
অনিবন্ধিত ক্লিনিক-ডায়াগনস্টিক সেন্টারের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা জরুরি
আমাদের দেশের বেসরকারি হাসপাতাল সম্পর্কে অনেক অভিযোগ আছে। এসব হাসপাতাল শুধু ব্যাবসায়িক দিকটিই প্রাধান্য দেয় বলে শোনা যায়। এসব হাসপাতালে পূর্ণকালীন কোনো চিকিৎসক থাকেন না। সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসকদের ডেকে এনে চিকিৎসাব্যবস্থা চালু রাখা হয়।
আবার ভুয়া ডাক্তার কিংবা ভেজাল ওষুধের অভাব নেই আমাদের দেশে। অন্যদিকে দেশজুড়েই অনেক হাসপাতাল, চিকিৎসাকেন্দ্র নানা অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে গড়ে উঠেছে। ব্যক্তি পর্যায়ে গড়ে ওঠা বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠান যথাযথ অনুমোদন বা প্রক্রিয়া পালন করে না। এসব হাসপাতালে রোগীরা আসছে, অর্থ ঢালছে; কিন্তু সুস্থ হচ্ছে না।
দেশের অনিবন্ধিত সব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বন্ধের নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। গত বৃহস্পতিবার অধিদপ্তরের এক তথ্য বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, আগামী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে দেশের অনিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো বন্ধ করতে হবে।
যেসব প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন গ্রহণ করেছে, কিন্তু নবায়ন করেনি—তাদের নিবন্ধন নবায়নের জন্য একটি সময়সীমা দিতে হবে। আরো বলা হয়েছে, বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকগুলোতে অপারেশন করার সময় অ্যানেসথেসিয়া দেওয়া এবং ওটি অ্যাসিস্ট করার ক্ষেত্রে নিবন্ধিত ডাক্তার ছাড়া অন্যদের রাখা হলে সেসব প্রতিষ্ঠান ও জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে লাইসেন্স বাতিলসহ কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
এছাড়া যেসব প্রতিষ্ঠান নতুন নিবন্ধনের আবেদন করেছে তাদের লাইসেন্স দেওয়ার কার্যক্রম দ্রুত শেষ করতে হবে। লাইসেন্সপ্রাপ্তির আগে এসব প্রতিষ্ঠান কার্যক্রম চালাতে পারবে না। প্রশ্ন উঠতে পারে, দেশে অনিবন্ধিত হাসপাতাল-ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা কত এ তথ্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আছে তো?
দেশের দরিদ্র মানুষের কাছে এখনো প্রধান ভরসা সরকারি হাসপাতাল। অভিযোগ আছে, সেখানেও রোগীরা ঠিকমতো সেবা পায় না। সরকারি হাসপাতালের অনেক চিকিৎসককে কর্মসময়ের মধ্যেও নিজ কর্মক্ষেত্রে পাওয়া যায় না। তাঁরা সেই সময় প্রাইভেট ক্লিনিক বা হাসপাতালে ছুটে বেড়ান। অনেক চিকিৎসক নামে-বেনামে একাধিক ক্লিনিক খুলে ব্যবসা করছেন। সরকারি হাসপাতালে দালালের উৎপাত তো আছেই।
সরকারি হাসপাতালের এক্স-রে মেশিনসহ অনেক যন্ত্রপাতিই বিকল হয়ে থাকে, রোগীদের পাঠানো হয় নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে। বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকের একটি বড় অংশেরই কোনো অনুমোদন নেই। যেগুলোর অনুমোদন আছে সেগুলোও সঠিকভাবে নিয়ম-কানুন মানে না। বেড অনুযায়ী ন্যূনতম যে কজন চিকিৎসক থাকার কথা বাস্তবে তার অর্ধেকও পাওয়া যায় না। প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নার্স খুব কম ক্লিনিকেই পাওয়া যায়। সেই সঙ্গে আছে অনুমোদনহীন হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সীমাহীন প্রতারণা।
আমরা চাই, সুষ্ঠু তদারকি হোক। হাসপাতাল-ক্লিনিকের মতো সেবা খাত যেন আর অবৈধ, ভুয়া ব্যক্তির দখলে না থাকে—এটাই সংশ্লিষ্টদের কাছে আমাদের প্রত্যাশা।