
রূপচর্চায় কাঁচা হলুদের ব্যবহার:-

রূপসী বাংলা ডেস্ক: হলুদ রান্নার ক্ষেত্রে যেমন্ একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান তেমনি রূপচর্চায়ও এর গুরুত্ব অনেক। যুগ যুগ ধরে কাঁচা হলুদ রূপচর্চার অন্যতম উপাদান হিসেবে ব্যবহার হয়ে আসছে। ব্রণ সারাতে হলুদের মতো প্রাকৃতিক উপাদান খুব কমই আছে। কাঁচা হলুদে রয়েছে অ্যান্টিসেপ্টিক ও অ্যান্টি ব্যাক্টেরিয়াল উপাদান, যা ব্রণ ও ব্রণের ক্ষত সারাতে অতুলনীয়। কাঁচা হলুদে আছে অ্যান্টি এজিং উপাদান, তাই ত্বক হতে বয়সের ছাপ দূর করতে হলুদের জুরি মেলা ভার। অনেকেই রূপচর্চায় শুকনো গুঁড়ো হলুদ ব্যবহার করে থাকেন, তবে শুকনো গুঁড়ো হলুদের থেকে রূপচর্চায় কাঁচা হলুদের ব্যবহার অনেক ভালো ও নিরাপদ। আসুন জেনে নেই সৌন্দর্য চর্চায় কাঁচা হলুদের কিছু ব্যবহার –
ব্রণ সারাতে:
হলুদ অ্যান্টি সেপটিক হিসাবে চমৎকার কাজ করে, তাই ব্রণ দূর করতে বা ক্ষত সারাতে অতুলনীয়।
* কাঁচা হলুদ বাটা, মুলতানি মাটি ও নিম পাতার রস একসাথে মিশিয়ে মুখে লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে গোলাপ জল বা পানি দিয়ে ম্যাসেজ করে ধুয়ে ফেলুন।
* কাঁচা হলুদ বাটা, আঙ্গুরের রস ও গোলাপ জল মিশিয়ে ব্রণের উপর লাগান। কিছুক্ষন পর ধুয়ে ফেলুন। ব্রণ মিলিয়ে যাবে এবং ইনফেকশন দূর হবে।
* ব্রণের দাগ দূর করতে কাঁচা হলুদ ও নিম পাতা বেটে দাগের উপর লাগান। এটি কিছুদিন করলে দাগ দূর হবে।
* ব্রণ বা দাগ দূর করতে টমেটোর রস, কাঁচা হলুদ ও মধু মিশিয়ে প্যাক তৈরি করে ত্বকে ব্যবহার করুন।
ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করতে:
* এক চা চামচ হলুদের রস, এক চা চামচ দুধ, এক চা চামচ বেসন ও আধা চা চামচ চন্দন গুঁড়ো এক সাথে মিশিয়ে ত্বকে লাগান। ১৫ – ২০ মিনিট রেখে ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বক ফর্সা করবে। দুধ ত্বকের শুষ্ক ভাব দূর করবে।
* কাঁচা হলুদ, মসুর ডাল এক সাথে বেটে পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগিয়ে ২০ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। ত্বক উজ্জ্বল হবে।
* হলুদের গুঁড়ো ও লেবুর রস মিশিয়ে মিশ্রণ তৈরি করে নিয়মিত ব্যবহার করলে ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি পাবে।
* প্রতিদিন রাতে ঘুমানোর আগে দুধের সাথে কাঁচা হলুদ মিশিয়ে খেলে ধীরে ধীরে ত্বকের রং ফর্সা হয় এবং রক্ত পরিষ্কার হয়।
ত্বক মসৃণ করতে:
* কাঁচা হলুদ বাটা, বেসন, চালের গুঁড়ো ও টক দই একসাথে পেস্ট করে মুখে ও গলায় লাগিয়ে রাখুন। শুকিয়ে গেলে ধুয়ে ফেলুন। নিয়মিত ব্যবহারে ত্বক উজ্জ্বল ও মসৃণ হয়।
* অল্প দুধের ক্রিমের সাথে হলুদ মিশিয়ে ত্বকে লাগালে ত্বক কোমল, মসৃণ ও সতেজ হবে।
* হলুদের গুঁড়োর সাথে শশার রস বা লেবুর রস মিশিয়ে লাগান। ১৫ মিনিট পর ধুয়ে ফেলুন। ত্বক মসৃণ হবে।
বলিরেখা ও রোদে পোড়া দাগ দূর করতে:
* কাঁচা হলুদের সাথে দুধের সর মিশিয়ে নিয়মিত মুখে মাখুন। ত্বকের বলিরেখা দূর হবে।
* রোদে পোড়া দাগ দূর করতে মসুর ডালবাটা, কাঁচা হলুদ বাটা ও মধু এক সাথে মিশিয়ে ত্বকে লাগান।
* ২ – ৩ চিমটি হলুদের গুঁড়ো, চালের গুঁড়ো, টমেটোর রস, কাঁচা দুধের সাথে মিশিয়ে মুখে মাস্ক হিসাবে লাগিয়ে রাখুন ১৫ মিনিট। পরে কুসুম গরম পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলুন। এটি ত্বকের ফাইন লাইন এবং ঝুলে যাওয়া ত্বক স্বাভাবিক করে, সাথে ত্বক ফর্সা করতেও অত্যন্ত কার্যকরী।
ত্বকের অবাঞ্ছিত লোম দূর করতে:
* প্রতিদিন ময়দা এবং কাঁচা হলুদ বাটা মিশিয়ে স্ক্রাব করলে, ত্বকের অবাঞ্ছিত লোম ধীরে ধীরে কমে যাবে।
* ১ চা চামচ হলুদের গুঁড়ো,২ টেবিল চামচ দুধ ও ১ টেবিল চামচ বেসন এক সাথে মিশিয়ে পেস্ট তৈরি করে মুখে লাগান। ১০ মিনিট পর কুসুম গরম পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলুন।
চোখের নীচে কালো দাগ দূর করতে:
* ১ চা চামচ হলুদ বাটা, ১ টেবিল চামচ টক দই ও ১ চা চামচ টমেটোর রস মিশিয়ে চোখের চারপাশে লাগিয়ে ১০ – ১৫ মিনিট পর ঠাণ্ডা পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলতে হবে।
*** যাদের অ্যালার্জি আছে তারা হলুদ মেশানো পানিতে গোসল করলে অ্যালার্জি বা র্যাশের সমস্যা অনেকটাই কমে যাবে।
*** ২ – ৩ চিমটি হলুদ, চিনি এবং চালের গুঁড়ো মিশিয়ে মুখে স্ক্রাব করলে মুখের সব মরা কোষ দূর হবে। শুষ্ক এবং কালো ঠোঁট এর জন্য হলুদ গুঁড়ো ও কাঁচা দুধ মিশিয়ে স্ক্রাব করলে ঠোঁটের কালচে ভাব দূর হবে।
** সাবধানতা **
* হলুদ দিয়ে কখনও রোদে বের হবেন না। তাহলে ত্বক পুড়ে যাবে। হলুদ দিয়ে রূপচর্চা করবেন রাতে।
* সপ্তাহে ২ দিনের বেশি কোনো প্যাক ব্যবহার না করাই ভালো। এটা ত্বকের ক্ষতি করে।
* কাঁচা হলুদ কখনও সরাসরি ব্যবহার করা ঠিক না, এর সাথে কিছু মিলিয়ে লাগাতে হবে।
* প্রত্যেক মানুষের ত্বক আলাদা। তাই আগে হলুদ মুখে ব্যবহার না করে, হাতে বা ঘাড়ে দিয়ে পরিক্ষা করে নিতে হবে।
* হলুদের প্যাক লাগানোর পর ২০ মিনিটের বেশি রাখা ঠিক না। এতে ত্বক কালো হয়ে যেতে পারে।