সম্পাদকীয়

ঋষি সুনাককে অভিনন্দন

যুক্তরাজ্যের ৫৭তম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বগ্রহণ করেছেন কনজারভেটিভ পার্টির নেতা ঋষি সুনাক।

গত মঙ্গলবার বাকিংহাম প্যালেসে রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে নতুন সরকারপ্রধানের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন তিনি। তাকে শুভেচ্ছা জানাই।

ঋষি সুনাক প্রথম এশীয় বংশোদ্ভূত নেতা হিসেবে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন। বিগত ২০০ বছরের মধ্যে দেশটির কনিষ্ঠতম প্রধানমন্ত্রীর রেকর্ডও করেছেন তিনি। রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ পরবর্তী যুগে শপথ নেয়া প্রথম ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ঋষি সুনাকের কাছে আমাদের প্রত্যাশা অনেক।

এমন এক সময়ে ঋষি সুনাক প্রধানমন্ত্রিত্ব গ্রহণ করলেন যখন জ্বালানিসহ বিভিন্ন সংকটের কারণে দেশটিতে বেড়ে গেছে জীবনযাত্রার ব্যয়। তার সামনে চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে মুদ্রাস্ফীতি, শ্রম-দ্ব›দ্ব এবং একটি সংকটাপন্ন স্বাস্থ্যব্যবস্থা। এই অস্থিতিশীল সময়ে আমরা আশা করব, তার সরকার এমন পদক্ষেপ গ্রহণ করবে যা যুক্তরাজ্য তথা পুরো বিশ্বের জন্য মঙ্গলময় হবে।

৪২ বছর বয়সি ঋষি সুনাকের জন্ম ১৯৮০ সালে দক্ষিণ-পূর্ব যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটনে। পিতা যশবীর সুনাক যুক্তরাজ্যে একজন জেনারেল প্র্যাকটিশনার এবং মা ঊষা সুনাক ফার্মাসিস্ট হিসেবে কাজ করতেন। তিন ভাই-বোনের মধ্যে ঋষিই সবার বড়। যুক্তরাজ্যের রমসি, হ্যাম্পশায়ারের স্ট্রউড স্কুলে শিক্ষাজীবন শুরু করেন তিনি। পরে রাষ্ট্রবিজ্ঞান নিয়ে পড়ালেখা করেন। অক্সফোর্ডের লিঙ্কন কলেজে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি।

২০১৫ সালে ইয়র্কশায়ারের রিচমন্ড আসন থেকে প্রথমবারের মতো এমপি নির্বাচিত হন ঋষি সুনাক। থেরেসা মে প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন তিনি স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৯ সালে বরিস জনসন প্রধানমন্ত্রী হলে অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পান। তবে বাজেট জটিলতায় পদত্যাগ করেন। তার পদত্যাগে বরিস জনসন সরকারের ওপর চাপ বেড়ে গেলে তিনিও পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এরপর বরিসের উত্তরসূরি হওয়ার প্রতিযোগিতায় নামেন ঋষি। তবে শেষ পর্যন্ত লিজ ট্রাসের কাছে হেরে যান।

কিন্তু এবার আর ঋষির পথে কেউ বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারেন নি। তার দুই প্রতিদ্বন্দ্বী বরিস জনসন ও পেনি মর্ডান্ট প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেয়ায় বিনাপ্রতিদ্বিন্দ্বতায় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী হলেন এশীয় বংশোদ্ভূত এই নেতা। ঋষি পূর্বসূরিদের প্রশংসা করে তাদের ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে পথচলার অঙ্গীকার করে ১০ নম্বর ডাউনিং স্ট্রিটে বক্তৃতা দিয়েছেন। দেশের চাহিদাকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখা এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো ত্রুটিগুলো সংশোধন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। বিশ্বের যেখানেই সংকট হোক না কেন তার কোনো না কোনো প্রভাব আমাদের দেশেও পড়ে।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের প্রভাবে বিশ্ব রাজনীতি-অর্থনীতি অস্থিতিশীল পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। আমরা এমন পরিস্থিতি চাই না। যুক্তরাজ্যের সামনে রয়েছে অর্থনৈতিকসহ বেশকিছু চ্যালেঞ্জ। এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় ঋষি সুনাকের সরকার প্রতিটি স্তরে সততা, পেশাদারিত্ব এবং জবাবদিহিতার যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তার বাস্তবায়ন আমরা আগামীতে দেখব আশা করি। ঋষি ব্রিটিশ নাগরিকদের আশার বাণী শুনিয়েছেন। কর কমানোর পাশাপাশি যুক্তরাজ্যের অর্থনীতিকে সামনে এগিয়ে নিতে পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।

আমরা ঋষি সুনাকের সাফল্য কামনা করে তাকে অভিনন্দন ও শুভ কামনা জানাই।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension