যুক্তরাষ্ট্র

আমেরিকাকে কী বার্তা দিতে চাইছে কিম?

উত্তর জাপানের বাসিন্দাদের জন্য বৃহস্পতিবার (৩ নভেম্বর) সকালটা ছিল বিভ্রান্তিকর আর চরম উৎকণ্ঠার। সকাল ৭টা ৫০-এ মিয়াগি আর ইয়ামাগাতায় বিমান আক্রমণের সতর্ক সঙ্কেত বেজে ওঠে। টিভি অনুষ্ঠান মাঝপথে থামিয়ে মানুষকে শেল্টারে যেতে বলা হয়। জাপানের উপকূলরক্ষীরা জানায়, উত্তর কোরিয়া থেকে ছোড়া একটি ক্ষেপণাস্ত্র জাপানের দিকে আসছে।

এর আগেও উত্তর কোরিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র জাপানের ওপর দিয়ে গেছে- গত মাসেই একটি ক্ষেপণাস্ত্র জাপানের আকাশসীমায় ঢুকেছে। কিন্তু দেশটির ভেতর এত দক্ষিণ পর্যন্ত এর আগে কোন ক্ষেপণাস্ত্র পৌঁছায়নি।

তবে বৃহস্পতিবার সকালে উত্তর কোরিয়া যে ক্ষেপণাস্ত্রটি ছুড়েছিল, সেটি শেষ পর্যন্ত জাপানের আকাশসীমায় ঢুকতে ব্যর্থ হয়। দক্ষিণ কোরিয়ার সামরিক সূত্রের খবর অনুযায়ী ক্ষেপণাস্ত্রটি মাঝপথে ব্যর্থ হয়ে ভেঙে পড়ে জাপান সাগরে।

কিন্তু এই ক্ষেপণাস্ত্রটি ব্যর্থ হওয়ার অর্থ এই নয় যে জাপানিরা এখন স্বস্তি বোধ করতে পারে। প্রথমত কোনরকম হুঁশিয়ারি না দিয়েই প্রতিবেশি দেশকে লক্ষ্য করে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া এবং সেই ক্ষেপণাস্ত্র কোথায় গিয়ে পড়বে তা নিয়ে অনুমানে ভর করে উৎকণ্ঠা সৃষ্টি উস্কানিমূলক এবং বিপদজনক। সবচেয়ে বড় কথা আন্তর্জাতিক শিষ্টাচারের লংঘন।

এ ধরনের পদক্ষেপ বিমান এবং জাহাজ চলাচলের জন্যও একটা হুমকি। কারণ ক্ষেপণাস্ত্র ভেঙে পড়লে তার ভগ্নাংশ নিচে গিয়ে পড়তে পারে। এর একদিন আগে বুধবারই উত্তর কোরিয়া দক্ষিণ কোরিয়ার উপকূলের অদূরে সমুদ্রে রেকর্ড সংখ্যক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে।

আমেরিকায় বর্তমান সরকারের ক্ষমতার মধ্য মেয়াদী নির্বাচন আসন্ন। উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং আন আশা করছেন তিনি তার দেশের সামরিক সক্ষমতা প্রদর্শন করলে সেটা আমেরিকায় আলোচনার কেন্দ্রে আসবে।

উত্তর কোরিয়া আমেরিকায় এই নির্বাচনের আগে আলোচনায় থাকতে আগ্রহী বলেই প্রতিবেশি দেশগুলোর সাথে ইচ্ছা করে উত্তেজনা সৃষ্টি করছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন উত্তর কোরিয়া আরও বড় কিছুর জন্য প্রস্তুত হচ্ছে। যেমন হয় পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো, বা প্রশান্ত মহাসাগরে পূর্ণ মাত্রার দূর-পাল্লার ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষা চালানো অথবা দুটোই পরীক্ষা করা।

এ ধরনের হুমকির পেছনে একটা রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে। পিয়ংইয়ং ঠিক একই কাজ করেছিল ২০১০ এবং তারপর ২০১৭ সালে। কৌশলটা ছিল প্রথমে উত্তেজনা বাড়িয়ে সেটা একটা ভীতিকর মাত্রায় নিয়ে যাওয়া। তারপর দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান আর আমেরিকার দিক থেকে সংলাপের আহ্বান এবং কিছু ছাড় আদায়। পিয়ংইয়ং এবারেও নিঃসন্দেহে সেটাই করতে চাইছে।

তবে কিমের দ্বিতীয় আরেকটি উদ্দেশ আছে। উত্তর কোরিয়া তার ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি এখনও পুরোপুরি নিখুঁত করে উঠতে পারেনি।

এখনও উত্তর কোরিয়া মহাকাশে পরীক্ষামূলক ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার পর, ক্ষেপণাস্ত্রের মাথায় বসানো অস্ত্রটি আলাদা হয়ে যাচ্ছে এবং তা লক্ষ্যবস্তুর দিকে না গিয়ে পৃথিবীতে ফেরত আসছে। আগের পরীক্ষাগুলোয় দেখা গেছে এটি আবহাওয়ামণ্ডল দিয়ে যাওয়ার সময় যে প্রচণ্ড উষ্ণতা ও চাপ সৃষ্টি হয় সেটি ক্ষেপণাস্ত্রকে যাতে ভেঙে না ফেলে সেই প্রযুক্তিকে নিখুঁত করে তোলার কাজটা উত্তর কোরিয়া এখনও পুরোপুরি রপ্ত করতে পারেনি।

কাজেই এই প্রযুক্তিকে সফল করে তুলতে তাদের আরও পরীক্ষা চালানোর প্রয়োজন। উত্তর কোরিয়া শুধু দক্ষিণ কোরিয়া আর জাপানকে ভয় দেখাতে চাইছে না। তাদের আসল লক্ষ্য হল পারমাণবিক শক্তিসম্পন্ন আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করে আমেরিকার প্রতি হুমকি প্রদর্শন।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension