ভারত

বিলকিস বানু ধর্ষণ মামলা: গুজরাটের সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের মুক্তির সিদ্ধান্ত খারিজ

ভারতের বহুল আলোচিত বিলকিস বানু ধর্ষণ মামলায় বিরাট ধাক্কা খেল গুজরাট সরকার। গুজরাট দাঙ্গার সময় অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ বিলকিসকে ধর্ষণ এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের হত্যা মামলায় অভিযুক্তদের মুক্তির সিদ্ধান্ত দেওয়ার কোনো এখতিয়ার গুজরাট হাইকোর্টের নেই বলে সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিলেন। সুপ্রিম কোর্টের এ রায়ের ফলে মুক্তি পাওয়া ১১ অপরাধীকে আবার কারাগারে ফিরতে হবে। তাঁদেরকে আত্মসমর্পণের জন্য দুই সপ্তাহ সময় দেওয়া হয়েছে।

আজ সোমবার বিচারপতি বি ভি নাগরত্না ও বিচারপতি উজ্জ্বল ভূঁইয়ার বেঞ্চ জানান, অপরাধ সংঘটিত হয়েছিল গুজরাটে। অপরাধীরা সেই রাজ্যের কারাগারে বন্দী ছিলেন। কিন্তু মামলা হয়েছিল মহারাষ্ট্রে। অতএব মুক্তিদানের সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার কেবল মহারাষ্ট্রের আদালতের, গুজরাটের নয়। গুজরাট সরকারের কোনো এখতিয়ারই নেই।

বিচারপতি নাগরত্না ও বিচারপতি উজ্জ্বল ভূঁইয়া তাঁদের রায়ে জানান, ওই মুক্তিদানের বিরোধিতা করে বিলকিস বানু যে আবেদন জানিয়েছিলেন, তা যুক্তিযুক্ত বলেই গ্রহণযোগ্য। এ মামলার শুনানি সুপ্রিম কোর্টে চলবে।

সেই সঙ্গে বিচারপতিরা এ কথাও জানিয়েছেন, সাজা মওকুফ করতে সুপ্রিম কোর্টে আবেদনের সময় অনেক তথ্য গোপন করা হয়েছিল, জালিয়াতি করা হয়েছিল। তাই মুক্তিসংক্রান্ত বিষয়ে ২০২২ সালের ১৩ মে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া রায় বাতিলযোগ্য।

২০০২ সালে গুজরাট দাঙ্গার সময় ২১ বছরের গৃহবধূ বিলকিস বানু ধর্ষণের শিকার হন। তখন তিনি পাঁচ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিলেন। হামলাকারীদের হাতে তাঁর পরিবারের সাত সদস্যও নিহত হয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিল বিলকিসের তিন বছর বয়সী শিশুকন্যাও।

ওই ঘটনায় করা মামলা ‘ন্যায়বিচারের স্বার্থে’ গুজরাট থেকে মহারাষ্ট্র নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। মুম্বাইয়ের সিবিআই আদালত ওই অপরাধকে ‘বিরল থেকে বিরলতম’ আখ্যা দিয়েছিলেন। ২০০৮ সালে অপরাধীদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছিল।

২০২২ সালের ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবসের দিন গুজরাট সরকার সাজাপ্রাপ্ত ১১ অপরাধীকে মুক্তি দেয়। সেই সিদ্ধান্ত বিতর্কের ঝড় তোলে। বিতর্ক ওঠে বন্দী থাকাকালে বহুবার তাঁদের প্যারোলে মুক্তি পাওয়াকে কেন্দ্র করেও।

মুক্তির পর সাজাপ্রাপ্ত আসামিদের গলায় ফুলের মালা পরিয়ে বিজেপি নেতারা তাঁদের বরণ করেছিলেন। নেতাদের সভায় সাজাপ্রাপ্ত কাউকে কাউকে দেখাও যায়। তাঁদের পক্ষে বিজেপি নেতাদের কেউ কেউ ভালো ভালো মন্তব্যও করেছিলেন। এমন কথাও বলা হয়েছিল, তাঁরা ব্রাহ্মণ, ওই অপরাধ করতে পারেন না।

রাজ্য সরকারের দাবি ছিল, বন্দী অবস্থায় তাঁরা ভালো ব্যবহার করেছিলেন। বিলকিসের অভিযোগ, মুক্তির বিষয়টি তাঁকে জানানোও হয়নি। এরপর বিলকিস নিজেই সুপ্রিম কোর্টের দ্বারস্থ হন।

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension