নির্বাচিত কলামবাংলাদেশমুক্তমত

এত রক্তের দাগ মুছবে কীভাবে?

রাজেকুজ্জামান রতন


গত কয়েক দিন যে ঝড় বয়ে গেল এখনো তার রেশ কাটেনি। এ কদিনে ভয়াবহতম দমনপীড়ন আর ছাত্র-জনতার অভূতপূর্ব জাগরণ প্রত্যক্ষ করেছে দেশের মানুষ। কত বেদনার চিত্র যে তৈরি হয়েছে এই আন্দোলনে তার ইয়ত্তা নেই। কিছু বিবরণ ছাপা হয়েছে পত্রিকায়। সকালে ব্যাটারিচালিত রিকশা নিয়ে বের হয়েছিলেন, বাবা ওবায়দুল ইসলাম। ছাত্ররা জমায়েত হয়েছে শনির আখড়া এলাকায়। পুলিশ ধাওয়া করেছে, ফলে সংঘর্ষ চলছে দেখে যাত্রী নামিয়ে কাজলা এলাকার অনাবিল হাসপাতালের সামনে যান তিনি। কিছুক্ষণ পর দুই ব্যক্তি এসে বলেন, এক কিশোরের গায়ে গুলি লেগেছে, হাসপাতালে নিতে হবে। ওবায়দুল গিয়ে দেখেন, সেই কিশোর আর কেউ নয়, তার ছেলে আমিনুল ইসলাম (আমিন)। বাবার জবানীতে, ‘কাছে গিয়া চাইয়্যা দেখি, এ তো আমারই ছেলে। ছেলেকে দেখে বাবাগো, সোনাগো বলে অজ্ঞানের মতো হয়ে যাই। পরে আরেক সিএনজি করে ছেলেকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়া যাই। পাঁচ মিনিট পরেই ডাক্তার জানায়, আমার ছেলে আর নাই। ‘আরেক বাবা, আবুল খায়ের, ছেলে কীভাবে মারা গেল, সে ঘটনার বর্ণনা দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন। ছেলে মারা যাওয়ার পর কোনো মামলাও করেননি। তিনি বলেন, ‘আমার তো কোনো শত্রু ছিল না। ছেলেকে কে, কীভাবে মারল, তাই তো জানি না। ছেলে হত্যার মামলা করব কার বিরুদ্ধে?’ আবুল খায়ের বলেন, ‘এখন যদি কেউ আমারে কোটি টাকাও দেয়, সেই টাকা দিয়া আমি কী করব? পৃথিবীতে সন্তান হলো সবচেয়ে বড় সম্পদ। আমার সেই সম্পদই তো চলে গেছে। কেউ তো তাকে আর ফেরত দিতে পারবে না।’

এ ধরনের শত শত বেদনাময় মৃত্যুতে কোটা সংস্কারের মতো নিরীহ আন্দোলন শেষ পর্যন্ত আর নিরীহ থাকেনি। ছাত্রদের ন্যায়সঙ্গত দাবিতে গড়ে ওঠা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দমন করতে কমপক্ষে ২১১ জনকে হত্যা, ৭ হাজারের বেশি আহত, ১০ হাজারের বেশি গ্রেপ্তার, আড়াই লাখের মতো অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করা হয়েছে। কারফিউ দিয়ে, সেনাবাহিনী নামিয়ে, বর্ডার গার্ড মোতায়েন করে, হাজার হাজার রাউন্ড গুলি বর্ষণ করে, সাউন্ড গ্রেনেড, রাবার বুলেট, টিয়ার গ্যাস ছুড়ে হামলা চালানো হয়েছে। আর মানুষের সাহস! হেলিকপ্টার থেকে সাউন্ড গ্রেনেড, গুলিবর্ষণ করা হচ্ছে, কিন্তু ছাত্র-জনতা পিছু হটছে না। এমনকি সুট অ্যাট সাইট ঘোষণা করতে হয়েছে। এ যেন নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা! ব্লক রেইড চালিয়ে রাতে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে ছাত্র পরিচয় পেলেই। অবস্থা দেখে যে কেউ ধারণা করতে পারেন যে, দেশের জনগণের ওপর বিদেশি দখলদার বাহিনী আক্রমণ ও অত্যাচার চালাচ্ছে!

আন্দোলনে সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ ছিল ব্যাপক। ঢাকার আদালত সূত্রে জানা গেছে, কোটা সংস্কার আন্দোলন পরবর্তী সময় মঙ্গলবার পর্যন্ত ঢাকায় ২৭৪টি মামলায় ২ হাজার ৮৯১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) এক হিসাব বলছে, গত সোমবার পর্যন্ত রাজধানীতে কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে ২৪৩টি মামলায় মোট ২ হাজার ৬৩০ জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ২৮৪ জনেরই কোনো রাজনৈতিক পরিচয় পাওয়া যায়নি, যা মোট গ্রেপ্তারের ৮৬ দশমিক ৮৪ শতাংশ। গ্রেপ্তারকৃতরা তো বটেই, যারা মৃত্যুবরণ করেছেন, তাদেরও বেশির ভাগই শিক্ষার্থী, শ্রমজীবী ও সাধারণ মানুষ। অজ্ঞাতনামা আসামি আর গ্রেপ্তার নিয়ে চলছে নানা বাণিজ্য। এমন কি সাবেক আইজিপি নুর মোহাম্মদ পর্যন্ত বলেছেন, বিভিন্ন সংকটের সময় গ্রেপ্তার বাণিজ্যের কথা শুনে এসেছি। আর এখন তো মহাসংকট। এ সময় কে, কখন, কাকে গ্রেপ্তার করল, সেটার যদি তদারকি না থাকে, তাহলে আসলেই সমস্যা। ‘এ ক্ষেত্রে ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে রংপুরে। বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় ফাহিম নামে এক কিশোরকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। জন্মসনদ অনুযায়ী তার বয়স ১৬ বছর ১০ মাস। গ্রেপ্তারের পর ১২ দিন ধরে রংপুর কারাগারে বন্দি ছিল। পুলিশ মামলায় তার বয়স উল্লেখ করেছে ১৯ বছর। ফাহিম রংপুর পুলিশ লাইনস স্কুল অ্যান্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির (বিজ্ঞান বিভাগ) ছাত্র। আবু সাঈদ যে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন, তা ভিডিও ফুটেজে স্পষ্ট। কিন্তু আসামি করা হলো ফাহিমকে, এ প্রশ্নের জবাব কী?

আন্দোলনকারী এবং সরকার উভয় পক্ষই বলেছেন কোটা সংস্কারের দাবি যুক্তিসঙ্গত। তার পরও সংঘাত অনিবার্য হয়ে উঠেছিল কেন, এই প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসবে বারবার। কোটা সংস্কারের এই যুক্তিসঙ্গত আন্দোলন ২০১৩ সাল থেকেই ছাত্ররা করে আসছিল। মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি শ্রদ্ধা সম্মান থাকা সত্ত্বেও তাদের নাতি-পুতিদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য ছিল না। দেশে শিক্ষিত বেকারের সংখ্যা ৪০ লাখের বেশি। প্রতি বছর শ্রমের বাজারে আসে ২২ লাখের মতো যুবশক্তি, কিন্তু কর্মসংস্থানের সুযোগ খুবই সীমিত। প্রায় ১০ লাখ কর্মপ্রত্যাশী চলে যাচ্ছে দেশের বাইরে প্রবাসী শ্রমিক হিসেবে। যে নারী ঘরের বাইরে পা ফেলতে ভয় পেত সেই নারীদের প্রায় ১১ লাখ কাজ করছে এখন মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে। জীবনের ঝুঁকি, সম্মানের ঝুঁকি, প্রতারিত হওয়ার আশঙ্কা কোনো কিছুই বিদেশে চলে যাওয়া রোধ করতে পারছে না বরং বিদেশে যাওয়ার প্রবণতা ও সংখ্যা বাড়ছে। ফলে একদিকে তীব্র বেকারত্ব অন্যদিকে মুক্তিযোদ্ধা কোটার ৮ শতাংশের বেশি পূরণ না হওয়ার কারণে কোটা সংস্কার এর দাবি যৌক্তিক বলে সবার কাছেই বিবেচিত হতে থাকে। বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের হামলা ও পুলিশি অত্যাচার সত্ত্বেও এই আন্দোলন ক্রমেই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। ২০১৮ সালে প্রবল ছাত্র আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সব ধরনের কোটা বাতিল করলে সমস্যা তো সমাধান হয়নি বরং নতুন জটিলতার বীজ বোপিত হয়েছিল। যা পরবর্তী সময় হাইকোর্টে রিট এবং আদেশের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হয়। ফলে ২০২৪ সালে আবার আন্দোলন গড়ে ওঠে। এ বছর জুলাইয়ের ১ থেকে ১৪ তারিখ পর্যন্ত আন্দোলন শান্তিপূর্ণভাবে চলতে থাকে এবং ক্রমাগত শক্তি অর্জন করে সারাদেশে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু ২ জনের বক্তব্যের পর পরিস্থিতি আর স্বাভাবিক থাকেনি। ছাত্রলীগ কর্মীরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে। শত শত শিক্ষার্থী আহত হয়, নারী শিক্ষার্থীদের ওপরও হামলা পরিচালনা করা হয় এবং আহত ও চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থীদের ওপরে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও আক্রমণ করে ছাত্রলীগ কর্মীরা। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়েও রাতের বেলা আন্দোলনরতদের ওপর হামলা হয়। এর বিরুদ্ধে সাধারণ ছাত্রদের প্রবল প্রতিরোধে একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয় ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরা। এরপর ১৬ জুলাই থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত পুলিশি আক্রমণের তীব্রতা ভয়াবহ রূপ লাভ করে।

রংপুরের রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরস্ত্র এবং বুক চিতিয়ে দাঁড়ানো সাঈদ পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার পর যেন আগুন জ¦লে উঠে ঢাকাসহ সারাদেশে। রাস্তায় আন্দোলনকারী, পথচারী, জানালা দিয়ে বাইরে তাকানো শিশু, বারান্দায় দাঁড়ানো মা, ছাদের ওপর বাবার কোলের শিশু এমনকি কার্নিশে থাকা শিশুও নিহত হয়েছে গুলিতে। এই আন্দোলনকে ষড়যন্ত্র বলে আখ্যায়িত করে আর সাঁড়াশি আক্রমণ পরিচালনা করেও ছাত্র-জনতাকে আন্দোলন থেকে সরানো যায়নি। পরবর্তী সময় সারা দেশে কারফিউ দিয়ে, সেনাবাহিনী নামিয়ে এবং ইন্টারনেট বন্ধ করে দিয়ে পরিস্থিতি সামাল দিতে চেষ্টা করেছে সরকার। ফলে নিভে গেছে কত সম্ভাবনাময় জীবনপ্রদীপ, পঙ্গু হয়ে গেছে হাজার হাজার মানুষ। মৃত্যুর শোক আর পঙ্গুত্বের বেদনার ভার কে নেবে?

একদিকে নির্বিচার গুলি চলেছে রাস্তায়, নিহত আর আহত মানুষের আহাজারিতে বাতাস ভারী হয়েছে, হাসপাতালগুলো উপচে পড়েছে; অন্যদিকে রামপুরা টিভি সেন্টারে আগুন, ডেটা সেন্টার ধ্বংস, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আগুন, মেট্রোরেলের স্টেশনে আগুন লাগানোর ঘটনা ঘটেছে। ইন্টারনেট সার্ভিস বন্ধ থাকায় ব্যাংক ব্যবস্থা বিপর্যস্ত হয়েছে, ইন্টারনেটভিত্তিক ব্যবসাবাণিজ্য ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কিন্তু অবাক বিষয় হলো, যে সব গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ধ্বংস হয়েছে সেগুলো রক্ষা করতে তেমন কোনো উদ্যোগ চোখে পড়েনি। আন্দোলনকারীদের গুলি চালাতে যত নিষ্ঠুরতা লক্ষ্য করা গেছে, সম্পদ রক্ষায় ততটাই যেন নির্লিপ্ততা প্রত্যক্ষ করেছে জনগণ।

এই সময়কালে আরেক জঘন্য ঘটনা প্রত্যক্ষ করেছে দেশবাসী। হাসপাতাল থেকে আহতদের গ্রেপ্তার, ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আটকে রাখা ও নির্যাতন করা, তাদের দিয়ে আন্দোলন প্রত্যাহারের ঘোষণা দিয়ে প্রেস কনফারেন্স করানো, তাদের খাওয়ানোর নামে মশকরা করা এবং ছবি প্রচারমাধ্যমে দিয়ে অপমান করা সবই করেছে রাষ্ট্রীয় এই সংস্থা। ডিবি অফিসে কাউকে আটকে রাখার আইনি বিধান নেই। অথচ ডিবি অফিসে অহরহ এই কাজ চলে আসছে। মানুষ তাহলে আস্থা রাখবে কী করে? সরকারি বক্তব্যকে মিথ্যাচার মনে করে প্রত্যাখ্যান করতে থাকলে তার পরিণতি ভালো হয় না কখনো। এতে সন্দেহ বাড়ে, গুজব ছড়ায় এবং সমাজে নানা বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। এ ক্ষেত্রে কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করা যায়, যেমন মৃতদের যে সংখ্যা সরকারিভাবে বলা হচ্ছে তা পত্রিকায় যে সংখ্যা প্রকাশিত হয়েছে তার সঙ্গে মিলছে না, কোনো মৃত্যুর সঙ্গেই পুলিশের গুলির কথা উল্লেখ না থাকা খুবই রহস্যময় ঘটনা। পুলিশের গুলিতে বুক ঝাঁজরা হয়ে নিহত সাঈদকে আন্দোলনকারীদের ইট-পাটকেলের আঘাতে মৃত্যু বলে রিপোর্ট দেওয়া হয়েছে। অথচ সাঈদের মরদেহের ময়নাতদন্ত করেছিলেন রংপুর মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক রাজিবুল ইসলাম। তিনি বলেছিলেন, আবু সাঈদের বুক ও পেট ছররা গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে গিয়েছিল।

ছাত্র গণ-আন্দোলনকে ষড়যন্ত্র বলে আখ্যা দিয়ে সমাধান হবে না। দুর্নীতি, লুটপাটের ভয়াবহ চিত্র দেখে ক্ষুব্ধ, নির্বাচনের নামে প্রহসন দেখে প্রতারিত ও দ্রব্যমূল্য এবং জনজীবনের সংকটে দিশেহারা মানুষের ক্ষোভকে বিবেচনায় না নেওয়াটা ভুল হবে। এত হত্যা, আহত, গ্রেপ্তার দেখে সমাজের সব স্তরের মানুষ শোকে ও ক্ষোভে রাস্তায় নেমে এসেছেন। কারা নামেনি প্রতিবাদে? বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, আইনজীবী, সংস্কৃতিকর্মী, অভিনয়শিল্পী, খেলোয়াড়, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন সবার দাবি এক মোহনায় মিশে গেছে। অর্থনীতিতে লুটপাট, রাজনীতিতে দমনপীড়ন, সংস্কৃতিতে অধঃপতন দেখে যারা হতাশ হয়েছিলেন, তারা আন্দোলনে সব স্তরের মানুষের এই অভূতপূর্ব অংশগ্রহণে আবার আশার আলো দেখছেন। প্রতিবাদের মন এখনো মরেনি। যে কোনো সমাজে প্রতিবাদী মানুষেরাই স্বেচ্ছাচার, স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে গণতন্ত্রের পতাকাবাহী হিসেবে বিবেচিত। আন্দোলনে যেসব দাবি উঠে এসেছে তা হলো, নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশন গঠন করে গুলিবর্ষণকারীদের চিহ্নিত করা, শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলার উসকানিদাতাদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যবস্থা। নিহত-আহতদের সঠিক তালিকা প্রণয়ন করে ক্ষতিপূরণ ও চিকিৎসার ব্যবস্থা। মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার, গ্রেপ্তার ও হয়রানি বন্ধ। সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দেওয়ার পরিবেশ তৈরি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করা। মনে রাখতে হবে, আন্দোলন থেমে যাওয়া মানে শেষ হয়ে যাওয়া নয়। যে সংকট আন্দোলনের জন্ম দিয়েছিল সেই সংকট দূর না হলে বিক্ষোভের আগুন আবার জ¦লে উঠতে সময় লাগবে না।

যেকোনো গণ-আন্দোলনের পর রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও জনগণের মানসিকতা আগের মতো থাকে না। কোটা সংস্কারের ছাত্র আন্দোলন এবং তা থেকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফলে যে গণ-আন্দোলন তৈরি হয়েছে, তার ফলে মানুষের মননজগৎ পাল্টে গেছে। কোটার বৈষম্য মূল ক্ষোভের কারণ হলেও দুর্নীতি, ক্ষমতাসীনদের নিপীড়ন ছাত্র-তরুণদের মধ্যে অপমানবোধ জাগিয়ে দিয়েছে, অধিকারের প্রশ্নে সচেতন করে তুলেছে এবং তাদের সাহস বাড়িয়ে দিয়েছে। একে উপেক্ষা বা অবজ্ঞা করা কোনো শাসকের পক্ষেই উচিত হবে না। ফলে মৃত্যুকে মিথ্যা দিয়ে না ঢেকে, রক্তের দাগ মুছে ফেলার চেষ্টা না করে, চোখের জলকে টাকার চেক দিয়ে আড়াল না করে, সত্যের দায় নেওয়া আর গণতন্ত্রে উত্তরণ ঘটানো এখন সময়ের দাবি।

লেখক: রাজনৈতিক সংগঠক ও কলাম লেখক

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension