প্রধান খবরবাংলাদেশরাজনীতি

মারা গেছেন জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম

রূপসী বাংলা ঢাকা ডেস্ক রিপোর্ট: বরেণ্য রাজনীতিবিদ, আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, বর্তমান প্রেসিডিয়াম সদস্য ও জনপ্রশাসন মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম মারা গেছেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। ব্যাংককের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে কয়েক মাস চিকিৎসাধীন থাকার পর ৩ জানুয়ারি বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সময় রাত ১০টার দিকে তিনি মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৮ বছর।
১৯৭১ সালের অস্থায়ী সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলামের সন্তান সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। তাঁর মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। শোক প্রকাশ করেছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী ও আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
শোক বার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘সৈয়দ আশরাফের মৃত্যু বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক অপূরণীয় ক্ষতি। গণতন্ত্র, রাজনীতি ও সমাজ উন্নয়নে তাঁর অবদান মানুষ শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে।’ রাষ্ট্রপতি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত সৈয়দ আশরাফ একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগেই থাইল্যান্ডের বামরুনগ্রাদ হাসপাতালে ভর্তি হন। হাসপাতালে থেকেই তিনি কিশোরগঞ্জ-৩ নৌকার প্রার্থী হয়ে নির্বাচিত হয়েছিলেন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে নতুন সংসদ সদস্যদের শপথ অনুষ্ঠানে অনুপস্থিত ছিলেন সৈয়দ আশরাফ। পরে স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরী জানান, শপথের জন্য সময় চেয়ে আবেদন করেছেন এই সংসদ সদস্য। এর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে সৈয়দ আশরাফের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করা হল।
বাংলাদেশের রাজনীতি জগতে একটি আস্থাশীল নাম- সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। দেশের রাজনীতিতে অনেকে তাঁকে আদর্শ বলে মনে করতেন। ব্যক্তিগত জীবনে সৈয়দ আশরাফুল ব্রিটিশ ভারতীয় শীলা ঠাকুরের সঙ্গে বিয়ের বন্ধনে আবদ্ধ হন। শীলা লন্ডনে শিক্ষকতা করতেন। ২০১৭ সালের ২৩ অক্টোবর শীলা মৃত্যুবরণ করেন। রীমা ঠাকুর নামে তাদের একটি মেয়ে রয়েছে। তিনি লন্ডনের এইচএসবিসি ব্যাংকে চাকরি করেন। মূলত স্ত্রীর মৃত্যুর পর থেকে প্রায়ই অসুস্থ থাকতেন সৈয়দ আশরাফ। তিনি ফুসফুসের ক্যান্সারে ভুগছিলেন।
ওয়ান-ইলেভেনের প্রেক্ষাপটে আওয়ামী লীগের সঙ্কটের সময় ব্যাপক আলোচনায় আসেন সৈয়দ আশরাফ। হাল ধরেন শেখ হাসিনাবিহীন আওয়ামী লীগের। এসময় আব্দুল জলিল গ্রেফতার হলে সৈয়দ আশরাফ আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে ২০০৯ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন তিনি।
আওয়ামী লীগ সরকারের বর্তমান মেয়াদে ২০১৫ সালের ৯ জুলাই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁকে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রী থেকে অব্যাহতি দিয়ে দফতরবিহীন মন্ত্রী করেন। এর এক মাস এক সপ্তাহ পর ১৬ জুলাই প্রধানমন্ত্রী নিজের অধীনে রাখা জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেন।
২০০৮ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং ২০০৯ সালের জানুয়ারিতে মন্ত্রিসভা গঠিত হলে তিনি স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান। ২০১৪ সালের ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং পুনরায় স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পান।
সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম ১৯৫০ সালের ১ জানুয়ারি ময়মনসিংহে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের অস্থায়ী সরকারের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় চার নেতা সৈয়দ নজরুল ইসলামের সন্তান সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। সৈয়দ আশরাফ ৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে মুক্তি বাহিনীর একজন সদস্য ছিলেন। তিনি ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। বৃহত্তর ময়মনসিংহের ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় সহ-প্রচার সম্পাদক হিসেবে তিনি দায়িত্ব পালন করেন।
১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে অন্য তিন জাতীয় নেতার সাথে আশরাফুলের পিতা সৈয়দ নজরুল ইসলামকে হত্যা করা হয়েছিল। পিতার মৃত্যুর পর সৈয়দ আশরাফ যুক্তরাজ্যে চলে যান এবং লন্ডনের হ্যামলেট টাওয়ারে বসবাস শুরু করেন। লন্ডনে বসবাসকালে তিনি বাংলা কমিউনিটির বিভিন্ন কার্যক্রমে জড়িত ছিলেন। সেসময় তিনি লন্ডনের বাংলাদেশ যুব লীগের সদস্য ছিলেন। আশরাফুল ফেডারেশন অব বাংলাদেশি ইয়ুথ অর্গানাইজেশন (এফবিওয়াইইউ) এর শিক্ষা সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছিলেন।
১৯৯৬ সালে আশরাফুল দেশে ফিরে আসেন এবং জুন ১৯৯৬ সালের ৭ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত কিশোরগঞ্জ-১ আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। সেসময় বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন।
Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension