
পান্তা পরিবেশন করে মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ায় তৃতীয় কিশোয়ার
অনেক আশা জাগিয়েও রান্নাবিষয়ক জনপ্রিয় টেলিভিশন রিয়েলিটি শো মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার ১৩তম আসরে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত অস্ট্রেলীয় কিশোয়ার চৌধুরী। ২০২১ সালের প্রতিযোগিতায় ৩য় স্থান অধিকার করেছেন তিনি।
লাউ চিংড়ি, বেগুন ভর্তা, খিচুড়ি, মাছ ভাজা, আমের টক, খাসির রেজালা— আন্তর্জাতিক একটি প্রতিযোগিতায় একের পর এক এমন মুখরোচক খাবার রান্না করে বিচারকসহ বিভিন্ন ভাষাভাষীর দর্শকের নজর কেড়েছিলেন এই ‘বাঙালি’ রাঁধুনী।
দীর্ঘ তিন মাস ধরে চলার পর আজ মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়ার চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করা হয়। ভারতীয় বংশোদ্ভূত ফিজিয়ান যাজক জাস্টিন নারায়ণ এবারের খেতাব জিতেছেন। ফার্স্ট রানার্স আপ হয়েছেন পিট ক্যামবেল।
দুদিন ধরে চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয় জাস্টিন, পিট ও কিশোয়ার এই তিন ফাইনালিস্টকে নিয়ে। প্রথম দিন ফাইনাল ডিশে কিশোয়ার রান্না করেন ‘স্মোকড ওয়াটার রাইস, আলু ভর্তা ও সার্ডিন’। অর্থাৎ বাঙালির কাছে চিরচেনা পান্তা-ভাত, আলু ভর্তা আর সার্ডিন মাছ ভাজি।
ফাইনাল ডিশ রান্না নিয়ে কিশোয়ার বিচারকদের বলেন, ‘প্রতিযোগিতায় এমন রান্না সত্যিই চ্যালেঞ্জের। সাধারণ রেস্টুরেন্টে এমন রান্না হয় না। কিন্তু বাঙালির কাছে এটা পরিচিত রান্না।’
আর ফাইনাল ডিশ হিসেবে এটা রেঁধে নিজের তৃপ্তির কথাও জানান কিশোয়ার। এই রান্না দেখে ও খেয়ে বিচারকের রীতিমতো অভিভূত হয়ে পড়েন। তিনজনেই দশে দশ দেন কিশোয়ারকে।
তবে চূড়ান্ত পর্বের শুরুটা কিন্তু বেশ চ্যালেঞ্জের ছিল কিশোয়ারের জন্য। তিনি হাঁসের একটি পদ রান্না করা শুরু করেছিলেন। বিচারকেরা যখন তাঁর রান্না দেখতে এলেন সবকিছু দেখে জিজ্ঞেস করেছিলেন ‘এখানে কিশোয়ার কোথায়?’
তারপরেই তিনি তার মেন্যু চেঞ্জ করার চিন্তা করেন আর ফাইনাল ডিশ হিসেবে পরিবেশন করেন বাঙালির চির পরিচিত আলু ভর্তা, পান্তা ভাত আর সার্ডিন মাছ, যেই মাছের স্বাদ অনেকটা ইলিশ মাছের কাছাকাছি।
চূড়ান্ত পর্বে ফাইনাল ডিশ রেঁধে ৫১ নাম্বার নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে ছিলেন। আর প্রথম স্থানে ছিলেন পিট ৫৩ নাম্বার নিয়ে। তবে মাস্টারশেফ অস্ট্রেলিয়া’র ফাইনাল রেজাল্টের আগেই লাখ লাখ বাঙালির মন জয় করে নিয়েছেন তিনি।
অনেকের মতে, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশে প্রচলিত নানা ধরনের খাবারকে সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার কারণেই ৩৮ বছর বয়সী এই রাঁধুনীকে অন্যসব প্রতিযোগী থেকে আলাদা করেছে। তবে শেষ পর্যন্ত চ্যাম্পিয়ন হওয়া হলো না তার।
কিশোয়ার চৌধুরীর জন্ম ও বেড়ে ওঠা অস্ট্রেলিয়ায় হলেও তার পারিবারিক আবহটা সবসময়ই ছিল বাঙালিয়ানা। তার বাবার বাড়ি ঢাকার বিক্রমপুরে আর মা কলকাতার বর্ধমানের। তারা দুজনে আজ থেকে প্রায় ৫০ বছর আগে অস্ট্রেলিয়ায় পাড়ি জমান।
বিদেশে বসবাস করলেও দেশের ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চা সবকিছুই বজায় রেখেছেন কিশোয়ারের বাবা-মা, আর সেটা তারা নিজের সন্তানদেরও ধারণ করতে উৎসাহিত করেছেন। বাবা-মায়ের উৎসাহ থেকেই বাঙালিয়ানা খাবারের হাত পাকা হয় কিশোয়ারের।