মুক্তমত

তোফায়েল আহমেদকে খোলা চিঠি

শাহ্ জে. চৌধুরী


প্রিয় তোফায়েল ভাই,
ভূগোল বইয়ে পড়েছিলাম, পৃথিবী ২৩ ঘন্টা ৫৬ মিনিট ৪ সেকেন্ডে একবার নিজ অক্ষে আবর্তন করে। কিন্তু ৩ মিনিট ৫৬ সেকেন্ডের ঘাটতিকে উহ্য রেখে আমরা বলে দিচ্ছি ২৪ ঘণ্টায় একদিন। আবার ৩ মিনিট ৫৬ সেকেন্ডের সে ঘাটতিকে পূরে দিতে চার বছর পরপর একটি পুরো দিন জুড়ে দিচ্ছি। এতে হিসেবের চুলচেরা বিশ্লেষণটি ঠিকঠাক থাকল। এসব বিষয় আমি অবশ্য অত বুঝিটুঝি না। আমার মাথায় কেবল আহ্নিক আর বার্ষিক গতির বিষয়টিই ঘুরপাক খায়- বস্তুত পৃথিবীর দিনরাতগুলো ওই গতির ওপর নির্ভর করেই নিজেদের অস্তিত্ব ঘোষণা করে- আসে রোদবৃষ্টিঝড়। আনে নানান দুর্যোগ। আবার সে দুর্যোগকে কাটিয়ে উঠবার পথটিও দেয় নির্মাণ করে। নির্মিত হয়ে গেলেই হয়ে ওঠে বিশেষ কিছু। আমরা তখন একে চিহ্নিত করি তারিখ দিয়ে, যেমন ১৯৬৬ সালের ৫ ও ৬ ফেব্রুয়ারি পাকিস্তানের লাহোরে পূর্ব পাকিস্তানের স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ৬ দফা দাবি উত্থাপন। কিংবা ২৪ জানুয়ারি- গণঅভ্যুত্থান দিবস, কিংবা ৭ মার্চ – ‘এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম’ ঘোষণা। এরপর… এরপর একটি দেশ নির্মাণ। আর এই নির্মাণে কেন্দ্রের মানুষটি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

‘বঙ্গবন্ধু’ আমাদের বাংলাদেশটার স্বপ্ন দেখেছিলেন। বাংলার মানুষকে মুক্ত করতেই নিজেকে উজার করেছিলেন। আর বঙ্গবন্ধুর ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধিটির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে আপনিই জড়িয়ে তোফায়েল ভাই!

১৯৬৯ সাল। ভীষণ উত্তাল সময়। বাংলাদেশ তখন পূর্ব পাকিস্তান। জাতির জনক শেখ মুজিবুর রহমান তখন শেখ মুজিব। তখনও তিনি বঙ্গবন্ধু নন। এখনকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের পরিচয় তখন রেসকোর্স ময়দান। ২৩ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ সেখানে শেখ মুজিবুর রহমানের সম্মানে একটি সন্মেলন আয়োজন করল। লক্ষ লক্ষ মানুষ এসে যুক্ত হলো সম্মেলনে। আর এই লক্ষ লক্ষ জনতার ভিড়ে শেখ মুজিবকে ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধি দিলেন আপনিই তোফায়েল ভাই। এরপর সেদিনের সভায় দেওয়া বক্তৃতায় বঙ্গবন্ধু ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের ১১ দফা দাবির পক্ষে তার পূর্ণ সমর্থন জানিয়েছিলেন।

আপনি নিজেই বলেছেন, ১৯৬৯ আপনার জীবনের শ্রেষ্ঠ কালপর্ব। আপনি বাংলার ছাত্রসমাজকে নিয়ে ২৪ জানুয়ারি গণঅভ্যুত্থান ঘটিয়ে আইয়ুব খানের লৌহ শাসনের ভিত কাঁপিয়ে দিয়ে ইতিহাস সৃষ্টি করেছিলেন। আপনি তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মৃত্তিকা বিজ্ঞানের ছাত্র। তোফায়েল ভাই, আমার বড় জানতে ইচ্ছা করে, রাজনৈতিক চেতনার মানুষ হয়েও আপনি মৃত্তিকা বিজ্ঞাপন নিয়ে কেন পড়েছিলেন? কেন চেয়েছিলেন মাটির সোঁদা গন্ধ শুঁকতে?

তোফায়েল ভাই আপনি নিজেও বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ। বাংলাদেশ নির্মাণে যে ক’জন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ ইতিহাসের একেকটি অধ্যায় হয়ে দোর্দণ্ডপ্রতাপে দাঁড়িয়ে রয়েছেন- আপনি তাঁদের অন্যতম একজন- আমার পরম শ্রদ্ধাজন। আমার সৌভাগ্য যে আপনার মতো একজন জীবন্ত কিংবদন্তী মানুষেরা কাছাকাছি হতে পেরেছি, আপনার স্পর্শ পেয়েছি, আপনাকে কাছ থেকে শ্রদ্ধা জানাতে পেরেছি। আজ ২২ অক্টোবর, আপনার জন্মদিন। জন্মদিনে আমার শ্রদ্ধা গ্রহণ করুন।

ইতি
আপনার স্নেহধন্য
শাহ্ জে. চৌধুরী।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension