ভারত

‘তোমাদের মারবো না, মোদিকে সব জানাও গিয়ে’, কাশ্মীর হামলায় নিহতের স্ত্রীকে সন্ত্রাসী

কাশ্মীরে সন্ত্রাসী হামলায় চোখের সামনে স্বামীকে মারা যেতে দেখেন পল্লবী। শোকে মুহ্যমান অবস্থায় এক হামলাকারীর মুখোমুখি হয়ে বলেন, স্বামীর সঙ্গে তাকেও মেরে ফেলা হোক। তবে ওই সন্ত্রাসী জবাব দেয়, পল্লবী ও তার ছেলের কোনও ক্ষতি করা হবে না, তারা যেন বরং ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে ঘটনার আদ্যোপান্ত প্রকাশ করেন।

স্থানীয় সংবাদমাধ্যমকে তিনি ফোনে বলেন, আমরা ঘোড়ায় চড়ে পাহেলগামে গিয়েছিলাম। আমাদের ছেলে সকাল থেকে কিছু খায়নি। তাই আমার স্বামী কিছু খাবার আনতে গিয়েছিল। এরপরই আমি হঠাৎ গুলির আওয়াজ শুনি। প্রথমে ভেবেছিলাম সেনাবাহিনী ফাঁকা গুলি করেছে। পরে দেখি ভীতসন্ত্রস্ত লোকজন ছোটাছুটি করছে।

স্বামী মঞ্জুনাথ এবং ১৮ বছর বয়সী ছেলে অভিজেয়াকে নিয়ে কর্ণাটক রাজ্যের শিভামোজ্ঞাতে বাস করেন পল্লবী। তিনি একটি ব্যাংকে ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত আছেন। মঞ্জুনাথ ছিলেন একজন আবাসন ব্যবসায়ী। ১৯ এপ্রিল কাশ্মীর পৌঁছান তারা। ২৪ তারিখ ঘরে ফেরার কথা ছিল।

ভারতের সরকারি কর্মকর্তাদের বরাতে রয়টার্স জানিয়েছে, মঙ্গলবার দক্ষিণ কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটন এলাকা পাহালগামে সন্ত্রাসী হামলায় অন্তত ২৬ নিহত এবং ১৭ জন আহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে একজন সংযুক্ত আরব আমিরাত এবং একজন নেপালের নাগরিক ছিলেন। এছাড়া দুইজন স্থানীয় বাসিন্দাও রয়েছেন।

মঞ্জুনাথের মরদেহ দেখার কথা স্মরণ করে পল্লবী বলেন, আমি তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে থাকতে দেখি। সেখানে তিন কি চারজন বন্দুকধারীকে আমি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। তাদের একজনের মুখোমুখি হয়ে আমি বলি, আমার স্বামীকে তো মেরেই ফেললে, এখন আমাকেও মারো।

তাদের সন্তান অভিজেয়াও সন্ত্রাসীদের প্রতি মারমুখী হয়ে এগিয়ে যায় বলে উল্লেখ করেন পল্লবী। তিনি বলেন, অভিজেয়া এগিয়ে এসে বলে, কুকুরের দল, আমার বাবাকে তো মেরেই ফেললি। আমাদের বাঁচিয়ে রাখবি কেন। মার, আমাদেরও মার!

তবে ওই ব্যক্তি তাদের হত্যা করতে অস্বীকৃতি জানায়। সে বলে, তোমাদের মারবো না। যাও, মোদিকে জানাও গিয়ে (এখানে কী হয়েছে)।

সন্ত্রাসীরা প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষদের হত্যা করছিল বলে উল্লেখ করেন পল্লবী। তিনি বলেন, সেদিন প্রায় পাঁচশর মতো পর্যটক ছিলেন। তাদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন নবদম্পতি। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কেবল স্বামীদের হত্যা করা হয়েছে। বন্দুকধারীদের পরনে কোনও ইউনিফর্ম ছিল না।

মঞ্জুনাথের মরদেহ নিয়ে ঘরে ফেরার অপেক্ষা করছেন পল্লবী। তিনি বলেছেন, আমি ঘরে ফিরতে চাই। স্বামীর মরদেহ বুঝে পেলেই কেবল আমি ফিরব। আমরা তিনজন একসঙ্গেই বাড়ি যাব। আমি চাই, কর্তৃপক্ষ প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা নিক।

মঞ্জুনাথের মৃত্যুর খবরে তার বাড়ির সবাই ভেঙে পড়েছেন। অথচ তার মা জানেন, ছেলে কিছুটা ব্যথা পেয়েছেন। ছেলের সুস্থভাবে ফিরে আসার অপেক্ষা করছেন মঞ্জুনাথের বৃদ্ধ জননী।

তথ্যসূত্র: এনডিটিভি

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension