
‘সবচেয়ে ক্ষতিকর’ গুপ্তচরকে মুক্তি দিল যুক্তরাষ্ট্র
টানা ২০ বছর জেলে থাকার পর মুক্তি পেলেন যুক্তরাষ্ট্রের গুপ্তচর এনা মন্তেস। ৬৫ বছর বয়সে তাকে মুক্তি দেওয়া হল। তিনি স্নায়ুযুদ্ধকালীল সবচেয়ে পরিচিত গুপ্তচরদের একজন। কিউবার হয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে গুপ্তচরগিরির অভিযোগে ২০০১ সালে এনাকে গ্রেপ্তার করা হয়। একজন বিশ্লেষক হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিভাগের হয়ে কাজ করার সময় কিউবার গোয়েন্দাদের কাছে গোপনে তথ্য পাচার করতেন এনা। প্রায় দুই দশক তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা বিভাগে থেকে কিউবার পক্ষে গুপ্তচরগিরি করেন।
২০০১ সালে তাকে আটক করার পর মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছিলেন, এনা কিউবার গোয়েন্দাদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের সব গোয়েন্দা কার্যক্রমের তথ্য ফাঁস করে দিতেন। অপর এক কর্মকর্তা বলেছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রের হাতে আটক গুপ্তচরদের মধ্যে এনা ছিলেন ‘সবচেয়ে ক্ষতিকর।’
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশের অধীনে কাউন্টার-ইন্টেলিজেন্সের প্রধান মিশেল ভ্যান ক্লিভ ২০১২ সালে মার্কিন কংগ্রেসকে বলেছিলেন যে, মন্টেস ‘আমরা কিউবা সম্পর্কে যা কিছু জানতাম এবং কীভাবে আমরা কিউবায় কাজ করি তার সবকিছুই ফাঁস করে দিয়েছিলেন এনা।’
‘এর ফলে কিউবানরা আমরা তাদের সম্পর্কে যা জানতাম তার সবকিছু সম্পর্কে ভালভাবে সচেতন ছিল এবং সুবিধাজনক অবস্থানে থাকত। উপরন্তু, এনা সহকর্মীদের সাথে তার কথোপকথনে কিউবা সম্পর্কে তাদের অনুমানগুলোকে প্রভাবিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন এবং অন্যান্য শক্তির কাছে অর্জিত তথ্য সরবরাহ করার সুযোগও পেয়েছিলেন।’
মার্কিন এ নারী গুপ্তচর কিউবার হয়ে গুপ্তচরগিরি শুরু করেন ১৯৮৪ সালের পর। তিনি মূলত তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যান এবং তার প্রশাসনের কার্যক্রম নিয়ে ক্ষুব্ধ ছিলেন। ওই সময় রোনাল্ড রিগ্যান লাতিন আমেরিকায় বিতর্কিত কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছিলেন। বিশেষ করে নিকারুগুয়ার সশস্ত্র দল নিকারুগুয়া কন্ট্রাসকে রিগ্যান সহায়তা করছিলেন। যা গুপ্তচর এনাকে রাগান্বিত করে তোলে। এনা শুধু ব্যক্তিগত স্বার্থের জন্য এই গুপ্তচরবৃত্তি করেননি বরং আদর্শের জন্যও করেছন।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি জানিয়েছে, এনার মার্কিন বিরোধী মনোভাব জানতে পেরে ১৯৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সহপাঠী তার সঙ্গে দেখা করেন। ওই সহপাঠী তাকে নিউইয়র্কে কিউবার গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেন। প্রথম বৈঠকে তিনি সম্মত হন ‘কিউবার মাধ্যমে নিকারুগুয়াকে সহায়তা করবেন।’
এর পরের বছর হাভানায় প্রশিক্ষণ শেষে মার্কিন গোয়েন্দা বিভাগে যোগ দেন এনা। তার কাজ ছিল কিউবায় যুক্তরাষ্ট্রের পরিচালিত কার্যক্রম বিশ্লেষণ করা। এতে করে বিভিন্ন গোপন খবর তার কাছে আসত।
সেগুলো কিউবার কাছে পৌঁছে দিতে ওয়াশিংটন ডিসিতে প্রতি সপ্তাহে অপর এক গোয়েন্দার সঙ্গে দেখা করতেন তিনি। এছাড়া প্যাগার ব্যবহার করে গোপন কোডের মাধ্যমে তথ্য পাচার করতেন। অন্যদিকে কিউবার কর্মকর্তারা রেডিও সিগন্যালের মাধ্যমে তার সঙ্গে যোগাযোগ করতেন। দীর্ঘ প্রায় দুই যুগ এ কাজ করেছেন তিনি।
তবে ২০০১ সালে অন্য মার্কিন গোয়েন্দারা জানতে পারেন, তাদেরই একজন কর্মকর্তা কিউবা বিষয়ক তথ্য ফাঁস করছেন। এরপর তদন্ত করে এনার খোঁজ পেয়ে তাকে আটক করেন তারা।
যুক্তরাষ্ট্রের আদালত এনাকে ২৫ বছরের কারাদণ্ড দেয়। তবে ২০ বছর সাজা ভোগের পরই মুক্তি দেওয়া হল তাকে।
এনা মন্তেস জেল থেকে মুক্ত হলেও তিনি আগামী পাঁচ বছর নজরদারিতে থাকবেন। যার মধ্যে থাকবে তার ইন্টারনেট ব্যবহারের বিষয়টিও। মূলত তিনি যেন আবার কোনো গোয়েন্দা কার্যক্রম না চালাতে পারেন তা নিশ্চিত করতেই তার ওপর নজরদারি চালানো হবে। তার সরকারের হয়ে কাজ করা বা অনুমতি ছাড়া বিদেশী এজেন্টদের সাথে যোগাযোগ করাও নিষিদ্ধ করা হবে।
তবে এনাকে গ্রেপ্তার করা এফবিআই কর্মকর্তাদের একজন পিট ল্যাপ বলেছেন, ‘এনার জীবনের সে পর্ব এখন শেষ। তিনি তাদের জন্য যা করার তা করে ফেলেছেন। নতুন করে আবারও গোয়েন্দাগিরি করে নিজের স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে ফেলবেন না তিনি।’