প্রবাস

বিভেদ নয়, সমঝোতায় আসুন: জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন

রূপসী বাংলা প্রতিবেদন: নিউ ইয়র্কে বাংলা ভাষাভাষীদের অন্যতম আঞ্চলিক সংগঠন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের ভবন ক্রয়কে কেন্দ্র করে সম্প্রতি নির্বাচিত কমিটির মধ্যে বিভেদ লক্ষ্য করা গেছে। স্থানীয় বাঙালীদের কাছ থেকে জানা গেছে এ বিভেদ এখন কমিটিতে সীমাবদ্ধ নেই, পুরো জালালাবাদবাসীর মধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে। নিরবিচ্ছিন্নভাবে চলছে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ, হুমকি।

স্থানীয় গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও আলোচনা চলছে এস্টোরিয়ায় জালালাবাদ ভবন ক্রয়ের বিষয়টি নিয়ে।

জানা যায়, বিদায়ী কমিটির সভাপতি ময়নুল হক চৌধুরী হেলাল, সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী শেফাজ, কোষাধ্যক্ষ মইনুল ইসলামসহ তাদের কমিটি এস্টোরিয়ায় ভবনটি ক্রয় করেন।

তারা জানান বিশেষ কারণে তাদের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে ভবনটি তাদেরকে ক্রয় করতে হয়। কিন্তু এখন মূল সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়ে ইগো বা অহংকার। স্ব স্ব ক্ষেত্র থেকে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, কে পাবে জালালাবাদ ভবনের কৃতিত্ব? এ ধরনের প্রশ্নের ওপর ভিত্তি করেই বিভক্ত হয়ে যায় কমিটি। ফলে কমিটিতে সৃষ্টি হয় অচলাবস্থা। কিন্তু উপদেষ্টা পরিষদ সে সমস্যা সমাধানে কোনো ভুমুকা রাখতে এগিয়ে আসেন্ন নি বলে সংশ্লিষ্টরা অভিযোগ করেন। ফলশ্রুতিতে মেয়াদোত্তীর্ণ উপদেষ্টা পরিষদ গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে সিদ্ধান্ত দেন।

মেয়াদোত্তীর্ণ উপদেষ্টা পরিষদের সিদ্ধান্ত হওয়ার কারণে স্বাভাবিকভাবেই এটিকে গঠনতন্ত্রবিরোধী সিদ্ধান্ত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়।

নিউ ইয়র্কে কোনো সামাজিক সংগঠনের নামে ব্যাংকঋণ দেওয়া হয় না না। ব্যাংকঋণের মাধ্যমে কিনতে হলে সেটি ব্যক্তির নামে কিনতে হয়। যারা এস্টোরিয়ায় জালালাবাদের নতুন ভবন নিয়ে জলঘোলা করছেন, তারা এসব জেনেশুনেও করছেন।

বিষয়টি পরিষ্কার করেছেন এবং পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছেন সদস্য বিদায়ী সভাপতি ময়নুল হক চৌধুরী হেলাল। গত ২২ জানুয়ারি বিকেলে তিনিও আসেন নতুন ভবন দেখতে। এই সময় বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রব মিয়া, সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী, সিনিয়র সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন, কোষাধ্যক্ষ নওশেদ হোসেনসহ অনেকেই আসেন এবং তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন।

বাংলাদেশ সোসাইটির সভাপতি আব্দুর রব মিয়া বলেন, বিরোধে না গিয়ে সমঝোতার মধ্যে অনেক কিছুই করা সম্ভব। তিনি বর্তমান সভাপতিকে সমঝোতার পথে আসার আহ্বান জানান।
সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন সিদ্দিকী বলেন, কোনো নন-প্রোফিট সংগঠনের পক্ষে ভবন ক্রয় করা বা ব্যাংক থেকে ঋণ নেয়া যায় না। যে কারণে কোনো না কোনো পন্থা অবলম্বন করতে হয়। এক্ষেত্রেও তাই হয়েছে। তিনি জালালাবাদবাসীর জন্য সবাইকে সমঝোতার আহ্বান জানান।

বিদায়ী সভাপতি ময়নুল হক চৌধুরী হেলাল জানান, এই ভবনের মালিক জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন। কোষাধ্যক্ষ মইনুল ইসলাম নিজ উদ্যোগে একটি করপোরেশন করে ভবনটি ক্রয় করেন। এ ছাড়া তার কাছে অন্য কোনো উপায় ছিলো না। করপোরেশনের ভবন ক্রয় করলেও মইনুল ইসলাম ডিড করেছিলেন এটি জালালাবাদকে দেয়ার জন্য। সেই কাগজটিও তিনি সবার সমানে উপস্থাপন করেন। এখানে আমাদের স্বাক্ষর রয়েছে।

উপদেষ্টা পরিষদ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারাই পারতেন সমঝোতা করতে। কিন্তু তারা সমঝোতা না করে অসাংবিধানিকভাবে সিদ্ধান্ত দিয়েছেন। তারা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালনে ব্যর্থ হয়েছেন।

আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এই উপদেষ্টা পরিষদের এখন মেয়াদ নেই। বন্যার অর্থ নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেই হিসাবও বর্তমান কমিটিকে দেয়া হয়েছে। বন্যার প্রায় ৪৭ হাজার ডলার তোলা হয়েছে। এর মধ্যে আমি বাংলাদেশে গিয়ে বিভিন্ন এলাকায় ১ লাখ ২০ হাজার খরচ করে বাড়ি তৈরি করে দিয়েছি। সেখানে প্রায় ২০ হাজার ডলারের উপরে খরচ হয়েছে। বাকি অর্থ জালালাবাদের ফান্ডে দেয়া হয়েছে। তিনি সবার সামনে সকল কাগজপত্র উপস্থাপন করেন।

সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলামকে কারণ দর্শানো নোটিশের ব্যাপারে তিনি বলেন, এটি অবৈধ এবং অসাংবিধানিক। কারণ যে বিষয়ে নিয়ে কোনো সিদ্ধান্তই হয়নি এবং বিষয়টি এখনো চলমান সেখানে কারণ দর্শানো নোটিশ অবৈধ।

মইনুল ইসলাম বলেন, এই ভবন জালালাবাদবাসীর ভবন। এটা নিয়ে আমি আর বেশি কিছু বলতে চাই না। আমি সমস্ত কাগজপত্র তৈরি করে সাবেক সভাপতিকে দিয়েছি। সেগুলো তিনি সবার সামনে উপস্থাপন করেছেন।

সাবেক নির্বাচন কমিশনের সদস্য ফজলুর রহমান ভবন ক্রয়ের জন্য মইনুল ইসলামকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, গত ৩৮ বছর ধরে অনেকেই এসেছেন। বলেছেন, বারবার অর্থ তোলা হয়েছে, সেই অর্থ খরচ করা হয়েছে, কেউ ভবন ক্রয় করেননি। মইনুল ইসলাম যদি ভুল করে থাকেন, তাহলে সেটিকে বলা যায়, অনেস্ট মিস্টেক। তিনি পরিস্থিতির কারণে এটা করেছেন, বলছেন ভবন জালালাবাদবাসীর। জালালাবাদের নামে কীভাবে এই ভবন ক্রয় করা হবে? জালালাবাদের কী ক্রেডিট আছে? কে নেবে দায়িত্ব? মইনুল কী দায়িত্ব নিয়ে ভুল করেছেন?

তিনি আরো বলেন, উপদেষ্টারা তাদের দায়িত্ব পালন করেননি। তারা একপক্ষের হয়ে কাজ করেছেন। আগামীতে আবারো ট্রাস্টি হবার জন্য তারা এই কাজটি করেছেন। তাদের কাছ থেকে আমরা এটা আশা করিনি। তারা তাদের গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন। তাদের কাছে জালালাবাদবাসীর স্বপ্নের চেয়ে নিজেদের স্বার্থই বড় ছিল। ইয়ামিন রশিদ বলেন, গঠনতন্ত্র বাইবেল বা কোরআন না, এটির প্রতিটি জিনিস মানতে হবে। গঠনতন্ত্র করা হয় মানুষের স্বার্থে। মানুষের স্বার্থে গঠনতন্ত্র পরিবর্তনও করা যায়। এই নিয়ে নোংরা রাজনীতি না করে সবার সমঝোতায় আসা উচিত। যে কোনো মূল্যে আমরা ভবন চাই।

শরিফ লস্কর বলেন, কোনো নন প্রোফিট সংগঠনের নামে ব্যাংকঋণ দেয় না। তাই বিকল্প চিন্তা করা হয়েছে। ভুল মানুষ মাত্রই করতে পারে। সেই ভুল সমঝোতার মাধ্যমে সংশোধনও করা যায় না। কাদা ছোড়াছুড়ি না করে সমঝোতার মাধ্যমে এই সমস্যার সমাধান করা উচিত। এটি একটি লাভজনক ভবন। তাও এস্টোরিয়ার মতো জায়গায়। এটা নিয়ে রাজনীতি করার দরকার নেই।

এম করিম বলেন, আমরা যে কোন মূল্যে এই ভবন চাই। আরো কয়েকজন বক্তা সমঝোতার পক্ষে এবং ভবনের পক্ষে কথা বলেন।


অ্যালবাম


Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension