আন্তর্জাতিকদক্ষিণ আমেরিকা

নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা নির্মূলে ল্যাটিন আমেরিকাজুড়ে বিক্ষোভ

নারীর বিরুদ্ধে সহিংসতা নির্মূলের জন্য জাতিসংঘ দিবসের অংশ হিসেবে শুক্রবার (২৫ নভেম্বর) আর্জেন্টিনার রাজধানী বুয়েনস আইরেস থেকে কলম্বিয়ার বোগাটা থেকে মেক্সিকোর রাজধানী মেক্সিকো সিটি পর্যন্ত ল্যাটিন আমেরিকাজুড়ে বিক্ষোভ হয়েছে। সহিংসতা প্রতিরোধের দাবিতে এই বিক্ষোভে লাখ লাখ নারী-পুরুষ অংশ নেয়। লেটেস্টলির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, অনেক শহরে পরিস্থিতি শান্ত রাখতে পুলিশও মোতায়েন করতে হয়েছে। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম ও বেসরকারি সংস্থার (এনজিও) তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ল্যাটিন আমেরিকা জুড়ে নারীর প্রতি সহিংসতা উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে।

জাতিসংঘ ২৫ নভেম্বরকে নারীর প্রতি সহিংসতা প্রতিরোধ দিবস হিসেবে ঘোষণা করেছে। এ দিবসের গুরুত্বের কারণে শুক্রবার ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়েছে।

জাতিসংঘের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ল্যাটিন আমেরিকার দেশগুলোর মধ্যে হন্ডুরাসে নারী হত্যার হার সবচেয়ে বেশি। তারপর এই তালিকায় রয়েছে ডমিনিকান রিপাবলিক, এল সালভাদর, বলিভিয়া ও ব্রাজিল।

জাতিসংঘের মধ্য ও দক্ষিণ আমেরিকা শাখার কর্মকর্তা জোসে ম্যানুয়েল সালাজার বলেন, ‘আমাদের অঞ্চলের নারী ও মেয়েরা সহিংসতার ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকবে এবং তাদের প্রাপ্য অধিকার ভোগ করবে। যদি সত্যিই আমরা এমন চাই, সেক্ষেত্রে আমাদের বর্তমান প্রচেষ্টায় কোনো কাজ হবে না, এর হার দ্বিগুণ করতে হবে।’

মেক্সিকান রাজনৈতিক নেতা ক্লডিয়া শেইনবাউম বর্তমানে দেশের অন্যতম জনপ্রিয় রাজনীতিবিদ। তিনি আগামী ২০২৪ সালের নির্বাচনে দেশের প্রেসিডেন্ট হতে পারেন বলে দেশটির অধিকাংশ রাজনীতি বিশ্লেষকের ধারণা। তিনি শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির মধ্য দিয়ে দিবসটি পালনের আহ্বান জানান।

গত বুধবার (২৩ নভেম্বর) এই আহ্বান জানান তিনি। তবে শুক্রবার রাজধানী মেক্সিকো সিটিসহ দেশটির ছোট ছোট অনেক শহরে শত শত মানুষ বিক্ষোভ করেছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বসানো হয় লাউড স্পিকার, সেখানে ধর্ষণের শিকার নারী এবং ধর্ষণ ও তারপর খুনের শিকার হওয়া নারী ও মেয়েদের আত্মীয়-স্বজনরা ন্যায়বিচারের দাবি জানান।

সরকারি তথ্য অনুযায়ী, মেক্সিকোতে প্রতিদিন ২০ জন নারীকে হত্যা করা হয়। কিন্তু সব হত্যা মামলা আদালতে পৌঁছায় না। যেসব ঘটনায় মামলা হয়, সেসবের বিচার হতে অনেক সময় লাগে এবং অনেক ক্ষেত্রেই বাদীপক্ষ ন্যায়বিচার পান না।

দেশটির বাসিন্দা লরেনা গুতেরেস তার ১২ বছরের মেয়েকে হত্যার বিচারের দাবিতে বিক্ষোভে নেমেছিলেন। তিনি জানান, দেশজুড়ে নারী ও মেয়েদের নিখোঁজ হয়ে যাওয়া এখনও অব্যাহত আছে। তারা আর চুপ করে বসে থাকতে পারেন না।

গত অক্টোবরে মেক্সিকোতে ৮০ জন নারী ও মেয়েকে হত্যা করা হয়েছে কারণ তারা নারী। মেক্সিকোর মোরেলস প্রদেশ থেকে বিক্ষোভে আসা জোসে অ্যাঞ্জেল ত্রেজো জানান, গত আগস্টে তার মেয়ে মেলানি ধর্ষণ ও হত্যার শিকার হয়েছেন। হত্যাকারী এখনও পলাতক রয়েছেন এবং তিনি আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করলে আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারা তার দিকে কোন মনোযোগ দিতে অস্বীকার করেন।

মেক্সিকোতে নির্যাতনের শিকার নারী ও তার পরিবারে সদস্যদের সরকারিভাবে আইনি সহায়তা দেওয়া হয়। কেন্দ্রীয় সরকারের একটি সংস্থা ফেডারেল ইন্সটিটিউট অফ পাবলিক ডিফেন্স (আইএফডিপি) এই সহায়তা প্রদান করে থাকে।

আইএফডিপির কর্মকর্তা গ্যাব্রিয়েলা কাস্টিল্লো জানান, নারী হত্যা ও নির্যাতন সংক্রান্ত অভিযোগগুলো খুবই বাজেভাবে তদন্ত করার যে অভিযোগ উঠেছে, তা সত্য এবং তিনি মনে করেন, এই অবস্থা থেকে তাদের বেরিয়ে আসা প্রয়োজন। আর এ জন্য প্রয়োজন সকলের সহযোগিতা ও সচেতনতা।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension