
শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি বলেছেন, শুধুমাত্র জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষা এ যুগের জন্য অচল। তাই এমন শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি করতে হবে যাতে সেই শিক্ষা দিয়ে এই যুগে এবং ভবিষ্যতে চলতে পারবে। সেটি করতে হলে শুধু জ্ঞানভিত্তিক শিক্ষায় চলবে না। তার জন্য দক্ষতা অর্জন করতে হবে। পাশাপাশি, তাকে মূল্যবোধ সম্পন্ন মানুষ হতে হবে। আমরা সোনার বাংলা গড়তে চাই। কিন্তু অচল নাগরিক দিয়ে সেই সোনার বাংলা হবে না। সোনার মানুষ অচল মানুষ নয়। সোনার মানুষ হবে সৎ, সহমর্মী, অসাম্প্রদায়িক, মানবিক এবং অন্যের সাথে কাজ করতে পারা মানুষ। সে জানবে জ্ঞানকে কিভাবে প্রয়োগ করতে হবে। সেই সোনার মানুষ গড়ার জন্য যে শিক্ষাক্রম সেটি নিয়ে কোনো আলোচনা নেই।
সোমবার (৩০ জানুয়ারি) দুপুর ২টায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজী নজরুল ইসলাম মিলনায়তনে কৃতী শিক্ষার্থীদের স্বর্ণপদক প্রদান অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) বিভিন্ন বিভাগের ১০৩ কৃতী শিক্ষার্থীর হাতে স্বর্ণপদক তুলে দেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি।
ডা. দীপু মনি আরও বলেন, ‘আমাদের প্রাক-প্রাথমিক, প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক এবং যে উচ্চশিক্ষাটি কলেজে হয় সেই সকল শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ হয়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ হয় না। এটা সত্য যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবচেয়ে মেধাবী শিক্ষার্থীরা শিক্ষক হন। মেধাবী মানেই যে ভালো শিক্ষক এটা সবসময় না। সুতরাং উচ্চ শিক্ষার ক্ষেত্রেও প্রশিক্ষণের প্রয়োজন রয়েছে। ইউজিসির মাধ্যমে সেই প্রশিক্ষণ খুব শিগগিরই শুরু করতে যাচ্ছি।
পাঠ্যবইয়ে ভুলের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রাথমিক ও মাধ্যমিকে শিক্ষক্রমের রূপান্তর এ বছর থেকেই করা হয়েছে। এক্ষেত্রে মাধ্যমিকে ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে মোট ২৬টি বই। এক বছরে ২৬টি বই নতুন করে তৈরি করা খুবই কষ্টকর। কিন্তু আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি। সেটি করতে গিয়ে কোথাও কোথাও ভুল হয়েছে। ভুলগুলো যখনই চিহ্নিত হচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে সংশোধন করে দিচ্ছি। কিন্তু আমরা দেখছি যে, ভুল যেটি সেটি তো সংশোধনযোগ্য, সংশোধন করে দিলাম। কিন্তু অনেক কথা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ধর্মীয় বিভিন্ন বক্তাদের মুখে শুনতে পাচ্ছি। ফ্যাক্ট চেকারের মাধ্যমে আমরা জানতে পেরেছি ভুলগুলো বইয়ে নেই শুধু বক্তারা বলেই চলেছে। বরং বইয়ে ঠিক উল্টোটা আছে। পাঠ্য বই নিয়ে ব্যাপক মিথ্যাচার চলছে।
শিক্ষামন্ত্রী আরও বলেন, বলা হচ্ছে আমরা সমকামিতাকে উসকে দিচ্ছি, পর্দা প্রথাকে কটাক্ষ করছি, হিন্দুত্ববাদকে উসকে দিচ্ছি। বলা হচ্ছে মুসলিম ইতিহাসকে হেয় করে হিন্দু, বৌদ্ধ শাসনকে বড় করে দেখাচ্ছি। এর একটি কথাও সত্য নয়। কাজেই যারা মিথ্যাচার করছেন তাদের এই বইগুলো ওপর হঠাৎ করে এতো আপত্তি কেন? ভুল থাকতে পারে যেগুলো আমরা সংশোধন করে নেব। কারণ জাতির পিতা মুজিবের সেই কথায় বিশ্বাসী যিনি বলেছিলেন, ন্যায্য কথা যদি একজনও বলেন আমি তার কথা মেনে নেব। কাজেই কথা যদি ন্যায্য হয়, যৌক্তিক হয় অবশ্যই আমরা কথা মেনে নেব। কিন্তু অযৌক্তিক ও মিথ্যা বলে সারাদেশ ভাসিয়ে দেওয়া হচ্ছে এটা তো গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, আজকে আমরা যে সুফল পাচ্ছি তা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল। চতুর্থ শিল্প বিপ্লব ও স্মার্ট ইকোনমি আমাদের স্বপ্ন নয়, সেটি এখন বাস্তবতা। কিছু দিনের মধ্যেই তা বাস্তবায়ন হবে।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক সুলতান-উল ইসলাম ও অধ্যাপক হুমায়ুন কবীর, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক অবাইদুর রহমান প্রামাণিক এবং সম্মানিত অতিথি হিসেবে অগ্রনি ব্যাংক লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. মুরশেদুল ইসলাম। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষক, প্রাধ্যক্ষ, ডিনসহ স্বর্ণপদক প্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।