিশ্বের সব গণতান্ত্রিক সরকার ও জনগণের প্রতি পুনরায় আবেদন জানায়।
সকাল ৮টায় ১০৭তম ব্রিগেড কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার এস এ আর দুররানী যশোর সেনানিবাসের অস্ত্রাগারের চাবি নিজের কাছে নিয়ে নেয়।
বিকেল ৫টার দিকে মতিন পাটোয়ারীর নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনস্ দখল করেন।
নাটোরের লালপুরে ‘ময়নার যুদ্ধে’ হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে সুদৃঢ় প্রতিরোধ গড়ে তোলে সাঁওতাল ও বাঙালিরা। সম্মুখ যুদ্ধে সাঁওতাল তীরন্দাজসহ ৪০ জন বাঙালি শহীদ হন। জনতা, তৎকালীন ইপিআর ও আনসার বাহিনীর কাছে পর্যুদস্ত হয় ২৫নং পাঞ্জাব রেজিমেন্ট।
ময়নার যুদ্ধে তিনটি জেট বিমান আকাশে চক্কর দিতে থাকে। একটি হেলিকপ্টার খাদ্য ও রসদ যোগান দেয় হানাদারদের। যুদ্ধে ৪০ জন শহীদ হলেও ১৫ জন শহীদের নাম শনাক্ত করা হয়। অপরদিকে ক্ষেতের মধ্যে তীর ও গুলিবিদ্ধ ৭ জন পাকিস্তানি সেনার লাশও পাওয়া যায়। যুদ্ধে পর্যুদস্ত হয়ে হানাদার সেনারা রাতের আঁধারে ছোট দলে বিভক্ত হয়ে পালাতে থাকে। পরদিন পাশের ধান ও গম ক্ষেতসহ বিভিন্ন স্থানে লুকিয়ে থাকা পাকিস্তানি বাহিনীর নেতৃত্বদানকরী মেজর রাজা আসলামসহ কয়েকজন ধরা পড়ে। পরে তাদের নিয়ে এসে লালপুর এস এস পাইলট হাইস্কুল মাঠে এক সংক্ষিপ্ত বিচারের পর গুলি করে হত্যা করা হয়। সেই সঙ্গে বিলুপ্ত হয় ২৫নং পাঞ্জাব রেজিমেন্ট।
গোদাবাড়ীতে অবস্থানরত ইপিআর বাহিনীর ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর সর্বাত্মক আক্রমণে সিপাহি আবদুল মালেক শহীদ হন।
৩০ ও ৩১ মার্চ গাংনী উপজেলায় পাকিস্তানী বাহিনীর সাথে আনসার-মুজাহিদ ও সাধারণ জনগণের লড়াই হয়।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী তাদের পার্লামেন্টে বলেন, ‘পূর্ব বঙ্গের সাড়ে সাত কোটি লোক তাদের স্বাধীনতার জন্য যে সংগ্রাম শুরু করেছেন, ভারত তাকে সাহায্য না করে পারে না। ভারত তাই সংগ্রামে সাহায্য করেই যাবে।’
মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সৌজন্যে