বড় স্তনযুক্ত পুরুষদের কম বয়সে মৃত্যুর সম্ভাবনা বেশি: গবেষণা
যে সকল পুরুষদের স্তনের টিস্যু বেশি ও আকারে স্বাভাবিকের চেয়ে বড় থাকে তাদের কম বয়সে মারা যাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। সম্প্রতি বিএমজে ওপেন জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় এমনটা দেখা গেছে।
অতিরিক্ত ওজনের কারণে পুরুষদের স্তনের টিস্যু বড় হতে পারে যা সিউডোগাইনেকোমাস্টিয়া বা ‘ম্যান বুবস’ নামে পরিচিত। আনুষ্ঠানিকভাবে এটি গাইনোকোমাস্টিয়া নামে পরিচিত একটি হরমোনজনিত অবস্থা যা ওজন বৃদ্ধির বাইরে গিয়েও বড় স্তন সৃষ্টি করে। গাইনোকোমাস্টিয়ার প্রভাব ৩০ থেকে ৬০ শতাংশ পুরুষের মধ্যে রয়েছে।
বিএমজে ওপেন জার্নালে প্রকাশিত নতুন গবেষণায় দেখা গেছে, গাইনেকোমাস্টিয়ার কারণে ৭৫ বছর বয়সের আগে মৃত্যুর একটি বড় ঝুঁকির সম্ভাবনা তৈরি করতে পারে। গাইনোকোমাস্টিয়া রোগটি যেসকল পুরুষদের মধ্যে আগে থেকেই ক্যান্সার বা অন্যান্য রোগ আছে তাদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ।
গবেষকের মতে, ‘গাইনেকোমাস্টিয়া আক্রান্ত পুরুষদের মৃত্যুর ঝুঁকি বেশি। এই গবেষণার ফলাফল আশা করি চিকিৎসাসেবা প্রদানকারীদের মধ্যে আরও সচেতনা তৈরি করবে। আর পুরুষরাও এই ঝুকিঁ থেকে মুক্তি পাবে।’
গাইনেকোমাস্টিয়া যে কোনো বয়সে বিকশিত হতে পারে। তবে সাধারণত যৌন হরমোনের পরিবর্তনের সময় এটি দেখা যায়। যেমন বয়ঃসন্ধিকাল, জন্মের পরপর বা পরবর্তী জীবনে। পুরুষদের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে টেস্টোস্টেরনের মাত্রা কমে যায় আর এ সময়টাতেই গাইনোকোমাস্টিয়া বিকশিত হতে পারে। এমনকি ওজন বাড়ার কারণে এটি আরও খারাপ হতে পারে। অনেক সময় উভয় প্রক্রিয়া একইসঙ্গে ঘটে।
গবেষকরা ২৩ হাজার ৪২৯ জন ডেনিশ পুরুষের তথ্য দেখেছেন যারা ১৯৯৫ থেকে ২০২১ সালের মধ্যে গাইনোকোমাস্টিয়ায় আক্রান্ত হয়েছেন। পুরুষদের দুটি গ্রুপে বিভক্ত করা হয়েছিল—যাদের ইডিওপ্যাথিক গাইনোকোমাস্টিয়া আছে (কারণ অজানা ছিল) এবং যাদের আগে থেকেই অন্য কোনো রোগের পাশাপাশি গাইনোকোমাস্টিয়া ছিল।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, বিনা শর্তে র্যান্ডমলি বাছাই করা পুরুষদের মধ্যে প্রাথমিকভাবে মৃত্যুর ঝুঁকি ৩৭ শতাংশ বেশি ছিল। একইভাবে যাদের মধ্যে আগে থেকেই অন্য কোনো রোগের পাশাপাশি গাইনোকোমাস্টিয়া ছিল তাদের ক্ষেত্রে তাড়াতাড়ি মৃত্যুর সম্ভাবনা ৭৫ শতাংশ বেশি।
অপরদিকে ইডিওপ্যাথিক গাইনোকোমাস্টিয়ায় আক্রান্ত পুরুষদের মধ্যে তাড়াতাড়ি মারা যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল মাত্র ৫ শতাংশ বেশি।
অন্যান্য রোগ যেমন ক্যান্সারের পাশপাশি গাইনোকোমাস্টিয়ায় আক্রান্ত পুরুষদের মৃত্যুর ঝুঁকি ৭৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে, ফুসফুসের রোগ ও অন্ত্রের রোগে আক্রান্তদের মৃত্যুর ঝুঁকি যথাক্রমে দ্বিগুণ ও পাঁচ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। যকৃতের রোগ, গলব্লাডার, পিত্তথলি ও অগ্ন্যাশয়ের রোগে আক্রান্তদের মধ্যে এই ঝুঁকি আরও বেশি ছিল।
ইডিওপ্যাথিক গাইনোকোমাস্টিয়ায় আক্রান্ত পুরুষদের মধ্যে যাদের লিভারের রোগ রয়েছে তাদের অল্প বয়সে মারা যাওয়ার ঝুঁকি দ্বিগুণ ছিল।
গবেষক লিখেছেন, ‘গুরুত্বপূর্ণভাবে, যেসকল পুরুষের মধ্যে অন্যান্য রোগের পাশাপাশি গাইনোকোমাস্টিয়া আছে তাদের অল্প বয়সে মৃত্যুর ঝুঁকি পাঁচগুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। আর ইডিওপ্যাথিক গাইনোকোমাস্টিয়ায় আক্রান্ত পুরুষদের মধ্যে শুধু যারা লিভারের রোগে আক্রান্ত তাদের মধ্যেই মৃত্যুর ঝুঁকি দ্বিগুণ বেড়েছে।’