প্রতিক্রিয়ামুক্তমত

রিয়া ছিল বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান

রীনা ঘোষ


কখনো ভাবিনি একটা ফুটফুটে ফুল এভাবে অকালে ঝরে যাবে। ভাবিনি সংবাদমাধ্যমে দেখা মৃত্যু মিছিলে আমাদের পরিবারের একটা ছোট্ট প্রাণও সামিল হয়ে যাবে এভাবে।

গত সোমবার ঠিক সকাল এগারোটায় একটা ফোন আসে বাংলাদেশ থেকে, তখন একজায়গায় বেরোবার তাড়ায় রিসিভ করিনি কলটা, পরক্ষণেই মনে হলো ওখানকার দুরাবস্থার কথা, ভেবেই বহুবার চেষ্টা করলাম যোগাযোগ করতে, কিন্তু পারিনি।

ও দেশে ইন্টারনেট পরিষেবা বন্ধ থাকায় যোগাযোগ করা যায়নি কোনোভাবেই।

গত বুধবার আমার হাসব্যান্ডের (সিদ্ধার্থ )ফোনে ছেঁড়া ছেঁড়া মেসেজ- “সব শেষ দাদাভাই”… “শুক্রবার গুলি লেগেছিল, মেয়ে আর নেই!”

আমরা সেই তখন থেকে কিছুতেই মেলাতে পারছি না ছয় বছরের বাচ্চার গুলি লাগল কিভাবে! যে কিনা বাড়ি থেকে বের হয় না, বিশেষ করে এই উত্তেজনার সময়।

তারপর গতকাল সারাদিনের উৎকণ্ঠার শেষে মধ্যরাতে ফোনকল করে যোগাযোগ সম্ভব হলো। জানা গেল, বাবার কোলে চেপে বিকেলে ঢাকা নারায়ণগঞ্জের নয়ামাটি এলাকায় চারতলা বাড়ির ছাদেই ছিল রিয়া। সেই অবস্থায় কোথা থেকে গুলি এসে লাগে তার মাথায়।

তারপর পাঁচদিনের লড়াই ঢাকা মেডিকেলের আইসিইউতে। বুধবার সকাল দশটায় না ফেরার দেশে চলে গেছে আমাদের বাচ্চাটা।

সম্ভবত ওদের বাড়ির কাছেই গুলশান সিনেমা এলাকায় তখন সংঘর্ষ চলছিল। সেটা ওদের জানা ছিল না।

আজ ‘এই সময়’পত্রিকার পাতায় খবর দেখে বুক ফেটে যাচ্ছে আমাদের। কি দোষ ছিল ছয় বছরের ছোট্ট রিয়ার? যে আন্দোলন, সংঘর্ষ, রাজনীতি, সংরক্ষণ কিচ্ছু বোঝেনা, তাকে কেন এসবের বলি হতে হলো? দায়টা কে নেবে?

রিয়ার বাবা সিদ্ধার্থর কাজিন। রিয়া ছিল বাবা মায়ের একমাত্র সন্তান। ওর মায়ের কথা ভাবলে কান্না পাচ্ছে খুব।

পশ্চিমবঙ্গ, ভারত থেকে

Show More

Related Articles

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Back to top button

Adblock Detected

Please, Deactivate The Adblock Extension