সম্পাদকীয়

ব্যর্থ বিদ্যুৎ বিভাগ আবারও বাড়াচ্ছে বিদ্যুতের দাম

এবার ভোক্তা পর্যায়ে বিদ্যুতের খুচরা মূল্য ইউনিট গড়ে এক টাকা ১০ পয়সা বা ১৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ বাড়ানোর সুপারিশ করেছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের কারিগরি কমিটি।

কারিগরি কমিটির সুপারিশে বলা হয়েছে, ভারিত গড়ে বিদ্যমান খুচরা মূল্য ৭ টাকা ১৩ পয়সা থেকে বাড়িয়ে ৮ টাকা ২৩ পয়সা করা যেতে পারে। গত ১৪ বছরে পাইকারি ও খুচরা পর্যায়ে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে ১০ বার। এখন খুচরা পর্যায়ে ১১তম বারের মতো দাম বাড়তে পারে এ মাসে। এ খাতের সিস্টেম লস এবং দুর্নীতি রোধ করতে পারলেই বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রয়োজন হয় না বরং কমানো যায়। কিন্তু নিয়ন্ত্রক কিংবা সেবাদানকারী সংস্থা-কোম্পানিগুলো তাতে আগ্রহী না হয়ে সব সময় দাম বৃদ্ধির পথে হাঁটতেই পছন্দ করে।

এত কম সময়ে বারবার বিদ্যুতের দাম বাড়ানো নাগরিকদের জীবনযাত্রায় বাড়তি চাপ যোগ করবে- এটাই স্বাভাবিক। সর্বশেষ ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বিদ্যুতের দাম সব পর্যায়ে বাড়ানো হয়। তখন পাইকারিতে দাম ৮ দশমিক ৪ শতাংশ বৃদ্ধির পাশাপাশি সাধারণ গ্রাহক পর্যায়ে (খুচরা) বাড়ানো হয় ৫ দশমিক ৩ শতাংশ। তাতে প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম গড়ে ৩৬ পয়সা বেড়ে ৭ টাকা ১৩ পয়সা হয়। ডলার-সংকটে পড়ে জ্বালানি সাশ্রয়ে গত জুলাই থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে লোডশেডিং শুরু করে সরকার।

নভেম্বরে শীত শুরুর আগ পর্যন্ত এটি চলমান থাকে। এখন দাম বাড়ানোর পর আগামী গ্রীষ্ম মৌসুমে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহের নিশ্চয়তা দিতে পারবে কিনা সেটা দেখার বিষয়। দেশের সরকারি-বেসরকারি সব বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে চুক্তি অনুসারে নির্ধারিত দামে বিদ্যুৎ কিনে নেয় পিডিবি। এরপর তারা উৎপাদন খরচের চেয়ে কিছুটা কম দামে ছয়টি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার কাছে বিক্রি করে। ঘাটতি মেটাতে পিডিবি সরকারের কাছ থেকে ভর্তুকি নেয়।

তবে বিতরণ সংস্থাগুলো কোনো ভর্তুকি পায় না। তারা নিয়মিত মুনাফা করছে। গ্যাসের মতো বিদ্যুৎ খাতেও সিস্টেম লসের কারণে অপচয় হচ্ছে কয়েক হাজার কোটি টাকা। ১ শতাংশ সিস্টেম লসেই অন্তত ৭০০ কোটি টাকার ক্ষতি গুনতে হয় বিদ্যুৎ খাতে। এসবের দায় চাপে গ্রাহকের ওপর। আদর্শিকভাবে এ খাতে কোনো উন্নয়ন হয়নি।

সারাদেশে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহে বিদ্যুৎ বিভাগ ব্যর্থ। কুইক রেন্টালের নামে হাজার হাজার কোটি টাকা নষ্ট হয়েছে। এসব প্রকল্পে সীমাহীন দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে প্রতিনিয়ত বৃদ্ধি পাচ্ছে বিদ্যুতের ইউনিটপ্রতি উৎপাদন খরচ। আর এসবের দায় সাধারণ মানুষের ঘাড়ে চাপানোর জন্য বিদ্যুতের মূল্য বৃদ্ধি করছে।
বিদ্যুতের দাম বাড়লে সব রকম দ্রব্যমূল্য ও সেবামূল্যের ওপর এর বিরূপ প্রভাব পড়ে। আর শেষ পর্যন্ত তা বহন করতে হয় ভোক্তা সাধারণকে। তাই সাধারণ ভোক্তাদের সামর্থ্য তথা জনস্বার্থ বিবেচনায় নিয়ে বিদ্যুতের দাম কীভাবে সহনীয় পর্যায়ে রাখা যায় তা নিয়ে সরকারকে ভাবতে হবে। একটি গণতান্ত্রিক সরকার বিদ্যুতের মতো জরুরি প্রয়োজনীয় সেবা খাতের ব্যাপারে জনবান্ধব নীতি নিয়ে এগোবে- এটাই সবার প্রত্যাশা।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension