
বইমেলার নিয়ম ভেঙে ‘স্পোকেন ইংলিশ’ বিক্রি
অমর একুশে বইমেলায় ব্যানার ঝুলিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে ইংরেজী শেখার বিভিন্ন বই। যদিও সৃজনশীল বইয়ের মেলায় এ ধরনের বই বিক্রির সুযোগ নেই বলে জানায় মেলার আয়োজক প্রতিষ্ঠান।
তবে দোয়েল প্রকাশনী এবং তাম্রলিপি মানছে না বইমেলার নীতিমালা। তাদের বিরুদ্ধে বইমেলার নীতিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী।
বইমেলায় লিটলম্যাগ চত্বরের পাশে দোয়েল প্রকাশনীর স্টলে সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, চটকদার ব্যানার ঝুলিয়ে ক্রেতাকে আকর্ষণ করা হচ্ছে। স্টলের এক কোণায় হাতেগোনা কয়েকটি সৃজনশীল বই সাজিয়ে রাখা হয়েছে। দুই ইউনিটের স্টলে হলুদ রঙে ছেয়ে গেছে স্পোকেন ইংলিশের বই। বড় ব্যানারে লেখা রয়েছে ‘১ মিনিটে ১০টি ইংলিশ শব্দ’, ‘১ মাসে টেন্স শেষ হবেই’, ‘গণিতের ২০০ খেলা’সহ ক্রেতাকে আকর্ষণ করার মতো বেশি কিছু ব্যানার। স্টলের নামফলকও দূর থেকে দেখা যায় না।
স্টলের কাছে গিয়ে দেখা যায়, ভেতরে ছোট করে লেখা রয়েছে দোয়েল প্রকাশনী। স্টলের বিক্রয়কর্মীদের কাছে ক্রেতা হিসেবে জানতে চাইলে, তারা স্পোকেন ইংলিশ শেখার বইকেও সৃজনশীল বই হিসেবে দাবি করেন। পরে সাংবাদিক পরিচয় দিলে তারা জানান, গল্প-কবিতা-উপন্যাসের বইও বিক্রি করা হচ্ছে স্টলে। এক কোণায় রাখা কয়েকটি গল্পের বই সামনে এনে দেখান হয়। স্টলের নামফলকের বিষয়ে জানতে চাইলে জানানো হয়, এটি ঝড়ে ভেঙে গেছে। পরে মেরামত করা হয় নি।
অন্যদিকে তাম্রলিপি প্রকাশনীর প্যাভিলিয়নে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হচ্ছে মুনজেরিন শহীদের লেখা ‘স্পোকেন ইংলিশ’ এবং ‘মুখস্ত ছাড়াই ঘরে বসে ইংরেজী শিখুন’ নামে দুটি বই। লকডাউন পরিস্থিতিতেও স্পোকেন ইংলিশ শেখার বইগুলো বিক্রি করে যাচ্ছে বলে জানান বিক্রয়কর্মীরা।
এ নিয়ে কিছুটা বিরক্তি প্রকাশ করেন বাংলা একাডমির মহাপরিচালক হাবীবুল্লাহ সিরাজী।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেন, ‘সৃজনশীল বইয়ের মেলায় এ ধরনের বই বিক্রি করার সুযোগ নেই। আমরা নিজেরাও তাদের নিয়ে বিরক্ত। আজ তো মেলার সময় শেষ হয়ে গেছে, আগামীকাল (শুক্রবার) তাদের বিষয়টি নিয়ে আমরা ব্যবস্থা নেব। সাংবাদিকদের অনুরোধ করব, এ বিষয়গুলো নিয়ে বেশি করে তুলে ধরেন। তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আমরাও ব্যবস্থা নিতে পারব’।
বাংলাদেশ জ্ঞান ও সৃজনশীল প্রকাশক সমিতির সভাপতি ফরিদ আহমেদ বলেন, ‘বইমেলার নীতিমালা পর্যবেক্ষণ করার জন্য একটি উপকমিটি রয়েছে। তাদের কাজই তো এগুলো তদারকি করা। মেলায় যদি কেউ নীতিমালা ভঙ্গ করে থাকে, তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হোক। বইমেলায় সৃজনশীল বই বিক্রি হবে। গাইড, নোট বই বিক্রির জন্য তো একুশের বইমেলা না। যারা নীতিমালা ভঙ্গ করবে, মেলা কর্তৃপক্ষ তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে। আমরা নিয়ম মানার পক্ষে’।
গতকাল বৃহস্পতিবার বইমেলায় লোক সমাFগম না বাড়লেও বইয়ের ক্রেতা বাড়ছে বলে জানিয়েছেন একাধিক স্টলের বিক্রয়কর্মীরা। বেলা ১২টা থেকে মেলা শুরু হলেও মূলত বিকেল ৩টার পর থেকে বইপ্রেমীদের ভিড় বাড়তে থাকে। মেলায় আসা লোকদের বেশিরভাগই বই কিনছেন।
শুক্রবার ছুটির দিন মেলায় বইপ্রেমীদের ভিড় বাড়বে বলে আশা করছেন প্রকাশকেরা। ছুটির দিনে বেশ কিছু নতুন বই প্রকাশ করার প্রস্তুতিও নিচ্ছে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠানগুলো।
শুক্রবার বইমেলার ২৩তম দিন। মেলা শুরু হবে বেলা ১২টায় এবং চলবে বিকেল ৫টা পর্যন্ত।❐