আন্তর্জাতিকএশিয়া

থাইল্যান্ডে হোটেলে মৃত ছয়জনের রক্তে সায়ানাইড শনাক্ত

থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাঙ্কককের একটি বিলাসবহুল হোটেল স্যুটে মঙ্গলবার ভিয়েতনামি বংশোদ্ভূত অন্তত ছয়জনের মৃতদেহ পাওয়ার খবর জানায় দেশটির পুলিশ। সরকারের দেওয়া তথ্য অনুসারে, নিহতদের মধ্যে তিনজন পুরুষ ও তিনজন নারী। তারা সবাই ভিয়েতনামের নাগরিক। কারো দ্বৈত নাগরিকত্বও আছে।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার রাতে মৃতদেহগুলো উদ্ধার করা হয়।

এবার বিলাসবহুল হোটেল স্যুটে মারা যাওয়া ওই ছয় ব্যক্তির রক্তে সায়ানাইড পাওয়া গেছে। চিকিৎসকরা এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন। ময়নাতদন্ত বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, সায়ানাইড ছাড়া ওই ছয় ব্যক্তির মৃত্যুর আর কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

তবে বিষয়টি পুরোপুরি নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরো পর্যবেক্ষণ করা হবে বলে তারা জানিয়েছেন। এর আগে ওই হোটেলকক্ষে নিহতদের ব্যবহৃত চায়ের কাপগুলোতে সায়ানাইডের উপস্থিতি শনাক্ত করেছিলেন তদন্তকারীরা।

পুলিশ সন্দেহ করছে, নিহতদের মধ্যেই কোনো একজন এই বিষ প্রয়োগের সঙ্গে জড়িত। ঋণের জের ধরেই তিনি এমন কাজ করেছেন বলে সন্দেহ করা হচ্ছে।

তবে কে এর সঙ্গে জড়িত তা জানায়নি।

চুলালংকর্ন ইউনিভার্সিটির ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রফেসর কর্নকিয়াট ভংপাইসারনসিন বলেন, ‘ভিকটিমদের ঠোঁট এবং নখ গাঢ় বেগুনি হয়ে গেছে, যা অক্সিজেনের অভাব থেকে হয়েছে। পাশাপাশি তাদের শরীরের ভেতরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ রক্তক্ষরণে লাল হয়ে যায়। যা সায়ানাইডে আক্রান্ত হওয়ার গুরুত্বপূর্ণ লক্ষণ।

মেডিসিন অনুষদের ডিন ডাক্তার চানচাই সিত্তিপুন্ট বলেছেন, মৃত ব্যক্তির রক্তে কতটা সায়ানাইড ছিল তা খুঁজে বের করতে তাদের এখনো আরো সময় প্রয়োজন।

তিনি আরো বলেন, ‘তবে আমরা মৃতদের শরীরে এখন পর্যন্ত যা শনাক্ত করেছি, তা থেকে এটা বলা যায় যে সায়ানাইড তাদের মৃত্যুর কারণ।’
গত মঙ্গলবার গভীর রাতে থাইল্যান্ডের রাজধানী গ্র্যান্ড হায়াত ইরাওয়ান হোটেলের কর্মীরা মৃত অবস্থায় তাদের আবিষ্কার করেন। তদন্তকারীরা তখন বলেছিলেন, তাদের মৃত্যু ১২ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মারা গেছে। মর্মান্তিক এই ঘটনা বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়েছে। থাইল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী স্রেথা থাভিসিন এই ঘটনার জরুরি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

ছয়জন ভুক্তভোগীর মধ্যে দুজন আরেকজনকে ১০ মিলিয়ন থাই বাত ধার দিয়েছিলেন বলে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে। ১০ মিলিয়ন থাই বাতের মূল্য প্রায় দুই লাখ ৮০ হাজার ডলার।

এর আগে গত বুধবার ব্যাঙ্কক পুলিশপ্রধান জেনারেল নপপাসিন পুনসাওয়াত একটি সংবাদ সম্মেলনে বলেছিলেন, মৃতরা আলাদাভাবে হোটেলে চেক ইন করেছিলেন এবং তাদের জন্য পাঁচটি কক্ষ বরাদ্দ করা হয়েছিল। এগুলোর মধ্যে চারটি সপ্তম তলায় এবং একটি পঞ্চম তলায়। তাদের সোমবার চেক আউটের সময় নির্ধারিত ছিল।

নিহতদের মধ্যে চারজন ভিয়েতনামের নাগরিক থি নগুয়েন ফুয়ং (৪৬), তার স্বামী হং ফাম থান (৪৯), থি নগুয়েন ফুওং ল্যান (৪৭) এবং দিন ত্রান ফু (৩৭)। অন্য দুজন হলেন আমেরিকান নাগরিক শেরিন চং (৫৬) এবং ড্যাং হাং ভ্যান (৫৫)।

মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্ট এ ঘটনায় শোক প্রকাশ করেছে এবং বলেছে, তারা পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। মার্কিন ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন তদন্তে থাই কর্তৃপক্ষকে সহায়তা করছে বলেও স্রেথা জানিয়েছেন।

তবে বিষ প্রয়োগের উদ্দেশ্য স্পষ্ট নয়। পুলিশ বলছে, ছয়জনের মধ্যে দুজন গ্রুপের অন্য এক সদস্যকে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ ধার দিয়েছিল, যা ফেরত দেওয়া হয়নি।

তবে এ ঘটনার উদ্দেশ্য স্পষ্ট নয়। তবে পুলিশ বলেছে যে ছয়জনের মধ্যে দুজন গ্রুপের অন্য একজনকে যথেষ্ট পরিমাণ অর্থ ধার দিয়েছিল, যা ফেরত দেওয়া হয়নি।

সূত্র: বিবিসি

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension