প্রবাস

নিউইয়র্কে বইমেলার আগেই মুক্তধারা ফাউণ্ডেশনের সভাপতির পদ ছাড়লেন ড. নুরুন নবী

নিউইয়র্কে অনুষ্ঠিতব্য মুক্তধারা বইমেলার আগেই সংগঠনের সভাপতির পদ থেকে পদত্যাগ করলেন ড. নুরুন নবী। একাত্তরের পরাজিত শক্তির ছত্রছায়ায় এই ফাউণ্ডেশনের একটি পক্ষের অবৈধ তৎপরতা এবং বইমেলা দখলের ষড়যন্ত্র বোঝতে পেরে তিনি এই পদত্যাগ করেন। পদত্যাগ পরবর্তী এক প্রতিক্রিয়ায় তিনি উল্লেখ করেন, ২০২৫ সালের বইমেলা পর্যন্ত তাঁরই সভাপতিত্বে এই ফাউণ্ডেশনের কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত ছিল। কিন্তু ০৫ আগস্টের পট পরিবর্তনের পর থেকে মুক্তধারা ফাউণ্ডেশনে একটি চরম স্নায়ুযুদ্ধ চলছিল। এর একটি পক্ষ জাতির পিতাকে অবমাননা, ৩২ নম্বর পুড়িয়ে দিয়ে নগ্ন উল্লাস,সাম্প্রদায়িক আক্রমণ,খুন,ধর্ষণ, মব চক্রের মাধ্যমে পরিকল্পিত গণহত্যা ইত্যাদিকে সমর্থন করে আসছিলেন। একই সাথে বইমেলার উদ্বোধক হিসেবে রাখা হয়েছে ৪০ বছর বয়সি সাম্প্রদায়িক একজন তরুণ লেখক সাদাত হোসাইনকে । যিনি সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী লেখকদের প্রতিনিধি হিসেবে ঢাকায় চিহ্নিত। ফলে এই অবস্থা সংগঠনের আদর্শ পরিপন্থী উল্লেখ করে তিনি সংগঠনের শীর্ষ পদ থেকে পদত্যাগ করেন।

এবারের মুক্তধারা নিউইয়র্ক বইমেলার আহ্বায়ক সাংবাদিক রোকেয়া হায়দার। জানাগেছে বইমেলার আগে একটি নির্ধারিত মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী চক্রকে সামনে রেখে বইমেলার অনুষ্ঠানমালা তৈরি করা হয়েছে। এরই প্রতিবাদে নিউইয়র্কের সাংস্কৃতিক মোর্চা ‘একাত্তরের প্রহরী’ নামক একটি সংগঠনের উদ্যোগে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় নিউইয়র্কে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের লেখক-সাংবাদিক-আবৃত্তিশিল্পী-মুক্তিযোদ্ধা-সাংস্কৃতিক কর্মী-নাট্যজন-পেশাজীবি-সংগঠক সহ একটি বড় সংখ্যক অভিবাসীদের সাথে মত বিনিময় অনুষ্ঠিত হয়। মতবিনিময় সভায় ড. নুরুন নবী বলেন, মুক্তধারা বইমেলার ঐক্য ধরে রাখার জন্য আমি আপ্রাণ চেষ্টা করেছি। আমাদের দাবি ছিল- বইমেলা -জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, মহান মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা সমুন্নত রেখে এগিয়ে যাবে। যা এর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই চলে আসছে। কিন্তু খুবই পরিতাপের বিষয়,মুক্তধারা গ্রন্থবিতানের মালিক ও তার কিছু অনুসারী দখলদার ইউনুস সরকারের প্রতি নগ্ন আনুগত্য স্বীকার করে এই চেতনা ও মূল্যবোধকে বিসর্জন দিয়েছেন। একই সাথে বইমেলার নামে জঙ্গিবাদ-মৌলবাদ- সাম্প্রদায়িক শক্তির পৃষ্ঠপোষক ও অসাংবিধানিক সরকারের রাষ্ট্রীয় অন্যান্য সাহায্য পাওয়ার জন্য চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। পাশাপাশি একাত্তরের চেতনাবিরোধীদের হাতে বইমেলাকে ‘নয়া-বন্দোবস্ত’ দিয়েছেন।

ড. নবী বলেন, বাংলাদেশের বর্তমান সরকার জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে আজ দেশকে দখলের দিকে ঠেলে দিয়েছে। সেন্টমার্টিন ইস্যু, আরাকান করিডোর,চট্টগ্রাম বন্দর অবৈধ ও গোপনে লীজ দেয়ার অনেক কিছুই এগিয়ে এনেছে। এই সময়ে শিল্প সাহিত্য সংস্কৃতিকে অধিগ্রহণ করতেও মরিয়া হয়ে আছে। নিউইয়র্ক বইমেলা নতজানু নীতি নিয়ে তাদের পদযুগলেই সমর্পিত হয়েছে। যা একজন সুস্থ ও প্রগতিমনা মানুষের পক্ষে মেনে নেওয়া খুবই কঠিন।

সভায় বিস্তারিত আলোচনার পরে, সর্বসম্মতিক্রমে ২৪,২৫ মে ২০২৫ উইকেন্ডে নিউইয়র্কে ‘বঙ্গবন্ধু বইমেলা’ অনুষ্ঠানের সিদ্ধান্ত হয়। বিভিন্ন সেক্টর বন্টন করে নির্ধারিত ব্যক্তিদের দায়িত্ব দেয়া হয়। সভায় যোগ দেয়া বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ সমস্বরে বলেন, মুক্তধারা গ্রন্থবিতানের মালিক ও একাত্তরের চেতনা বিরোধী সহযোগীদের কার্যক্রম খুবই ঘৃণ্য বিষয়। এরা একাত্তরের তিরিশ লাখ শহীদের সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করেই এগোতে চাইছে।

সভায় সর্বসম্মতিক্রমে ড. নুরুন নবী কে ‘বঙ্গবন্ধু বইমেলা- ২০২৫’ এর আহ্বায়ক নির্বাচিত করা হয়েছে। আহ্বায়ক কমিটি অভিবাসী সমাজের বিভিন্ন স্তরে ক্রমাগতভাবে মতবিনিময় অব‌্যাহত রাখবে।

উল্লেখ্য , মুক্তধারা আয়োজিত ২০২৫ এর ৩৪তম বইমেলায় ৪০ বছর বয়সি একজন তরুণ লেখক সাদাত হোসাইনকে আনা হচ্ছে উদ্বোধক হিসেবে। সাদাত হোসাইন সাম্প্রদায়িক ও মৌলবাদী লেখকদের প্রতিনিধি হিসেবে ঢাকায় চিহ্নিত। তিনি ৭.৬২ মার্কা
জুলাই সন্ত্রাসের পক্ষে সক্রিয় ছিলেন। রাজপথে মাইক হাতে নেমে গভীর ষড়যন্ত্রকে সমর্থন করেছিলেন এবং বর্তমানে এই সরকারের দোসর হিসেবে কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন।

এই বইমেলার ধারাবাহিক ঐতিহ্যের সাথে চরম বরখেলাপ ঘটিয়ে একজন অখ্যাত সাম্প্রদায়িক তরুণের হাতে উদ্বোধনের দায়িত্ব দেয়াকেও ম্যাটিকিউলিয়াস ডিজাইনের অংশ বলছেন কেউ কেউ । মেমোরিয়াল ডে উইকেন্ডে ‘বঙ্গবন্ধু বইমেলা’; সফল করার জন্যে
সকলের প্রতি সবিনয় অনুরোধ জানিয়েছেন আহ্বায়ক ড. নুরুন নবী।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension