বিশ্ব অর্থনীতির শ্লথগতি অসাম্য আরো বাড়াতে পারে: আইএমএফ প্রধানের উদ্বেগ
আগামী বছরগুলোয় বৈশ্বিক অর্থনীতি প্রবৃদ্ধি শ্লথ হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বিষয়টি উল্লেখ করে সংস্থাটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা সতর্ক করে বলেছেন, অর্থনীতির এ ধীরগতি বিশ্বব্যাপী আয়ের অসাম্য আরো বাড়িয়ে তুলতে পারে। এ পরিস্থিতি মোকাবেলায় দেশগুলোকে আর্থিক ও কর ব্যবস্থায় যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। খবর আনাদোলু।
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, শিগগিরই কয়েক দশকের মধ্যে মধ্যমেয়াদি সবচেয়ে শ্লথ প্রবৃদ্ধির মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বিশ্ব। এ সময় বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধির হার হতে পারে ৩ শতাংশের কিছু বেশি।
বৈশ্বিক অর্থনীতিতে বেশকিছু জটিলতা প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করছে বলে মত আইএমএফ প্রধানের। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে আন্তঃসম্পর্কিত জটিলতা। ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা উদাহরণ হিসেবে দেশগুলোর উচ্চ ঋণ, বিভাজন এবং ডিজিটাল ও সবুজ রূপান্তরে চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় উদ্ভূত জটিলতাকে তুলে ধরেন।
গত সপ্তাহের শেষ দিকে ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত হয়েছে জি২০ জোটের অর্থমন্ত্রীদের বৈঠক। সেখানে উপস্থিত ছিলেন দেশগুলোর কেন্দ্রীয় ব্যাংকের গভর্নররা। বৈঠকের শেষ দিনে এক বিবৃতিতে ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেন, ‘একটি নিম্ন প্রবৃদ্ধির বিশ্ব আরো বেশি অসম বিশ্ব হতে পারে।’
তিনি বলেন, ‘আমি একটি সাধারণ বার্তা নিয়ে জি২০-এ এসেছি। বিশ্ব অর্থনীতিকে অবশ্যই কম প্রবৃদ্ধিতে আটকে যাওয়া এড়াতে হবে। এমন পরিস্থিতি বিশ্বকে আরো অসম ও অস্থিতিশীলতার দিকে নিয়ে যাবে।’
এ সময় বৈশ্বিক অর্থনীতি শক্তিশালী করতে বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়ার আহ্বান জানান ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। এর মধ্যে রয়েছে সুদৃঢ় আর্থিক ও মুদ্রা নীতি, স্থিতিশীল ও অন্তর্ভুক্তিমূলক আর্থিক ব্যবস্থা ও হালনাগাদ কর ব্যবস্থা। এছাড়া তিনি শক্তিশালী প্রবৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে দুর্বল দেশগুলোর জন্য সহায়তার আহ্বান জানান।
আইএমএফের সাম্প্রতিক বিশ্লেষণ থেকে দেখা যাচ্ছে, চার বছর বা তার বেশি সময় ধরে অর্থনৈতিকভাবে স্থবির থাকলে দেশগুলোর মধ্যে আয়ের বৈষম্য প্রায় ২০ শতাংশ বেড়ে যায়।
সামগ্রিক পরিস্থিতিকে অর্থনৈতিক উদ্বেগের পাশাপাশি নৈতিক উদ্বেগ বলেও উল্লেখ করেন আইএমএফ প্রধান। তার মতে, বিশ্বজুড়ে প্রযুক্তি ও অর্থনীতিতে একটি অপ্রতিরোধ্য রূপান্তরের ধারা প্রবহমান। এ পরিস্থিতিতে আর্থিক অসাম্য ওই রূপান্তরে বাধা হয়ে দাঁড়াবে। অর্থনৈতিক অসন্তুষ্টির কারণে বিশ্বে অনেক অঞ্চল এ পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবে না।
করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার প্রক্রিয়ায় সাম্প্রতিক বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে উচ্চ মূল্যস্ফীতি ও সুদহারের দোলাচল। মূল্যস্ফীতি লক্ষ্যমাত্রার কাছাকাছি নামলেই বড় অর্থনীতিগুলো সুদহার কমানোর ঘোষণা দিয়েছে, যার লক্ষণ এরই মধ্যে কোনো কোনো দেশে দেখা গেছে। তবে এ বিষয়ে সুদূরপ্রসারী সিদ্ধান্তের পরামর্শ দেন ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলোর প্রতি তার পরামর্শ হলো পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি যদি এখনো সমস্যা হয়ে থাকে, তবে খুব তাড়াতাড়ি সুদহার কমানোর মতো সিদ্ধান্ত এড়ানো উচিত। আবার সুদহার কমানোর ক্ষেত্রে অযথা দীর্ঘ সময় নেয়ারও বিপক্ষে আইএমএফ প্রধান। কারণ এতে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড অপ্রয়োজনীয়ভাবে বাধাগ্রস্ত হতে পারে।
বর্তমানে আইএমএফের পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছর বৈশ্বিক অর্থনীতি ৩ দশমিক ২ শতাংশ সম্প্রসারণ হবে। ২০২৫ সালে এ হার হবে ৩ দশমিক ৩ শতাংশ।
জি২০ মন্ত্রীদের সাম্প্রতিক এ বৈঠকে অতিধনীদের সম্পদের ওপর কার্যকরভাবে করারোপে দেশগুলো ঐকমত্যে পৌঁছেছে। অবশ্য ব্রাজিলের প্রস্তাবিত ২ শতাংশ কর নিয়ে এখনো সংশয় রয়েছে। তবে এ ধরনের ঐকমত্যকে বড় ধরনের সুযোগ হিসেবে দেখছে আইএমএফ। ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভার মতে, অতিধনীদের ওপর কার্যকরভাবে করারোপ দেশগুলোয় নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টিকে প্রভাবিত করবে। এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী চলমান আর্থিক বৈষম্য দূরীকরণে পদক্ষেপটি ভূমিকা রাখতে পারে।
ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা আইএমএফের গবেষণা উল্লেখ করে জানান, অগ্রসর কর ব্যবস্থা অনেক দেশ ও ‘অস্থিতিশীল’ বিশ্বের আয়কারী শ্রেণীর মধ্যে বিদ্যমান বিস্তৃত ব্যবধান দূর করতে পারে। কেননা এর মাধ্যমে দেশগুলো সামাজিক উন্নয়নের জন্য যথেষ্ট তহবিল সংগ্রহ করতে পারবে।