
নাইজেরিয়ার স্কুলে নৃশংসতা চলছেই
একটা সময় নাইজেরিয়ার বাইরে খুব বেশি মানুষ বোকো হারামের নাম জানত না। ২০১৪ সালে দেশটির বর্নো রাজ্যের চিবক থেকে ২৭৬ জন ছাত্রীকে অপহরণের পর প্রথমবারের মতো বিশ্ববাসী বোকো হারামের নৃশংসতা সম্পর্কে জানতে পারে।
তখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোতে #ব্রিংব্যাকআউয়ারগার্লস হ্যাশট্যাগ চালু হয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামাকেও ওই ট্যাগ করতে দেখা যায়। মূলত তার হাত ধরেই বিশ্বে বোকো হারামবিরোধী চেতনা গড়ে উঠতে শুরু করে। ওই ২৭৬ জনের মধ্যে ২০১৭ সালে ৮২ জনকে মুক্তি দেয় সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি। এখনো ১১২ ছাত্রী তাদের জিম্মায় আছে।
সম্প্রতি নাইজেরিয়ার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় জানফারা রাজ্যের একটি স্কুল থেকে ২৭ জন ছাত্রকে অপহরণ করা হয়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা ওই অপহরণের জন্য স্থানীয় অপরাধীচক্র বা ডাকাতরাই দায়ী এমনটা বলেন। কিন্তু ওই অপহরণের কায়দার সঙ্গে বোকো হারামের কায়দা মিলে যায়। বোকো হারাম রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বাহিনীকে দুর্বল করার জন্য যেমন শিশুদের অপহরণ করে, তেমনি বিপুল অঙ্কের মুক্তিপণ আদায়ও থাকে গোষ্ঠীটির লক্ষ্য।
নাইজেরিয়ার উত্তরে একটি মুসলিম রাষ্ট্র গড়ার বাসনা থেকে ২০০৯ সালে উত্থান হয় বোকো হারামের। তখন থেকেই এ গোষ্ঠীর সন্ত্রাসীরা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে টার্গেট করছে। বিশেষ করে যে স্কুলগুলোর পাঠ্যক্রম ধর্ম নিরপেক্ষ, সেগুলোতেই বেশি হামলা করা হয়। জাতিসংঘের ইন্টারন্যাশনাল চিলড্রেনস ইমার্জেন্সি ফান্ডের মতে, বোকো হারামের হাতে অন্তত ২ হাজার ২৯৫ জন শিক্ষক নিহত হয়েছেন।
এছাড়া তারা ১ হাজার ৪০০ স্কুল ধ্বংস করেছে। আর অপহরণ করেছে কয়েক হাজার মানুষ, যাদের মধ্যে কয়েকশ শিক্ষার্থী।
বোকো হারামের বর্বর নেতা আবুবকর শেখু পশ্চিমা শিক্ষাবিরোধী। চিবকের ছাত্রীদের অপহরণ করার সময় এ বার্তাটিই প্রচার করতে চেয়েছিল সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটি। শেখুর নেতৃত্বে নাইজারের শুধু স্কুলগুলোতেই হামলা চালাচ্ছে না, পাশাপাশি একাধিক সামরিক ঘাঁটিতে হামলা চালাচ্ছে। জাঙ্গেবে স্কুলে হামলা চালানোর সময় সন্ত্রাসীরা পার্শ্ববর্তী একটি মিলিটারি চেকপোস্টেও হামলা করে। হামলায় অন্তত একজন সেনা নিহত ও অনেকে আহত হয়।
সন্ত্রাসী গোষ্ঠীটিকে দমনে একাধিকবার পদক্ষেপ নিয়েছে নাইজেরিয়ার সরকার ও সেনাবাহিনী। কিন্তু এখন পর্যন্ত কোনো অভিযানেই বোকো হারামের তেমন কোনো ক্ষতি হয়নি। এর কারণ হিসেবে পর্যবেক্ষকরা নাইজেরিয়ার প্রশাসনিক দুর্বলতাকে দায়ী করেন। তাদের মতে, বোকো হারাম যে মতাদর্শে বিশ্বাস করে সেই আদর্শের প্রতি আস্থাভাজন অনেকেই দেশটির প্রশাসনে রয়েছে। তাদের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সমর্থনের কারণে বোকো হারামকে থামানো যাচ্ছে না। ফ্রান্স একাধিকবার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হয়েছে।❐